স্বপন দাস, প্রবীণ সাংবাদিক, কলকাতা:
জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হল। সঙ্গে সঙ্গে কাশ্মীরে লাগু হল সারা দেশের সঙ্গে এক আইন। আলাদাভাবে সুবিধা ভোগ করার দিন ও শেষ হল । কাশ্মীরের সমস্ত দলগুলি নিজেদের অস্তিত্ব গেল গেল রব তুলেছে। সংসদে দাঁড়িয়ে গুলাম নবি আজাদ এটাকে অসংবিধানিক আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। ওমর আব্দুল্লা থেকে মেহবুবা মুফতি সবাই এই সিদ্ধান্তের সরব প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন যে খোদ কাশ্মীরে একটি বিশেষ ধর্মীয় সংখ্যা গুরু জাতিকে দ্বিতীয় শ্রেণির জাতিতে নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হল।এত কিছু বলা হচ্ছে একটাই কারণে, এতদিন ধরে চলে আসা একটা ধর্মীয় মেরুকরণ ভিত্তিক , বিশেষ কয়েকজন কায়েমী স্বার্থের রাজনীতির মানুষের মৌরসিপাট্টার দিনকে শেষ করল মোদি সরকার। এই মানুষগুলির অঙ্গুলিহেলনে এতদিন আবর্তিত হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। বিশ্বের দরবারে এই কাশ্মীর পরিচিত হয়েছে সন্ত্রাসবাদের আতুরঘর হিসাবে। এই কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনোত্তর ভারতে গত সত্তর বছর ধরে চলে আসা টেনশনের মুক্তি ঘটানোর একটা প্রচেষ্টা শুরু হল মাত্র।
এই সাহস আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে সাহস পায়নি। সেটাই দ্বিতীয় বারের জন্য ফিরে এসে করে দেখাল মোদি সরকার।
রাজনৈতিক হহল দ্বিধা বিভক্ত। বামেরা যেমন বিরোধিতার পথে হেঁটেছে। তেমনি হেঁটেছে কংগ্রেস। কিন্তু আপামর জনগন অতশত বোঝে না। তাদের কাছে এই সিদ্ধান্ত কিন্তু মোদি সরকারকে সাধুবাদ দিতে বাধ্য করেছে।
কেন এই সিদ্ধান্তের পথে হাঁটল সেটা একবার দেখার চেষ্টা করা হোক। গত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরের সার্বিক উন্নয়ন বলতে কিছুই নেই। অনেকে কাশ্মীরের ভূস্বর্গের তকমাকে পাল্টিয়ে বলেন মৃত্যুর উপত্যকা বলেন। একমাত্র পর্যটন ও সামান্য কুটির শিল্প হচ্ছে সমগ্র কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। সেটাও ভেঙ্গে পড়েছে রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসবাদী অস্থিরতায় একটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সমগ্র বাজেটের একটা বিশেষ অংশ সরিয়ে রাখতে হয় এই এলাকায় ক্রস বর্ডার টেররিজম জন্য। এখানেও একটা বাতাবরণ এমন এখন চালু আছে , যেখানে রাজনীতির কারণে ভারতকে শত্রু দেশ হিসাবে একটি অংশের মানুষ আজও মনে করে ভারতের যে কোন উদ্যোগকে এগোতে দেয় না। আলাদা আইন চালু থাকায় , ভারতের প্রযোজ্য প্রশাসনিক আইন এখানে লাগু করা যায় না। এই কারণে নিয়ন্ত্রিত হয় না বিশৃঙ্খলা । আবার এখানকার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি এই বিষয়টাকে নিয়ে সদর্থক ভুমিকাও সেই অর্থে দেখা যায় নি। যখনি কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে । তাঁর দায় এসে পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর। সারা বছর এই উপত্যকায় সেনাবাহিনীকে রেখে দিতে হয় বাধ্য হয়ে। আর বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে খরচ করতে হয় বিশাল অঙ্কের টাকা। ধর্মীয় মেরুকরণের ফায়দা তুলে জম্মু-কাশ্মীরে যে শাসন ব্যবস্থা কায়েম ছিল , পরোক্ষে সেটাও নিয়ন্ত্রিত হত বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতের ছোঁয়ায়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, এখানকার রাজনৈতিক দল্গুলির বেশ কিছু নেতা পরোক্ষে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সন্ত্রাসবাদকে জিইয়ে রেখে দিয়েছিল। এমনকি মদত দিত। সেই বিষয়ের অবসান হল।
অন্যদিকে সারাদেশে এক সংবিধান, এক আইন , এক দেশের যে বিষয়টা বি জে পি সরকার লাগু করতে উদ্যোগি হয়েছে সেটারো পথ চলা সেই অর্থে শুরু হল বলে করছেন শাসক দলের একাংশ।
অন্যদিকে, সমগ্র জম্মু ও কাশ্মীরকে তিনটি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করে একজন রাজ্যপাল ও দুজন উপ রাজ্যপাল নিয়োগ করতে চলেছে কেন্দ্র।এর থেকে পরিষ্কার যে কেন্দ্রীয় সরকার সমগ্র জম্মু কাশ্মীরের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে কায়েম করে যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আলাদা আলাদা ভাবে প্রশাসনিক নেতৃত্বের জন্ম দিতে চলেছে। যাঁদের হাত ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে নতুন সূর্যোদয় হবে।অন্যদিকে কয়েক বছর কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনে শাসন ব্যবস্থা থাকলে , এমন এক শাসন ব্যবস্থা চালু হবে , যেখানে সন্ত্রাসবাদিদের আঁতুড়ঘরে আঘাত হানতে সমর্থ হবে।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে , কাশ্মীরে সংবিধানের শাসন কায়েম করার লক্ষ্যে যে সাহসী পদক্ষেপ বি জে পি সরকার নিল। সেই পদক্ষেপকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মত ব্যবহার করবে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে বি জে পি বেশ কয়েক কদম এগিয়ে গেল অন্য দলের থেকে। সেটা আপ এর মত বিরোধী দলের এই পদক্ষেপকে সমর্থন করা থেকেই বোঝা গেছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours