fiture
সঞ্জয় সরকার, সাংবাদিক, বাঁকুড়াঃ

জীবনে পরীক্ষা অনেক দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন। ৭ আগস্ট বুধবার বিএড পরীক্ষা দিতে বিষ্ণুপুরের রাধানগর অঞ্চলের 'ভড়া ধনঞ্জয় দাস কাঠিয়া বাবা কলেজে' এসেছিলেন পুরুলিয়ার হুড়া থানার সারাহাকলটা গ্রামের মেয়ে বেলা রানি মাহাতো। ওই দিন ছিল তাঁর প্রথম পরীক্ষা। কিন্তু সেই পরীক্ষা দেওয়ার আগেই সফলভাবে উত্তীর্ণ হলেন মাতৃত্বর পরীক্ষায়। সন্তান সম্ভবা বেলাদেবী জন্ম দিলেন একটি পুত্র সন্তানের। যা দেখে খুশি তাঁর স্বামী থেকে ভড়া কলেজের অধ্যক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষা কর্মীরা। বাপের অনুমতি নিয়ে তাঁরাই শিশুটির নাম রাখলেন 'বিএড মাহাতো'। কলেজের এক শিক্ষা কর্মী সত্যজিৎ রায় বলেন 'বেলা রানি মাহাতো নামে ছাত্রীটি আমাদের কলেজে বিএড পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। পরীক্ষার আগেই তিনি মা হলেন। তাই শিশুটির জন্মদিনটা স্বার্থক করার জন্য আমরাই ওর নাম রাখলাম বিএড মাহাতো। এই নামে খুশি ওর মা বাবাও'। 
বিষ্ণুপুর পিয়ারডোবা বিএড কলেজের ছাত্রী বেলাদেবী। বিএড ফোর্থ সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে নির্দিষ্ট দিনের আগের দিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে চলে আসেন ভড়ায়। ছিলেন ভড়া কাঠিয়া বাবা আশ্রমে। পরের দিন সকালে তৈরি হয়েছিলেন পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাতে বাদ সাধল পেটের সন্তান। পৃথিবীর আলো দেখার জন্য তখনই তাঁকে নড়েচড়ে উঠতে হোল। মাতৃগর্ভে সন্তানের ছটফটানিতে মায়েরও গলদঘর্ম অবস্থা। প্রসব যন্ত্রণায় অস্থির মাকে ভড়া কলেজের অধ্যক্ষা ও শিক্ষা কর্মীরা সহ আশ্রমের সম্পাদক ব্যাবস্থা করে বেলার প্রথম সন্তানকে পৃথিবীতে আনার আয়োজন শুরু করলেন। তাঁকে ভরতি করা হোল রাধানগর প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে। কলেজের অধ্যক্ষা কাকলী ঘোষ সেনগুপ্তর আশা ছিল যন্ত্রণা কমে গেলে ছাত্রীটি হাসপাতালেই পরীক্ষা দেবেন। সেই মত অনুরোধ জানিয়ে হাসপাতাল সুপারকেও চিঠি লিখে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সুপার পালটা উত্তরে জানান, বেলার হাতে আর খুব বেশি সময় নেই। তাই শিক্ষাগত পরীক্ষার থেকে তাঁর কাছে এখন জীবনের পরীক্ষাটার মূল্য বেশি। হাসপাতাল সুপার নিতাই সরকার অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করলেন অধ্যক্ষার অনুরোধ। এর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই স্বাভাবিকভাবে মায়ের কোলে এলো ফুটফুটে বিএড মাহাতো। পরীক্ষা না দিতে পারলেও জীবনের বিএড কোলে আসায় খুশি মা বেলা রানি মাহাতো। তবে বাকি পরীক্ষাগুলি তিনি ছেলে কোলে নিয়ে হাসপাতালে বসেই দেবেন এমনটাই জানালেন। ছেলের নামের স্বার্থকতা তো রাখতেই হবে! বিএড মাহাতোর কথা ভেবে সাহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষও। 
কলেজের অধ্যক্ষা কাকলী ঘোষ সেনগুপ্ত জানালেন, বেলাদেবীর জন্য রাধানগর প্রাথমিক স্বাস্থ কেন্দ্রেই পরীক্ষার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শত হলেও বিএড মাহাতো যে ভড়া ধনঞ্জয় দাস কাঠিয়া বাবা কলেজের সঙ্গে জন্ম সূত্রে বাধা পড়ে গিয়েছে।
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours