মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:
গতকাল
থেকে অনেক কিছু মনে পড়ে গেল। ফেলে আসা আমার দিনগুলো। যা মনে করিয়ে দিল
কাশ্মীর নিয়ে আজকের প্রেক্ষাপট। 2011 সালে কাশ্মীরে ছিলাম ৬ মাস। দেখেছিলাম
কাশ্মীরের পন্ডিতদের প্রাণ বাঁচিয়ে ফেলে চলে যাওয়া শুন্য ঘর বাড়ি। কিছু
দখল হয়েছে কিছু পড়ে আছে হানাবাড়ি হয়ে। এক কাশ্মীরী পন্ডিত যাকে আমি স্যারজী
বলতাম তিনি একটা মন্দিরের মায়ায় শুন্য দেবালয়ে শিবলিঙ্গ আগলে পড়েছিলেন ।
তিনি আমায় বেটি বলতেন। বলতেন তু রাজকুরী হ্যায়। রাজকুরী মানে রাজকন্যা।
স্থানীয় এক স্কুলে পড়াতেন আর মন্দিরে দেবসেবা করতেন।কিছুটা কাশ্মীরী ভাষাও
বুঝতে বলতে শিখেছিলাম তাদের সাহায্যে।
সেবারই
দেখলাম ওখানে এক অন্যরকম ১৫ ই আগষ্ট। সব দোকান বন্ধ রাস্তায় মানুষ জন
নেই। এক শোকের পরিবেশ। শুধু লালচকে পতাকা তুলছেন মিলিটারীরা।১৪ আগষ্ট তাদের
আনন্দ।
স্যারজী বলতেন সব ভাইবোনেরা জম্মুতে
পালিয়েছিল অত্যাচারিত হয়ে।" পর হম নেহি যা সকে বিটিয়া। মন্দির ছোড় কে হম
নেহি যা পায়ে" স্যারজী বলতেন।খেলাতে পাকিস্তানের জেতার আনন্দে সবাইকে
উল্লসিত হতে দেখেছি।
তায়েবা নামে এক বাচ্চা মেয়ে তার মনেও বিষ ঢুকিয়ে দিয়েছিল তার পরিবার।সে আমায় বলত, আপলোগো কা মাতা গাই কো হমলোগ খাতে হ্যায় আউর
হমলোগ পাকিস্তানি হ্যায়। ফুটফুটে সুন্দর ওই বাচ্চাটার কথা শুনে খারাপ লাগত।ফুল টা কেন বিষাক্ত করল তার আব্বা আম্মি জানি না।
তবে সবাই খারাপ বা সবাই ভালো হয় না।তাই পেয়েছিলাম ফয়াজ ভাই, এজাজ ভাই, মকসুদা ভাবী রেহানা আর ফতিমা কে। ওরা আদর করে আমায় কুলসুম বলত।
এরা
খুব ভালোবাসতো আমায়। নুন চা আর বেকারির গরম রুটি আর গল্প।কাশ্মীরে
বেশীরভাগ মানুষ চায়ে নুন দিয়ে খায়।শুধু লোকজন এলে চিনির চা। জমে যেত সকাল
ওদের সাথে।
স্যারজীকে উগ্রবাদীদের হাত থেকে
বাঁচিয়েছিল এক মুসলিম পরিবার। মুন্না ভাই বলতাম তাকে। কিন্তু মুন্নাভাই কে
তাই বাকিরা দেখতে পারতনা।বেইমান বলত।
একসাথে স্যারজী
আর মুন্নাভাই সাথে আমি ওই মন্দিরে পুজো করেছি। পাশ দিয়ে বইছে সিন্ধু।ওরা
সিন্ধু বলত আমিও তাই বলতাম কি স্রোত তার। আর তার দু তীরে চারিদিকে ছড়ানো
ছেটানো কত হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন। তাদের মাঝে এদের দুজনকে অবাক হয়ে
দেখতাম।সবাই এমন হয় না কেন?
বাকিদের মনে ভারতের জন্য ঘৃণা একরাশ। সারাক্ষন বিষ নজর। সবাই মুন্নাভাই আর স্যারজী হলে বড় ভালো হত।
আজ সবাইকে মনে পড়ছে আবার। ফোন খারাপ হয়ে যেতে দুজনেরই ফোন নম্বর হারিয়েছি।
স্যারজী যেন তার ভাইবোন পরিবারকে আবার ফিরে পায়।মুন্নাভাইরাও ভালো থাকুক।আবার যদি যাই দেখা করব সবার সাথে।
উপত্যকার দুঃস্বপ্ন শেষ হোক আলো হোক সব। গুলির আওয়াজ আর রক্ত অনেক হোলি খেলা হল।সাঙ্গ হোক সব।
ভুস্বর্গ ভরে উঠুক আনন্দের কলতানে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours