Old temple
ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ নদী , উপনদী বা শাখা নদীর উৎস সম্পর্কে আমাদের ধারনা , পাহাড় বা পর্বতের ঝর্না বা জলস্রোতকেই বুঝি! কিন্তু এই বাংলায় এমন অনেক নদী আছে যার উৎস কোন পর্বত বা পাহাড় নয় , সমতল ভুমিতেই এই নদী গুলির উৎসস্হল! এমনই একটি নদী ' খড়ি ', বর্তামান পূর্ব বর্ধমান জেলার মানকরের নিকটস্হ মাড়ো গ্রাম থেকে নির্গত হয়ে বুদবুদ - গলসী থানা হয়ে বর্ধমান থানার কুড়মুন, মন্তেশ্বর থানার দেনুড় হয়ে কাটোয়া থানার শ্রীবাটী সিঙ্গি অতিক্রম করে পুর্বস্হলীর নিমদহ মধ্য দিয়ে নাদনঘাট পার হয়ে সমুদ্রগড়ে ভাগীরথীতে মিশেছে! খড়ি নদীর দৈর্ঘ্য এক'শ কুড়ি কিঃমিঃ! নদীটির বিশেষ বৈশিষ্ঠ উৎসমুখ ও মোহনা একই সরলরেখায় অবস্হিত! মন্তেশ্বর, পাতুন, আড়া, নাদনঘাট , সমুদ্রগড় প্রভৃতি প্রাচীন গ্রামগুলি এই নদীতীরেই গড়ে উঠেছে! খড়ি নদীকে কেন্দ্র করে নানা কিংবদন্তী প্রচলিত, প্রবাদ আছে,মাড়ো গ্রামের এক নিঃসন্তান পূজারী ব্রাক্ষ্মন কালাচাঁদ গোঁসাই ছিলেন শক্তির পূজারী! তিনি নাওয়া খাওয়া ভুলে একমনে তাঁর আরাধ্যা দেবীর পূজা করতেন! দিনরাত ধর্মকর্ম নিয়ে থাকতেন! কয়েক বছর ধরে অনাবৃষ্টির কারনে খাদ্যের আকাল দেখা দিল!,পুকুর গুলি শুখিয়ে গেল, মানুষের পানীয় জলেরও আকাল দেখা দিল! এই অবস্হায় গ্রামের লোক গোঁসাই - এর শরনাপন্ন হ'ল, বিব্রত বোধ করলেন কালাচাঁদ! যেন তিনিই এ অবস্হা থেকে গ্রামকে রক্ষা করতে পারবেন! গ্রামের বাইরে বরুন দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে 'মুনুই'( পরমান্ন নিবেদন) দেওয়া হ'ল! কালাচাঁদ কাতর কন্ঠে আরাধ্যা দেবীকে ডাকলেন! কালাচাঁদ স্বপ্নে ইষ্টদেবীর দেখা পেলেন!পরের দিন বাড়ীর নিকট মাঠে এক সুদর্শনা একাদশ দ্বাদশ বর্ষীয়া বালিকার দর্শন পেলেন!মেয়েটি জানাল সে অনাথ তার নাম ' খড়ি '! ব্রাক্ষ্মন তাকে তার বাড়ীতে থাকার অনূরোধ করলে , বলিকা শর্ত দেয়,তাকে কখনো উচ্ছষ্ট ভক্ষন করানো যাবে না! কিছুদিন পর ব্রাক্ষ্মনী তার প্রতি খারাপ ব্যবহার করলে সে ক্রোধান্বিত হয়ে ব্রাক্ষ্মনকে সব জানালে , কালাচাঁদের চেষ্টায় সে যাত্রায় সব স্বাভাবিক হয়! বালিকা পূর্ন যৌবনা যুবতীতে পরিনত হ'লে ব্রাক্ষ্মনী স্বামীর প্রতি সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খড়িকে প্রত্যহ উচ্ছিষ্ট দান ও অপমান করতে শুরু করে! খড়ি উচ্ছিষ্ট না খেয়ে আস্তাকুড়ে পুঁতে দিত! কিন্তু অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় একদিন ক্রোধান্বিত হয়ে খড়ি মা মন্দিরে মা আদ্যাশক্তির হাতের খড়গ দিয়ে নিজের জিহ্বা ছেদন করে বলেন, " দেখ আমি কে?" ব্রাক্ষ্মন ব্রাক্ষ্মনী সব বুঝতে পেরে গলবস্ত্র হয়ে ক্ষমা চেয়ে দেবীকে পুনরায় ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ করলে,খড়ি দেবা পলায়নে উদ্যত হ'ন! ব্রাক্ষ্মন দেবীর পশ্চাৎধাবন করেন! কালাচাঁদ মা মা..বলে চিৎকার করে দেবীকে ধরার চেষ্টা করেন মাও তত ছুটতে থাকেন! একটা জায়গায়( উৎস থেকে তিনি কিঃ মিঃ দুরে)কালাচাঁদ তাঁকে প্রায় ধরে ফেলার উপক্রম হলে দেবী ঝাঁপ ( মালক)দিয়ে পালান! এখানে খড়ির গতিপথ হারিয়ে মাঠের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত! এই মাঠটিকে লোকে মালক তলার মাঠ বলে! খড়ির গতিপথ খুব আঁকাবাঁকা! মনে হয় কেউ আঁকা বাঁকা ভাবে ছুটে গেছে আর নদীর গতিপথ তৈরী হয়েছে!
পিতা পুত্রীর দৌড়ের পর বর্তমান নাদাই ব্রিজের সন্নিকটে হাতিপোঁতা গ্রামে ভাগীরথীতে খড়ি ঝাঁপ দিলে কান্নায় ভেঙে পড়ে কালাচাঁদ! হঠাৎ দৈব বানী শুনতে পেলেন " কালাচাঁদ তোমার সেবায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি! মন্দিরে গিয়ে পুজা করলেই আমি তোমার কাছেই থাকবো! তোমার স্ত্রীকে বলবে, ঘরের ঈশান কোনে হাঁড়িতে সোনার হার আছে নিতে, আর আস্তাকুড়ে যা পাবে তুমি নেবে!আর দেশে গিয়ে প্রচার করো মানুষের বেশে সংসারে লাখো দেবদেবী আছে তাদের সেবা করলেই প্রকৃত দেব সেবা করা হবে! বাড়ী ব্রক্ষ্মন আস্তাকুড় খুঁড়ে পেলেন মোহর ও চাঁদি আর লোভী ব্রাক্ষ্মনী হাঁড়িে হাত ঢোকতেই সর্প দংশনে মার গেল! আজও কাঁকসা থেকে মানকর যাওয়ার রাস্তার ধারে মাড়ো গ্রামের উত্তর পূর্ব দিকে খড়ি নদীর উৎপত্তিস্হলে খড়ি মায়ের প্রস্তর নির্মিত মূর্তি নিত্য পূজিতা হ'ন!
তিনি এখানে খড়্গেশ্বরী বা খন্ডেশ্বরী নামে খ্যাতা! দেবতা বিরোধী কালাপাহাড়ের খড়্গের আঘাতে দেবীর শিলা মূর্তিটি তিনটি খন্ডে খন্ডিত হওয়ায় তিনি খন্ডেশ্বরী নামে খ্যাতা হয়েছেন! প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে এখানে দেবীর বাৎসরিক উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে! উৎসবে মাতে মাড়ো সহ পাশ্ববর্তী গ্রামগুলি! ( চলবে)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours