মুসবা তিন্নি, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ: 

বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারিভাবে যে সকল কর্মকাণ্ড চলছে তা প্রখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত ছবি  ‘হীরক রাজার দেশে’র কাহিনীর সাথে অনেকটাই মিলে যায় । এ দেশের ক্ষেত্রে এখন কেবল ‘জোর যার মুলক তার’ এটাই বলা যায় । যার টাকা আছে তার সবই আছে , যার টাকা নেই তার জন্য সম্মান নিয়ে বেঁচে  থাকাও দায় হয়ে পড়েছে । এদেশের সাধারণ  মানুষের মগজ ধোলাই করাই এখন একমাত্র পন্থা। সরকারি বাজেটের হাল এবং তার বাস্তবায়ন এতোটাই করুণ যা সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত মহলকে। 
বাংলাদেশের বর্তমানে খুব আলোচিত র্য.প সিঙ্গার গাল্লি বয়ের রানা খ্যাত পরিচালক তাবিব মাহমুদ সম্প্রতি রিলিজ পাওয়া তার একটি র্যলপ গানের মধ্যে এ সমস্ত বিষয় তুলে ধরেছেন।
নিচে গানের লাইনগুলো দেয়া হলো .....

পাঁচ লাখ কোটি থেকে পাঁচশত কোটি দাও
তিনশত কোটি দিয়ে স্কুল গড়ে দাও,
দুইশত কোটি দিয়ে বানাও শপিং মল
এই রানা, এই রাজু চল স্কুলে চল।

টিউশন ফিস থেকে টিচারের মাইনে
সরকারের কাছ থেকে কোনোটাই চাইনে,
আবাসিক স্কুলে থাকবে পথশিশু
মার্কেটের আয় দিয়ে চলবে সবকিছু।

ঘাটতির এ বাজেটে টাকা যদি নাই পান
ছোটো করে বলি তবে এইটারো সমাধান,
বিলাসী পণ্যের ভ্যাট দিন বাড়িয়ে
হয়ে যাবে পাঁচশত কোটি টাকা ছাড়িয়ে।

মাথাপিছু আয় যদি এত শত ওত হয়
আমার ভাগের টাকা করল কি সঞ্চয়,
চাচ্ছিতো অধিকার, চাচ্ছিনা অনুদান
বাকী রানাদের তরে এইটাই সমাধান।
শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?
শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?

আমাদের বাজেটের আগা আছে মাথা নাই
যার আছে সব আছে যার নাই কিছু নাই,
প্রতিশ্রুতি তুমি পেত্নির ছলনা
দোষ দিবে কার তুমি, কেউ মোরা ভালো না।

সূর্যের ভয়ে চোখ লুকিয়েছো চশমায়
সূর্যটা ডুবে গেলে আমাদেরো ঘুমপায়,
আমাদের মায়েদের ঘুম পাড়ানীর গান
আমাদের কানে এসে জোরে জোরে ধমকায়।

কাশ্মীর গিলে খেলো শকুনের ধান্দা
ফেরাউন, নমরুদ কেউ নাই জিন্দা,
সবার উপর যদি মানুষ সত্য হয়
মানুষের মাঝে তবে যুদ্ধ কাম্য নয়।
কিছুদিন পর পর অতীতকে ভুলে যাই
তবু রানাদের হয়ে কিছু কথা বলে যাই,
পাঁচ লাখ কোটি যদি দেশের বাজেট হয়
পাঁচশত কোটি টাকা এমাউন্ট বেশী নয়।

শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?
শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?

কত রানা বস্তিতে চেয়ে আছে অপলক
তোমরাতো বেঁচে গেছো পেয়ে বাপ বড়লোক,
ফ্যামিলির হোটেলেতে পেট ভরে খাচ্ছো
ঢাকা থেকে আমেরিকা লন্ডন ঘুরছো।

লাভ নেই কোনো যদি পদ্মায় গাড়ি ছুটে
শিক্ষার আলো এই কপালেতে নাহি জুটে,
অন্ধের চোখ আছে ঐ থাকা থাকা নয়
আমরাও বেঁচে আছি এই বাঁচা বাঁচা নয়।
আদর্শে কালি ঢেলে ভুলে গেছি চেতনা
চুড়ি পরে বসে আছি তবু মাথা নত না,
ভুলে গেছি রেসকোর্স বন্ধুর সে ভাষণ
তলাফাটা ডিংগিতে তুলেছি সিংহাসন।

পড়ে গেছি খপ্পরে শুনছো কি ভেলকি
মেঠো পথে খুন হলো ভেঙে গেলো পালকি,
রাস্তায় বের হলে ভেতরটা চমকায়
এইভাবে বেঁচে থেকে আমাদের লাভ কী?

শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?

কে বলবে? কেউ আছে?
কে? কেউ নাই?

শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জ্বলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বলবে?
শিক্ষার আলো নাকি ঘরে ঘরে জলবে
আমাদের ঘর নাই সে কথা কে বোলবে?

নোট : এই বাংলাদেশ স্বাধীনতার জনক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কি তবে এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন? যেই বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষনের ডাকে  শত সহস্র মানুষ নিজেদের প্রাণ দিতে দ্বিধা করেনি তারা কি এমন বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য প্রাণ দিয়েছিলো? যুদ্ধ পরবর্তি সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একবার ভাষণ দিয়েছিলেন ,সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘তুমি যখন শাসন করবা তখন তোমাকে আদর করা জানতে হবে ,মনে রেখো শাসন করা তারই সাজে আদর করে যে’ ।
বর্তমানেও আদরের শাসন আছে তবে আদরটা কেবল টাকাওয়ালা ও সরকারিভাবে ছা-পোষাদের জন্য, আর শাসনের সর্বোচ্চ  প্রয়োগটা সাধারণ আর অতি সাধারণ জনগণের জন্য ।  
প্রিয় বঙ্গবন্ধু কন্যা , আপনার নিকট অনুরোধ আপনার পিতার সোনার বাংলা এভাবে ধংস করে নেবেন না । আপনার পুরো পরিবার হত্যার দায়ের প্রতিশোধ আপনি পুরো বাংলাদেশের মানুষকে শাস্তি দিয়ে নেবেন না।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours