ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ
মাড়ো গ্রামের দেড় কিঃমিঃ পশ্চিমে কোটা - চন্ডীপুর গ্রাম!গ্রামের প্রকৃত নাম চন্ডীপুর, এই গ্রামের গ্রাম্যদেবী মা চন্ডী তাই গ্রামের নাম চন্ডীপুর! এখানে ছুতোর পাড়ায় দিনরাত চিঁড়ে কোটার আওয়াজ হ'তো তাই গ্রামের নাম কোটা! বর্তমানে গ্রামের নাম কোটা - চন্ডীপুর!
গ্রামটি বৈষ্নব প্রধান !গ্রামে আজও বৈষ্নব আখড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও নিরব্চ্ছিন্ন নিরবতা মনকে এক অপার্থিব অনুভুতিতে উদাস করে দেয়!গ্রামের পুরাতন আখড়াটি প্রায় পাঁচ'শ বছরের প্রাচীন!ঠাকুর কিশোর এই আখড়ার আদি মোহান্ত! কথিত আছে, ওই আখড়াটি চব্বিশটি বৈষ্নব আখড়ার আদি আশ্রম হিসাবে গন্য হতো! অর্থাৎ এই আখড়াটি বৈষ্নব আচার, নিয়ম,শিক্ষা দীক্ষার কেন্দ্র ছিল!
ঐ আখড়ায় ঠাকুর কিশোর মহান্ত, কালো গোঁসাই,বৃন্দাবন গোঁসাই, গৌরীদাস মহান্ত সহ আরো অনেক বৈষ্নব ভক্তের সমাধি আছে!
ঠাকুর কিশোর মহান্তকে নিয়ে নানা কিংবদন্তী আজো লোকের মুখে মুখে ফেরে! জনশ্রুতি,নিকটবর্তী লবনধার গ্রামের এক মৃত শিশুকে অলৌকিক ক্ষমতাবলে বাঁচিয়ে তুলেছিলেন ঠাকুর কিশোর মহান্ত!
বাঁকুড়ার সোনামুখীর মনোহর দাস বাবাজীর শিষ্য বৈরাগী বাবার সমাধি রয়েছে তাঁতি পাড়ায়!
কোটা চন্ডীপুর গ্রামে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মভুমি! এই গ্রামের জমিদার মিত্র পরিবারে অনেক ঞ্জানী গুনী ব্যক্তি ছিলেন @ তাঁরা প্রজাবৎসল জমিদার ছিলেন ! তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় ও আর্থিক সহায়তায় বৈষ্নব আখড়াগুলি সুষ্ঠু ভাবে সেবাকার্য করতে পারত!আখড়াগুলির জন্য তাঁরা নিষ্কর জমিও দান করেছিলেন!
জমিদার পরিবারের সন্তান ললিত কিশোর মিত্র ছিলেন খ্যাত নামা আইনজীবি !এই গ্রামের দেবেন্দ্রনাথ সরকারের জেষ্ঠ পুত্র পাঁচকড়ি সরকার ছিলেন বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী! তিনি ছিলেন 'অনুশীলন সমিতির' সদস্য !'ভারত ছাড়ো ' আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরন করেন, কিছুদিন নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরূপে কাজ করেন! ভারত সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্বীকৃতি স্বরূপ ' তাম্রপত্র ' দিয়ে সন্মানিত করে!
প্রকৃতপক্ষে রঘুনাথ শিরোমনির বাড়ী ছিল কোটা চন্ডীপুর গ্রামে! কোটা গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে বহু পূর্বে একটি টোল ছিল! তার সন্নিকটে একটি প্রাচীন শিব মন্দির আছে! শিবলিঙ্গটির নাম 'বেড়ার শিব ' বা রামেশ্বর ' শিব! এই স্হানেই ছিল রঘুনাথ শিরোমনির জন্ম ভিটা !
এই গ্রামের উত্তর পুর্ব দিকে গ্রামেই বাইরে একটি শিব মন্দির আছে! শিব লিঙ্গটি ' দেউধড়েশ্বর ' শিব নামে পরিচিত! জনশ্রুতি, শিবলিঙ্গটি ছিল গ্রামের ছুতোর পাড়ায়, দিনরাত চিঁড়ে কোটার শব্দে বিরক্ত হয়ে, একরাতে শিবলিঙ্গটি গ্রামের বাইরে স্হানান্তর ঘটে! পরে জনৈক ব্যক্তি স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মন্দির নির্মান করেন ও একটি পুস্করিনী খনন করেন!
কিংবদন্তী, একরাতে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে এবং নির্মান করেছেন শিল্প -দেবতা স্বয়ং বিশ্বকর্মা ! মন্দিরটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ্য দিবালোকে তিনদিকে মন্দিরের কোন ছায়া পড়ে না!
গ্রাম্য দেবী চন্ডী মাতার বৎসরান্তে মহানবমীর দিন ধুমধাম সহকারে পুজা হয়! এই উৎসবে মাতে গ্রাম ছাড়াও পারশ্ববর্তী গ্রামগুলি!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours