single mother
শামা আরজু, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

আমার ছেলে, ওকে আমি বাবু বলেই ডাকি। ও কখনো ছবি তুলত না। হঠাৎ কি মনে করে নিজের একটা ছবি তুললো। আমাকে দেখিয়ে বললো, মা,ছবিটা সুন্দর না?

হ্যাঁ।

ভেবেছি ফেসবুকে দিবো,কিন্তু দিবো না।

কেন রে!

উত্তরটা আমি জানি, তবু মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো।এখন বাবুর জবাবটা আসবে ভাবতেই হার্টবিট বেড়ে গেছে।

আমার ছবিটা দেখেই আপনি বলবেন,আমিনুল ইসলামের মতো লাগে।এটা ভাবতেই ভালো লাগে না।

আচ্ছা, খারাপ লাগার কী আছে! তুই কী আর ইচ্ছে করে তার(বাবুর জনক) মতো হয়েছিস!

সে তার জনক ছিলো।সে আমার সন্তানের বাবা ছিলো।দেখতে অবিকল জনকের মতোই  বাবু।অথচ বাবুর জন্ম নিয়েও   অবৈধ সন্তানের ইঙ্গিতবাহী সন্দেহের তোপ ছুঁড়েছিলো আমার দিকে।  আমার তখনকার স্বামী নামের দানব প্রভুটি। বাবুকে এসব বলিনি কখনও।এমনিতেই ও মহাক্ষ্যাপা তার ওপর।

বাবুর তখন  আট,বাবু তখন ক্লাস থ্রী।তার জনক নতুন সংসার গড়ার জন্য চুরি করে ঘরের সব জিনিশপত্র নিয়ে  চলে গেলো।

আমি হাসপাতালে,মেজো মা হবে।আমি আর ডলি আপা ছাড়া কেউ নেই।
ওরা স্কুলে। 
মেয়ে দুপুরে বাসায় খেতে এসেছে।তার সামনে দিয়েই নিয়ে গেলো সব।সব মানে সবই।পাপোশ, হারপিক,ব্রাশ, শাড়ি,ব্লাউজ, সায়া কোনটা নয়! হ্যাঁ, একটা রেখে গিয়েছিলো বটে! দুমড়ানো মোচড়ানো কলসি।তাতে লেখা ছিলো,
 "গলায় ঝুলিয়ে ডুবেই মর!"

কিন্ত  মরার উপায় ও যে নেই! আমার জন্য দুটি মানবশিশু রেখে গেছে।ওরা যে একা আমারই।ওদের রেখে মরি কী করে? 

কী করে মরি!

মাঝখানে অনেক কথা।

আচ্ছা দিস্ ছবিটা। আমি বলবো না কথাটা।

বাবু,মানে আমারই বাবু, কেবল আমার বাবু! আমার ছেলে ছবি দিলো।
আমি কমেন্ট করলাম-
তোকে একটুও তো আমিনুল ইসলামের  মতো লাগছে না!
বাবু লাভ ইমো দিলো।
আমার কান্নার ইমো দিতে ইচ্ছে করলেও, দিলাম না।

প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি থেকে এলে বাবুকে  জিজ্ঞেস করি-

হ্যাঁরে বাপ, তুই শিল্পীর(তার স্ত্রী)  বাবাকে কী বলে ডেকেছিস?

কিছুই  না।

ও মা! উনি তোকে এতো আদর করলেন,এটা কী ঠিক হোলো রে!
মা, আমি কী করবো!  আমি চেষ্টা  করেছি তো,আমার মুখ দিয়ে 'আব্বু' শব্দটা আসে না।অভ্যাস নাই তো!

বাবুর সেদিনের কথা যখনই মনে আসে, বুক  ভেঙ্গে কান্না পায়।ভুলতে পারি না।
বাবু ভুলতে পারেনা একটা দৃশ্য।
আমিনুল ইসলাম আমার হাত মোচড় দিয়ে উল্টিয়ে  আমার পিঠে দুমাদুম ঘুষি মেরেছিলো।
না,আমার গালে সেদিন সে প্রহার করেনি।ধর্মে বারণ আছে, সেজন্য নয়।সেদিন আমার মেয়ে আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে মার  খেয়েছিলো।তার ফর্সা গালে অাঙ্গুলের দাগ।

 শিল্পীর বাবাকে এখন বাবু আব্বু ডাকতে পারে।

চোখের জল আড়াল করে আমি এখন হাসতে পারি। অথচ একটা সময় এমন ছিল আমি হাসলে, হাসির জন্য মার খেতাম। কাঁদলে কান্নার জন্য মার খেতাম। এখন আমি স্বাধীনভাবে হাসতে ও পারি আবার কাঁদতেও পারি। এখন আমার হাসি কান্নার স্বাধীনতা আছে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours