fiture
জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আত্মাকাংখ্যার আয়নায় নয়, বাস্তবতার আয়নায় যারা ৭২তম এবং ৭৩তম স্বাধীনতা দিবসের চালচিত্রকে যদি আর্থ-রাজনীতি এবং সামাজিক আয়নায় কেউ যদি বিচার করেন, তিনি মানবেনঃ
----  ভারত এখন মানুষকে  তার দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে দিকে ঠেলেছে কিংবা বলা যেতে পারে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার চুক্তিতে যা ফাকগুলি ছিলো, 
---    সেগুলির পুরন করার দায়কে আজকের প্রজন্মের মানুষকেই নিতে হবে। সে কতটুকু নিজের আত্মমর্য্যাদাকে সেই দায়বদ্ধতার উচ্চতায় উঠিয়ে আনতে পারবে, সেটা অন্য একটি সর্ত নির্ভর কিন্তু এ এক ইতিহাসের কাছে বিপুল দায়।  এই প্রজন্মের মানুষ সেটা মাথায় তুলে নেবেন কিনা, দায় তাদের। 
ইতিহাস এগুবে তার পথে। হয় মানুষ নিজেকে সূর্য্যমুখী এবং , ইতিহাসকে সঙ্গমের অভিমুখী করবে অথবা 
----  যারা ইতিহাসকে দাসত্বে ঠেলতে চাইছে তার অসংখ্য ছলা-কলায়, ২০১৯ উত্তর ভারত সম্পুর্ন আত্মসমর্পন করবে।

পরিনামটা যে পথেই আসুক না, যিনি জেতেন তিনিই তো সেকেন্দর।  তখন তো পরিনামের হিসেব নিকেশ করে
---   হয় উলটে যাওয়া পাষাকে মেনে নিয়ে, মহাকালের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, নয়তো, ফিরে আসার জন্য নতুনভাবে ঘুটি সাজাতে হয়।
নিশ্চিতভাবে বুঝে নিতে হবে, এখন আর মাঝামাঝি পথ খোলা নেই।
----  যদি বলা হয়, যে গনতান্ত্রিক অভিমুখকে উল্টোদিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেটাকে ফিরিয়ে আনার মতো গনতান্ত্রিক
কাঠামোগুলিকেই যেহেতু ভেংগে পরেছে,
------  সে কারণে  কাঠামোগত ভাবেই, পুনঃনির্মান না ঘটিয়ে, ইতিহাসকে কিছুতেই আবার সংসদীয় -্সাংনবিধানিক ব্যবস্থায় ফিরে আসা যাবে না। হয়তো একটা সংসদ চলতে থাকবে। সেখানে আলোচনা বা বিতর্ক বলতে যা বোঝায় তা থাকবে না
----    কেবল আইন পাশ হবে। অধিকাংশ আইন সংবিধানের অভিমুখের (directive principal) উলটো দিকে চলবে।অবশ্য এই উল্টো যাত্রাটাও, আই এম এফ এর হুকুমে মনমোহন সিং/নরসিমহা রাও জুটী শুরু করিয়েছিলেন।
------  এখন এই উল্টো যাত্রাটা ধীরে ধীরে, আইনি-বে-আইনী পথে, যেনন ৩৭০ এ করা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক করা হবে। 

লেখককে যদি এই পরিনতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কোন বিশ্ময় প্রকাশ করবেন না।বরং উলটো দিকে বলবো - স্বাধীনতার কালে যে বিষয়টা সাম্যবাদী আন্দোলন থেকে তোলা হয়েছিলো
----- পরিস্থিতি সেই মূল্যায়নের অনেকটাই  পুষ্ট করেছে।
------- লেখক যাকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মেনেছেন এবং যিনি জীবিতকালে, শ্রমিক আন্দোলনে ভীষ্ম পিতামহ নামে খ্যাত, সেই মানুষটি তখন ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টীর সাধারন সম্পাদক। রকপ্রান্তে তিনি নৌ-বিদ্রোহে একতার সুত্রধরের কাজ শেষ করে, তেলেংগানার সসস্ত্র কৃ্ষক বিদ্রোহের নেতা। যুগপদ বাংলায় কাকদ্বীপ বিদ্রোহ চলছে। 
------  ভাতৃঘাতি দাংগার মাঝখানে, চুক্তি করে স্বাধাঈনতাকে, 'ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়' বলে ঘোষিত হোল, সেকালের কমিউনিষ্ট পার্টীর পক্ষ থেকে। 
দল পরে ঠিক করলো, সেই শ্লোগান অতিশয় উক্তি। এই সুত্রেই বলে রাখি, অনেকে সর্দার বল্লভ বাই প্যাটেলকে, রাজার শাসনকে ভারতের অধিন আনার কারিগর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসলে কাশ্মীর ও  হায়দ্রাবাদ উভয়কেই (দক্ষীন ভারত) এবং গোয়ার ভারতভুক্তির মুল কারিগর  ছিলেন জওহরলাল নেহেরু। এই তিনটি যায়গাতেই, পুলিশ নয়, সামরিক অভিযান হয়েছিলো।
----   তেলেংগানা বা হায়দ্রাবাদকে জালে ফেলায় নিশ্চিতভাবে, কমিউনিষ্ট পার্টীর নেতৃ্ত্বে সসস্ত্র বিদ্রোহ বিপুল ভুমিকা পালন করেছিলো এবং সেই সুত্রেই সেই অতিশয়োক্তি ঘটে এবং কমরেড বি টি আর কে দীর্ঘকালের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়। 
প্রশ্ন উঠছে, অতিশয় উক্তিটি কোথায়? প্রথমতঃ চুক্তি করে স্বাধীনতা এলেও, নেহেরু যদি মিশ্র অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধকে চূর্ণ করার কথা বিবেচনা করতেন, তবে সোভিয়েত সাহায্য এবং ভারতীয় সাম্যবাদী আন্দোলনের সমর্থনে হয়তোবা সমাজতান্ত্রিক উত্তোরন সম্ভব হোতল। 
------   জওহরলাল নেহেরু তেলেংগানায় সৈন্য নামিয়ে যে 'গায়ের জোরে' বিদ্রোহ ভাংলেন, তার দশভাগ বলপ্রয়োগে যদি কংগ্রেস দলের 'রাম ও রাম রাজ্য  ভক্ত এবং সর্দার প্যাটেলের সামন্তিক ও চিন বিরোধী লবীকে ভেংগে দিতেন, তবে  আজকের দুর্গতি আসতো ।
-----   শান্তিতে উত্তোরনের লাইনই কংগ্রেস দল, নিজের এবং সমাজতন্ত্রের বারোটা বাজিয়ে, এখন ফ্যাসিবাদের  পথ উন্মুক্ত করেছে। জীবনের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, ভারত হয়তো একদিন 'চিনকেও' হারিয়ে দিতে পারতো, কিন্তু কংগ্রেসের ভেতরকার সামন্তিক পংগপালকে নিধন করতে পারতো না। 
----  এদের জন্য কংগ্রেস না থাকলে শ্রীমতি মমতা আছে, শ্রীমতি না থাকলে, বাবু চরন সিং অথবা শ্রীমতি আম্মা রয়েছেন। এক বিচিত্র জাতি এই সর্দার আর গোবিন্দ বল্লভ পন্থদের উত্তরসুরীরা।

যাইহোক, চুক্তি করে স্বাধীনতাকে যার চিনে হাজার বছরের পুঁজ রক্ত নিস্কাশনি বিপ্লব থেকে উচুতে রেখেছিলেন, এখন সেই বিশ্বাসঘাতকেরাই ফিস ফিস করে বলছেন - সেদিনের সেই মধ্যরাতে তো - বৃটিশ পতাকা যেমন নামানো হয় নাই , তেমনি ভারতীয় তেরাংগাও তো উঠে নাই । খালি ভাষন হয়েছিলো।
---- হয়তো তাই কিংবা নয়। এক প্রান্তে কোটি কোটি লোক এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে (দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যবসতঃ এই অধমো মাত্র ৮ বছর বয়সে  তখন এই জনশ্রোতে), পাঞ্জাবে তত নয়া হলেও বাংলা জ্বলছে। মহাত্মা বেলেঘাটা দাংগা বন্ধে কোলকাতায়। 
----   এই অবস্থায়, এসব পতাকা উঠানো কিংবা নামানোর বিষয় হয়তো ছিলো না।  আর লর্ড মাউন্ট ব্যাটন সামনে বসে । চুক্তি করা স্বাধীনতায় 'ইউনিয়ন জ্যাক নামবে কী করে?
মজার বিষয়, যারা দাংগা লাগালো। হাজার হাজার মুস্লিম বাড়ীর দখল নিলো গায়ের জোরে, যাদের জন্য ভারত দু' টুকরো
----- তারাই এখন বলছে, 'স্বাধীনতাটা এলো কোথায়?" 

আসলে দেশে হিন্দুত্বকে হিন্দুতে নামিয়ে আনা হয়ে থাকে ৩৭০ এবং তিন তালাকের জোরে (মজার, এখানে ফৌজদারী, অন্য ধর্মে দেওয়ানী), অন্যপ্রান্তে অন্যদের ঠেলে দিইয়ে
----  নিম্নবর্ণ, জংগল চ্যুত আদিবাসি এবং মহিলাদের, তার সাথে নিম্নমধ্যবিত্তদের নিয়ে যদি দাসত্বের এক গুদাম নির্মান করা হয়ে থাকে
-----  তবে পরম্পরার নিয়ম অনুযায়ী, দেশে মেয়েরা যে  ভোগ্যপন্ন  হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাবে ক্রমে  এবং
------ শেষ পর্য্যন্ত দেশের সংসদকে 'শুয়োরের খোয়ারে' (লেনিনের কথায়)  বদলে দিয়ে সংবিধান প্রত্যাহার করা হবে, রবীন্দ্রনাথের  বিরুদ্ধে বংকীম চন্দ্রকে লাগিয়ে দিয়ে 'জাতীয় সংগীত'কে বদলে দেওয়া হবে, জাতীয় পতাকাকে তুলে নিয়ে 'স্বস্তিকা' লাগানো হবে,
-----   সেসব কিছু নিশ্চিত, যদি উল্টো পাশার কাজটা, এদেশের বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলন শুরু না করতে পারে।
------   মধ্যম বর্গের একটা অংশ সাথে থাকতে পারে, কিন্তু উদারবাদ নিশ্চল এবং অ-প্রাসংগিক হয়ে যাওয়ায়, শ্রেনী হিসেবে যদি শ্রমিকদের ঘোরার ভূমিকায় না পাওয়া যায় তবে, এরা জড়ভরত।

THE LAST QUESTION, WOULD COME, FROM WHERE THE COUNTER REVOLUTION  BEGINS AND WITH WHOM
----এই প্রশ্নের উত্তরেই নির্ভর করবে সংস্কার বা উল্টো পাশা কোথা থেকে শুরু হবে? 
---- প্রথমে বুঝতে হবে, সেই যদিন নেহেরু-স্তালিন অর্থনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর হোল এবং আমিরিকার আশ্রিতার 'মর্য্যাদা'কে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিলো, প্রতিবিপ্লব সেদিন থেকেই শুরু হয়, কংগ্রেসের ভেতরে এবং  বাইরের  আর এস এস দের দ্বারা।
------ সেটাই ক্রমে মনমোহন/নরসিমহার হাত দরে
-----   শ্রীমোদির হিন্দুত্বের প্রত্যাঘাতে ইতিমধ্যে পাতলা হয়ে যাওয়া  অট্টালিকাটি ধ্বংস করে দিলো। 
ভেংগে পড়লো, দ্বিতীয় যুদ্ধের প্রগতির ধারা, সমাজতন্ত্রের অর্থনৈ্তিক অভিমুখ, নেহেরু- সাম্যের দ্বৈরথ এবং একতার প্রতিবিম্বগুলি।
-----  ৭২ বছরের রাজনৈ্তিক সংগ্রামের এক বিপদ জনক ঐতিহাসিক প[রিনতি। 
-----  অর্থনৈ্তিক এবং রাজনৈ্তিক পরাজয়টা ততটা বিপদজনক হতে পারতো না । বিপদ বেড়েছে, 
------  আদিভৌতিকবাদ বা Metaphysics বিপুল্ভাবে বলবান করে, দাসত্বের অবস্থানকে অনেকটা পাথরের মতো শক্ত করে ফেলা হয়েছে। 
তাই বুঝতে হবে, ধর্মান্ধতা বা আদিভৌতিকবাদ অথাবা Metaphysics 
ইত্যাদি এক একটি উপকরন কিংবা বিষয় হতে পারে
-----   বিষয়ীগত বা Objective এখানে, আদিবাসি-নিম্নবর্ণ- মহিলা-গরিব মুসলমান এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের ছলে বলে দাস বানিয়ে দেওয়া এবং  মেয়েদের ভোগ্য হিসেবে সামাজিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক করে দেওয়া।
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours