শামা আরজু, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:
লম্বা জার্নি।
ইচ্ছে
করলেই যেমন সব করা হয়না তেমনি ইচ্ছের বাইরেও কিছু করতে হয় কখনও কখনও।তাই
করি। প্রচন্ড মাথা আর সমস্ত শরীর ব্যথা নিয়ে রাত প্রায় একটায় নামলাম বাস
থেকে।বাকি পথটা পায়ে হাঁটার।সাপ নয়,জানোয়ারও নয় কোনো। কেবল আশরাফুল
মাখলুকাতের ভয় ইদানীং আমার পায়ে পায়ে।বললে এসে সংগে যাবার মতো ছিলো কেউ।
বলিনা।কেন জানি বলতেও ইচ্ছে করছেনা ।অহেতুক জুতার শব্দ বড় করে জানান দিই
সাহসের।
গন্তব্য আটকায় না।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই পোষা কুকুর এগিয়ে এলো।আমার সামনে ঘুরঘুর করে,লাফায়।কোলে উঠতে চায়।কতো রং ঢং তার!
অন্ধকারে
তালা খুলে অভ্যাসের হাত বাড়িয়ে বাতি জ্বালাই পানির তৃষ্ঞা। জগে পানি
নেই।ওমা! কলসীও খালি।মোটর ছেড়ে ট্যাপের পানি জগে নিয়ে জগের মুখেই গলা ভেজাই
। কাপড় বদলে খুব দ্রুত হাতমুখ ধুয়ে ওষুধ খেয়েই বিছানা নিই।
আজকাল মশারীও খুলিনা ।শলা দিয়ে বিছানা ঝেড়ে উঠানো মশারী নামিয়েই ঘুম।আমারর মেয়েটার জন্মদিনও মনে থাকেনা আর।
ঘুম
ভাঙলেও বিছানায় কে বা কারা যেন চুম্বক সেঁটে দিয়েছে। কিন্তু না উঠে উপায়
নেই।ভেজা বিছানায় শীতেের মধ্যে কতো আর শুয়ে থাকা!রাতে কান্না করার সময়ও
পাইনি।অনিয়মের রাজত্বে চোখের জল কি তার গতিপথ পাল্টালো!
ভাববার সময় নেই।অফিসে দৌড়াতে হবে।দু'নম্বরীতে সহযোগিতা করিনি বলে বস আমার পাছা খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ।
যেন জীবনের জন্য চাকুরী নয়,চাকুরীর জন্যই জীবন।
তামাশা !
বারোটার দিকে নিম্নচাপ বাড়ায় মনে পড়লো ঘুমুতে যাবার আগে গতরাতে জলবিয়োগের কাজটাই করিনি আমি।বিছানা ভেজার রহস্যটা মনে পড়লো।
যখন তখন হাসা যায়,কান্না করা যায়না।
মেয়েটি, তুমি মন খারাপ কোরোনা।আয়নায় দাঁড়িয়ে হাত ধুয়ে নেবার সময় নিজেকে নিজেই সান্ত্বনা দিই।
তবু
মেয়েটির খুব মন খারাপ হয়।চারপাশের যা অবস্থা তাতে করে মন খারাপটা এড়িয়ে
যাওয়া সম্ভব না।এইতো মাত্রই খবর পেলাম, পাশের গ্রামের যে মেয়েটি ধর্ষণের
শিকার হয়ে গতকাল মানববন্ধন করলো প্রেসক্লাবের সামনে,ঠিক ঐ রাতেই তার
স্বামীকে এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। লোকটি হাসপাতালে ভর্তি। ইচ্ছে করে যাই সাহসে
কুলায় না।
ইচ্ছে আর সাহসের দূরত্বটা অনেক বেড়ে গেছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours