fiture
শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:


মোঘল আমলে ভারতবর্ষ  ছিলো দুনিয়ার এক-চতুর্থাংশ অর্থনীতির দেশ। যদিও সে সময়  মাত্র প্রায় ছয় শত লোকের নিকট কুক্ষিগত  ছিলো সে অর্থনীতি। ভারত বহু ভাষা ও বহু জাতির,বহু মানুষের দেশ। দেশটির মাটি জল জলবায়ু, ভুগোলেও রয়েছে  বৈচিত্র্য। ছোট বেলায় শুনেছি ভারত দেখলে নাকি দুনিয়ার অর্ধেক দেখা হয়ে যায়! কথাটা সত্য কি না জানি না। তবে আমি ভারতের ১৬/১৭টি প্রদেশ ঘুরেছি। মার্কীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, "পৃথিবী দু ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ তাজমহল দেখেছে আরেক ভাগ দেখেনি। আমি প্রথম ভাগের দলে।" পুরো  আমেরিকার যত নাগরিক সারা ভারতে সে পরিমান  রয়েছে মধ্যবিত্ত! এছাড়া  জনবহুল ভারতে রয়েছে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ। এবং কিছু ধনীক শ্রেনী। অনেক আগে থেকেই ব্যবসা কেন্দ্র ও বাজার  হিসেবে ভারতবর্ষও ছিলো "সোনে কা চিড়িয়া"!  এখনো তাই।  বাজার হিসেবে খুব ভালো হয়ে উঠেছে বলে, ভারতের সাথে আমেরিকা সহ পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলোর খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে উঠছে। 

১৭৫৭ সালে পলাশি যুদ্ধের মাধ্যমে বৃটিশদের সরাসরি ভারত শাসনের সুযোগ করে দেয় লর্ড ক্লাইভ।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন চলে ১শ বছর। তারপর ১৮৫৭-৫৮ সালে চলা সিপাহী বিদ্রোহের পর বৃটিশ রাজতন্ত্রের অধীনে চলে যায় ভারতবর্ষ। ভারত ভাগ হওয়ার সময়ের ভাইসরয়  ছিলেন, মাউন্ট ব্যাটেন। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, ৩১ ডিসেম্বর ১৬০০ সালে। প্রতিষ্ঠাতা জন ওয়াট ও জর্জ  হোয়াইট। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তাই জন কোম্পানিও বলা হতো। যদিও পরে কোম্পানিটি একটি জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানিতে রুপান্তরীত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর  কোম্পনির  বিলুপ্তি ঘটে ১৮৭৪ সালের ১ জুন। 
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সব ব্যবসার সাথে আফিমের কারবারও ছিলো অন্যতম। চায়নার   সাথে তো আফিমের ব্যবসার বাজার ধরতে দুবার যুদ্ধও করে বৃটিশরা। যা আফিম যুদ্ধ নামেই খ্যাত! 

প্রসঙ্গ  ১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। তবে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের কথা এলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও লর্ড ক্লাইভের নাম সামনে আসা অবধারিত। এছাড়াও ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ও ১৯০৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের কথাও চলে আসবে। সুভাস চন্দ্র বোস ও তার আজাদ হিন্দ ফৌজের কথাও আসবে। অারো অনেকের নাম আসবে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস।  বৃটিশদের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনও। যদিও কংগ্রেস ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত  ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস পালন করতো! পরে  ২৬ জানুয়ারি  প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয় ১৯৫০ সাল থেকে। সুভাসচন্দ্র বোস ও ভারতের স্বাধীনতা ঘোষনা করেছিলেন। সৌভিয়েত ইউনিয়ন সহ ১১ টি দেশও তাতে সায় দিয়ে ছিলো বলে জানা যায়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকে কোন কোন কমিউনিস্ট অস্বীকার করতে চেয়েছেন। এ শ্রেনীর শ্লোগান ছিলো, "লাখো ইনসান ভুক্ষা হ্যায় / ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়। ঠিক যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে এক শ্রেনীর কমিউনিস্ট বলেছিলো, "দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি"।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের নাগরিকেরা খুব কমই ভেবে থাকে। "দ্য অফনিউজ" এ ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে একটি লেখা, তৈরির আগে কি যেন মনে করে আমি বিভিন্ন পেশার কয়েজনের সাথে কথা বললাম, তারা অনেকেই ১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নয়৷ তা ছড়া কেউ কেউ খুব একটা জানেন না বলেও জানালেন। তবে একজন মুখস্ত বলা শুরু করেন; সরদার বল্লভ ভাই পাটেল, করম চাঁদ গান্ধী , সুভাস ( চন্দ্র) বোস , মোহাম্মদ আলী জিন্না, হোসেন শহীদ সোহারাওয়ার্দী সহ অনেকের বিষয়ে কথা বলেন। আমার মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ হয়ে যায় বলে, আর শোনা হয়নি। আমি বুঝতে পারিনি। তিনি এতক্ষন কথা বলবেন! তিনি হোয়াটস আপ অথবা মেসেঞ্জারে কথা বলেন না। 

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ৯০ বছর ধরে চললেও প্রথম ভারতীয় জাতীয়তাবদী আন্দোলন অবিভক্ত বাংলা থেকেই শুরু হয়। বৃটিশ রাজবন্দিদের তালিকা দেখলে সম্ভবত  বাঙালীর নামই আসবে বেশি । ১৯৪৭ কেবল ভারতবর্ষ ভাগ হয়নি, ভাগ হয়েছিলো বাংলা পাঞ্জাব ও পশতুন। বৃটিশ ভারতে মানচিত্রটা দেখলেই এই ভাঙ্গাভাঙ্গির সত্যতা মিলবে। আমি কোন কালেই ভালো আঁকিয়ে ছিলাম না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রটা আঁকতাম কিছু নম্বর পাওয়ার আশায়। এখন মানচিত্র দেখে ইতিহাসের খোড়াক খুঁজি ও পাঠ নিই। 

ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই বাংলাদেশীদের। থাকার কথাও না। আমার নিজেরও খুব একটা ছিলো না। এখন ইতিহাস পড়ি বলে ঘেটে দেখি। তবে যখন ভারতে থেকেছি। তখন  ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পুরোটাই দেখতাম টিভিতে। কিন্তু ভারতের কাশ্মীর ও আসাম নিয়ে এ দেশের "মুসলিম","মুসলিম বাঙালি" ও "বাঙালি মুসলিমদের" আগ্রহের কমতি নেই।  কেন এ আগ্রহ ঐতিহাসিক কারনে?  তাহলে ভালো হতো। মানবিক কারনে?  তাহলে আরো ভালো হতো। কিন্তু কাশ্মীর ও আসাম নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহ মানবিক ও ঐতিহাসিক কারনে নয়। কারনটা শ্রেফ সাম্প্রদায়িক। এ সত্যটা তিতা তবে কথাটা সত্য।  "মুসলিম"  "মুসলিম বাঙালি" ও "বাঙালি মুসলিম" শব্দগুলো এ জন্য বললাম; সারা বাংলাদেশ ঘুরে খুব কম লোকই পাওয়া যাবে যারা নিজেদের বাঙালি পরিচয় দিয়ে থাকে। বলার অপেক্ষা রাখে না ;আাদিবাসীরা বাংলাদেশী, বাঙালি নয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী ব্যাতিত নিজেদের এক বাক্যে বাঙালি পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হন। এতদ অঞ্চলে ওহাবিজমের প্রচার, প্রসারের ফলে মুসলিমরা সাধারণত নিজেদের বাঙালি পরিচয় দিতে চায় না! নিজেদের বাঙালি পরিচয় দিতে চায় না; এমন বাঙালির সংখ্যা দিন দিন সংক্রামক রোগীর মত বেড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ এ উপমহাদেশের অসংখ্য মানুষের দুঃখ দুর্দশা ডেকে আনে। দুটি সম্প্রদায়কে দুটি জাতি হিসেবে ঘোষনা করলেও। ২৫ বছর পর পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়। জন্ম নেয় বাংলাদেশ। দ্বিজাতিতত্ত্ব ভুল প্রমানিত হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্না তার মৃত্যুর আগে স্বীকার করেছিলেন, পাকিস্তান সৃষ্টি ছিলো মহাভুল ('ব্লান্ডার)"! এমনকি "স্যার " "আল্লামা" ইকবাল  যখন প্রথম প্রথম পাকিস্তান প্রস্তাব করেছিলেন, জিন্না তার কথাকে ''ইক শায়র কি খোয়াব '' বলে উড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। জিন্না এক সময় হতাশ হয়ে  রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে লন্ডন চলে যান। কিন্তু কংগ্রেস নেতারা, জিন্না ও মুসলিম  লীগ নিয়ে উপহাস শুরু করলে। লিয়াকত আলী খান, জিন্নাকে  ইংল্যান্ড থেকে আবার ভারতবর্ষে  ফিরিয়ে আনেন । এই সেই জিন্না, যিনি নিয়মিত  মদ খেতেন, শুয়োরের মাংস ছিলো তার প্রিয় খাবার। নামাজ পরার নিয়ম নীতি জানতেন না। নামাজে  রুকুতে যাওয়ার সময় বলতেন,  "হোয়াট নেক্সট্ "!  তিনি হয়ে উঠেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের, "বাবা এ কওম"। 

১৫ আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে সকল  ভারতবাসীর জন্য শুভ কামনা করছি। বিশেষে করে কামনা করছি ভারত থেকে দারিদ্র অশিক্ষা দুূর হোক। ভারতসহ দুনিয়ার  শ্রমজীবি মানুষের সুূদিন আসুক।

 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours