fiture

কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:

টানটান উত্তেজনা। জম্মু কাশ্মীর উপত্যকায়, দিল্লিতেও।
ঘুম উবে গেছে প্রতিবেশী পাকিস্তানের। অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে জম্মু কাশ্মীরের দিকে।
ভারতীয় সেনার সজাগদৃষ্টি। অনুমতি ছাড়া, সীমান্তে একটি পাতারও নড়াচড়া মানা।
গোটা উপত্যকা জুড়ে অতন্দ্রপ্রহরা ভারতীয় জওয়ানের। বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁরা।
করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।

এবারকার স্বাধীনতা দিবসে বদলে গেছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিবছর এ দিনটাতে গোটা বিশ্বাসের চোখ আটকে থাকে দিল্লির লালকেল্লার দিকে। এবার সেই আকর্ষণ কেড়ে নিয়েছে শ্রীনগরের লালচক।

স্বাধীনতার বয়স বাহাত্তর।
আর এবছরই প্রথম জম্মু কাশ্মীর উপত্যকা স্বাদ পেলো নিঃশর্ত, অনাবিল স্বাধীনতার। উপত্যকা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো ভারতের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে। ভূস্বর্গের আকাশে উড়লো শুধুই ভারতের তেরঙ্গা। সেই সঙ্গে বিপজ্জনক মাত্রায় বাড়িয়ে দিলো কংগ্রেসের রক্তচাপ। একই অবস্থা মোদি বিরোধী শিবিরের।
সেদিনও এরকমই রক্তচাপ বেড়ে গেছিলো মুজাহিদিনের মতো কাশ্মীরের জঙ্গি সংগঠনগুলোর। 1992 সালের ছাব্বিশ জানুয়ারি। জঙ্গি হুমকি। ভারতের পতাকা ওড়ানো চলবে না। গোটা চত্বরের দখল নিয়েছিল ভারতীয় জওয়ান। লালচক যেন রণাঙ্গন। তবু অনড় বিজেপি'র তৎকালীন সভাপতি মুরলীমনোহর জোশি। শ্রীনগরের লালচকে নরেন্দ্র মোদিকে সঙ্গে নিয়ে 'ভারত যাত্রা' শেষ করেছিলেন তিনি। সেদিনও লালচকের ঘণ্টাঘরে উড়েছিল তেরঙ্গা। মাত্র বারো মিনিটের মধ্যে শেষ করতে হয়েছিলো সেদিনের অনুষ্ঠান। গোটা উপত্যকা জুড়ে ওত পেতে বসেছিল বিপদ।

মাত্র বারো দিন আগের কথা। জম্মু কাশ্মীর উপত্যকায় উড়তো আরও এক পতাকা। সে পতাকা ছিলো জম্মু কাশ্মীর সরকারের নিজের। আজ জম্মু কাশ্মীরের অভিভাবক সরাসরি দিল্লি। এখন থেকে লালকেল্লাও যা, লালচকও তা। জম্মু কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ নীলাকাশ আজ শুধুই তেরঙ্গার। ধারা 370 বিলোপের পর, এতদিনে সম্পূর্ণ হলো মূল ভারত ভূখন্ডের সঙ্গে ভূস্বর্গ সংযুক্তিকরণের বৃত্ত।

এই বৃত্তরচনার সূচনা থেকেই ছটফট করছিলো সীমান্তপারের পাকিস্তান। যুদ্ধের হুমকি দিতেও পিছপা হয়নি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু কংগ্রেসের এতো তড়পানো কোন যুক্তিতে? ভারত, জম্মু কাশ্মীরের সংযুক্তিকরণ হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে মহারাজ হরি সিংয়ের নির্দিষ্ট শর্তমাফিক। আর সেই শর্তের মধ্যে ধারা 370 ছিলো না।

তবু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করে চলেছে কংগ্রেস। স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের আগেই দলের হেভিওয়েট নেতারা সুচতুর ভাবে গোটা ঘটনায় চড়িয়ে দিয়েছেন চড়া সাম্প্রদায়িক রং। এক "হিন্দু পাকিস্তান" তৈরির ফন্দি এঁটেছে মোদি সরকার। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময়ই মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। সেই ধারাবাহিকতা আজও বজায় রেখেছে কংগ্রেস।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে লালকেল্লা থেকে কারুর নাম না করে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় তো আপনারাও ছিলেন। ধারা 370, 35এ জম্মু কাশ্মীরের স্বার্থরক্ষায় যখন এতোই জরুরি ছিল, তাকে স্থায়ীর মর্যাদা দেননি কেন?

লালকেল্লা লালচকের আকাশে একই তেরঙ্গালালকেল্লা লালচকের আকাশে একই তেরঙ্গাধারা 370 তুলে দেওয়ার পরেই উপত্যকার জঙ্গিরা রাতারাতি উপত্যকা ছেড়ে পালিয়েছে, এমনটা কট্টর মোদি বিরোধী শিবিরের কেউ যে বিশ্বাস করে না, তা হলপ করে বলা যায়। ওদিকে বারেবারে দাবি তোলা হচ্ছে, উপত্যকা থেকে যাবতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার। কিন্তু এ মুহূর্তে ওই দাবিপূরণ হওয়ার ফল যে কত মারাত্মক হতে পারে, তা খুব ভালভাবেই জানে কংগ্রেস। কথায় আছে, জেগে ঘুমোলে ঘুম ভাঙানো যায় না। কংগ্রেসের অবস্থাও দাঁড়িয়েছে তাই।

2016 সালের আট জুলাই। সেনা সংঘর্ষে মারা গেছিল কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিনেতা বুরহান মুজফ্ফর ওয়ানি। অশান্ত হয়ে ওঠে জম্মু কাশ্মীর। ঘটনার খেসারত দিতে প্রাণ যায় কমপক্ষে ছিয়ানব্বই জন উপত্যকাবাসীর। ওই বছরই সংসদ ভবন হামলার খলনায়ক আফজল গুরুর প্রাণদণ্ডের আদেশের প্রতিবাদে খেপে ওঠে কানহাইয়া কুমারের মতো জঙ্গি ছাত্রনেতা। "ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে ইনশাল্লাহ" শ্লোগান তুলে, সে অস্থির করে তুলতে চেয়েছিল গোটা দেশ। এবারও যে সেরকম কোনও চেষ্টা হবে না, তার গ্যারান্টি দেবে কে?

অতীতের ওই রাষ্ট্রবিরোধী ঘটনাকেও কার্যত গুরুত্ব দিতে নারাজ মোদিবিরোধী শিবির। এখন তাদের হাতে নতুন অস্ত্র, জম্মু কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা হারানো। রাজনীতির ঘোলা জলে মাছ ধরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে কংগ্রেস। একই আশায় মোদি বিরোধী আরও একাধিক শিবির।
ওদিকে জম্মু কাশ্মীরে সাতাশ বছরের পুরনো সেই চ্যালেঞ্জ আজ ফিরে এসছে। মুখগুলো বদলেছে, বিরোধিতা বদলায়নি। বরং পাক, জঙ্গি হুমকির সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র বিরোধিতা মিলেমিশে, পরিস্থিতি আজ আরও ভয়ঙ্কর। তবে সেদিনও সব বিপদকে তুচ্ছ করেই, লালচকের ঘণ্টাঘরে উড়েছিলো পতাকা। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। দিল্লিতে তেরঙ্গা ওড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শ্রীনগরে তেরঙ্গা ওড়ালেন রাজ্যপাল সত্য পাল মলিক।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours