kasmir
সুখময় ঘোষ, লেখক, শ্রীরামপুর:

দিল্লীর শাসকদল সংখ্যাগরিষ্ঠতার মদে মত্ত হয়ে আরও একবার স্বৈরাচারী  মনোভাবের পরিচয় দিলেন । পার্লামেন্টের দুকক্ষেই আলোচনা ছাড়াই পাশ হয়ে গেল সংবিধানের ৩৭০  অনুচ্ছেদ বিলোপের বিল, যেখানে উপেক্ষিত থেকে গেল কাশ্মীরের জনগনের মতামত । ৩৭০ অনুচ্ছেদে সংবিধানে  অন্তর্ভূক্তিই ছিল অস্থায়ী হিসাবে । ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরীরা ভারতবর্ষে অন্তর্ভূক্ত হতে চায়নি । কিন্তু শেখ আব্দুল্লাকে রাজী করিয়ে ৩৭০-এর  বিশেষ সুবিধা ও গণভোটের দাবীকে মান্যতা দেওয়া হয় । নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, ভীমরাও আম্বেদকর প্রত্যেকেরই সম্মতিতে এই  ধারা সংবিধানে সংযোজন হয় । যদিও বিজেপি মিথ্যাচারে প্রচার করছে বল্লভভাই প্যাটেল ও শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর স্বপ্ন এতদিন সফল হল । ৩৭০ অনুচ্ছেদ এক সময় বিলোপ হত কেননা  এই ধারা ছিল অস্থায়ী । কিন্তু প্রশ্ন হল, জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করা নিয়ে । প্রায় ৭০ বছর আগে ইতিহাসের তৎকালীন পটভূমিতে ৩৭০-এর সুবিধা দান কাশ্মীরীদের ইচ্ছাকেই  মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল । অথচ এখন কাশ্মীরীদের কোন মতামতকেই গ্রহন করা হয়নি । 
সেই  সময়কার কাশ্মিরের পরিস্থিতি আজকে পর্যালোচনা করা নির্বুদ্ধিতার  সামিল । আর বিজেপি বর্তমান নেতাদের স্বাধীনতার সময়কার অস্থির অবস্থা সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই । কেননা   তাঁদের পূর্বসূরীরা স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে কোনভাবেই যুক্ত ছিলেন না । তাঁদের ইতিহাস ভারতের স্বাধীনতার  সাথে বেইমানির ইতিহাস, যার পুরোধা ছিলেন দামোদর বিনায়ক সাভারকর । যিনি ইংরেজদের কাছে রাজসাক্ষী হয়ে বিপ্লবীদের ধরিয়ে দিয়ে  আন্দামান থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন ।
মিলিটারি বুট দিয়ে কণ্ঠরোধ  করে ‘বাক্‌ স্বাধীনতা’ কেড়ে নিয়ে এই  ধারা তুলে দেওয়া বর্তমানে মোদি সরকারের এক  ধরনের দ্বিচারিতা । ভারতের উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন  রাজ্য সংবিধানের ৩৭০ ধারার মত একই সুবিধা ভোগ করে সংবিধানের ৩৭১-এ এবং ৩৭১-জি  অনুচ্ছেদ অনুযায়ী । যদি ৩৭০ ধারা বিলোপ কাশ্মীরে উন্নতির চাবিকাঠি হয় তাহলে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে লাগু ৩৭১-এর ধারাগুলিও রদ করতে হবে । এই  রাজ্যগুলিতে কোন কর দিতে হয় না । মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলে থাকা জনজাতিদের জমির উপরে ও নীচে থাকা অরণ্য বা খনিজ সম্পদ-এর উপরে ব্যক্তিগত অধিকার স্বীকৃত । উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি যাতে ভারতভূক্তি মেনে নেয় তাই এইসব রাজ্যগুলিকেও ৩৭০ ধারার মত এই সুবিধা । ১৯৫১-এর ১৬  মে নাগাল্যান্ডের জনগণের নিজ উদ্যোগে যে গণভোট হয়েছিল তাতে বিচ্ছিন্নতার পক্ষে রায় ছিল ৯৯.৯% । ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষও উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যগুলিতে জমি ক্রয় করতে পারে না । কাশ্মীরের মতো মোদি সরকার এই বিশেষ সুবিধা কেন এই রাজ্যগুলি থেকে তুলে নেবে না ? এই রাজ্যগুলিতেও কেন্দ্রের বিশেষ  আর্থিক প্যাকেজ আছে । অথচ উন্নয়ন হয়নি । কাশ্মীরের মতো এখানে দুর্নীতির অতল গহ্বর । উন্নয়নের প্রশ্নে এই দ্বিচারিতা কেন মোদি সরকারের ? সহজ উত্তর – এখানে মুসলিম নেই, নেই পাকিস্তান বলে দেশটিও । উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে বিলোপ করলে ধর্মের সুড়সুড়ি দেশের জনগণকে দেওয়া যাবে না । ধর্মের আফিং-এ বুঁদ ভারতবাসীকে হিন্দুত্বের তাস দেখানো  অনেক সহজ । এখানে দেশে উন্নয়ন না হলেও চলবে, অর্থনীতি ধসে গেলেও কোন ক্ষতি হবে না । বেকারীত্ব চরম সীমায় গেলেও ভোট ব্যাঙ্ক অটুট থাকবে । সেই কারণে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ভুয়ো ভিডিও (ভারতীয় সেনার তরফে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কোন ভিডিও দেশবাসীকে দেখানো হয়নি) প্রচার করে মোদিজী সেনাবাহিনীকে নিজের বাহিনী বলে হিন্দু ভোটে থাবা বসিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন । আসলে মোদিজী দেশের কথা বলে যাযা করেন তা সবই দলের স্বার্থ ভেবে । বর্তমান দেশের অর্থনীতির করুণ অবস্থায় নরেন্দ্র মোদীর আর এক সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রয়োজন হয়ে পড়ছিল । ‘সফট টার্গেট’ কাশ্মীর ও পাকিস্তান । হিন্দু চেতনাকে জাগ্রত করতে এই দুইয়ের উপর হম্বিতম্বিই যথেষ্ট, যেটা পাকিস্তানেও সরকার বিপদে পড়লে করে । মোদিজী জানেন জনগণ সব দুঃখ ভুলে দু’হাত তুলে নৃত্য করবে এই মুসলিম সম্প্রদায় ও পাকিস্তানকে  জব্দ করার জন্য । বর্তমান অর্থনীতির করুণ দশায় মোদী মহিমায় আপ্লুত শিল্পপতিরা গলা চড়াচ্ছেন । জিডিপি হার নিম্নগামী । গাড়ি শিল্পে ছাঁটাই-এর স্রোত । অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে শিল্পপতিরা এক লক্ষ কোটি টাকার ত্রান প্রকল্প চাইছে । বেসরকারী লগ্নি হাওয়া । তাই সব বাঁচাতে মোদীজির গলায় এখন সবার উপর কাশ্মীর সত্য । সত্যি দুরাত্মার ছলের অভাব হয় না ।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours