মণিজিঞ্জির সান্যাল, লেখিকা, শিলিগুড়ি:
হৃদয় দিয়েই হৃদয় চেনো।
স্নেহ -মমতা - অনুভূতি - বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ -প্রশংসা-অনুপ্রেরণা ......
শুধু
মাত্র দুটো নারী-পুরুষের মধ্যে নয় ; আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই । আমরা
প্রত্যেকেই একটু চেষ্টা করলে জীবনের রংটাকে একটু পাল্টাতে পারি।
এক-ই
পরিবারের মানুষের মধ্যে ভালোবাসাই পারে সম্পর্কের এই বন্ধনকে সুন্দর করে
বাঁচিয়ে রাখতে। শুধু বাঁচার জন্যে জীবন নয় । জীবন আমাদের কাছে অনেক অনেক
তাৎপর্যপূর্ণ।
একটা
সম্পর্ককে সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যায় তা যে সম্পর্ক-ই হোক না কেন কিন্তু ধরে
রাখা যায় না কি তাকে যত্নে -আদরে- ভালোবাসায়-স্নেহে ? একটু সহযোগিতা-একটু
সুন্দর ব্যবহার- পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস-সম্মান -শ্রদ্ধাই পারে এই জীবনকে
সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে চলতে ।
ফিকে হয়ে যাওয়া সম্পর্ককে আবার নতুন করে রং লাগাতে ; আবার নতুন করে -নতুন ছন্দে জীবনকে ভরে তুলতে.....
পজিটিভ
মানে ইতিবাচক ভাবনা । পজিটিভ মানুষের সান্নিধ্যে বা পজিটিভ জীবন ধারায়
আমরা কিন্তু খুব সহজেই আমাদের প্রতিটি দিনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
আর
সম্পর্কের টানাপোড়েন আসতেই পারে কিন্তু তাকে বেশিদিন জিইয়ে রাখা ঠিক নয় ।
তার মূল সূত্রটি খুঁজে বের করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি । অনেক সময় সামান্য কারণে
মান বা অভিমান হতেই পারে । প্রতিদিনের জীবনে সামান্য মান -অভিমান
ভালোবাসাকে এক নতুন রং দেয় বৈকি কিন্তু অভিমান শব্দটি খুব-ই হাস্যকর হয়ে
ওঠে যখন ভালোবাসা নামক বস্তুটি হারিয়ে যায় জীবন থেকে ।
একবার ভেবে দেখেছেন কি আপধার আপনার কাছের মানুষটি সত্যিই কি আপনার অভিমান বুঝতে পেরেছেন বা সেই অভিমানের গুরুত্ব দিচ্ছেন ?
কিছু
দিন আগে পর্যন্ত যে মানুষটি আপনার অভিমান ভাঙাবার জন্য মুখিয়ে থাকত ; সেই
মানুষটিই পরোবর্তীতে আপনার সব কথাকেই সিরিয়াসলি গ্রহণ করতে শুরু করলো
কারণ সে সেই সম্পর্কটা থেকে বেরনোর জন্যে মানসিক ভাবে এতোটাই প্রস্তুত যে
কিছুতেই আপনার কোনো কথাকে মজা করে বা সহজ ভাবে নিতে আর আগ্রহী নন।
এইভাবেই একটা সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় কিভাবে কখন যেন । ডিভোর্স বলুন বা
বন্ধুত্ব-ই বলুন একপেশে সম্পর্ক কোনোদিন-ই দীর্ঘস্থায়ী হয় না ।
আসলে কিছু মানুষ আছেন যারা খুব-ই অস্থির চিত্ত। কোনো একটা সম্পর্ক-কে
ধরে রাখার জন্যে যে মানুষিক দৃঢ়তা প্রয়োজন তা তাঁর থাকে না । সম্পর্ক
তৈরিতে যে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রথমে ; তারপর ধীরে ধীরে সম্পর্কের গভীরে
প্রবেশ করার পর , সেই সম্পর্কের প্রতি অদ্ভুত এক অনীহা সৃষ্টি হয়
পরোবর্তীতে । তারপর হঠাৎ করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছোতে বিন্দুমাত্র
কালবিলম্ব করেন না । এরপর শুরু হয় কিছু সাজানো কথা, একের পর এক অভিনয়,
মিথ্যের কারসাজি ইত্যাদি । অন্য দিকে উল্টো দিকের মানুষ টির মানসিক
অবস্থার কথা একবারও ভাবেন না ।
এই চিত্তচাঞ্চল্য মানুষের কথা আরো বেশি করে জানা যায় এই ফেসবুকের বন্ধুদের মাধ্যমে । অনেকেই কিন্তু এখন অবসাদের শিকার ।
তাই একজনকে ভাল করে না জেনে , না চিনে একেবারেই নিজেকে সঁপে দেওয়া ঠিক
নয় কারণ কার্যসিদ্ধি হয়ে গেলে তিনি যে আবার নিজের পথে ফিরে যাবেননা তা কে
বলতে পারে ।
তার চেয়ে আসুন সুন্দর বন্ধুত্বে ।
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্পর্কের নাম
বন্ধুত্ব
। শব্দটি শুনলেই বুকের মধ্যে কেমন যেন এক ভালোলাগা কাজ করে ঠিক বসন্তের
বাতাসটুকুর মতো। সে চলে গেলে মনে হবে " সে বলে গেল না "। কিম্বা " কোথায়
গেল বলে গেল না । "
বন্ধু মানে আত্মার আত্মীয়, যে আত্মীয়তা কখনো কখনো রক্তের বন্ধনকেও ছাড়িয়ে যায়।
বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক যেখানে একে অপরের প্রতি থাকে পারস্পরিক স্নেহ ।
বন্ধু
জীবনে অক্সিজেনের মতো। যে কথা কাউকে বলা যায় না, সেই গোপন কথা মন খুলে
বলা যায় একমাত্র বন্ধুকেই । বন্ধুই সকল দুষ্টুমীর একমাত্র সঙ্গী। বন্ধু
মানে বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস আর ছেলেমানুষী আর ? আর হুল্লোড়। সব ধরণের
মানবিকতা বোধ ছাপিয়ে বন্ধুত্বের আন্তরিকতা জীবনের চলার পথে অন্যতম সম্পদ।
বন্ধুদের
মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতভেদ আছে। আছে
বন্ধুত্বের রকমফেরও! নিশ্চয়ই ভাবছেন, বন্ধুর আবার রকমফের কি? বন্ধু তো
বন্ধুই! একটু দাঁড়ান। আর খানিক সময় থমকে থেকে ভাবুন তো, আপনার সবচেয়ে
প্রিয় বন্ধুটির বন্ধু তালিকায় প্রথম নামটিই কি আপনার? সেও কি আপনাকে
আপনার মতোই বন্ধু ভাবছে?
সামান্য
ভুল বোঝাবুঝি থেকে সহসাই বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরতে দেখা যায় ! যে
ব্যাপারটা সামান্য আলোচনার মাধ্যমেই মিটে যেতো, তাকে বছরের পর বছর মনের
মধ্যে পুষে রেখে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার দৃষ্টান্তও কিন্তু কম নয়।
বন্ধুত্বকে সফল করতে হলে ----------
১। ভালো শ্রোতা হতে হবে ।
২ । বন্ধুদের আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকে প্রাধান্য দিলে কিন্তু হবে না। অন্যকেও বলতে দিতে হবে।
৩ । আলোচনায় উৎসাহিত করতে হবে ।
৪ । বন্ধুর সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে ।
৫ । বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা উচিত নয় ।
৬ । বন্ধু মানেই কেবল আমার সবটুকু কথা তাকে বলে ফেলা নয়! বরং তার কথাগুলোকেও আপন করে নেওয়া !
৭
। অনেক সময়ই খেয়াল করেছি নিজের কথা বলা হয়ে গেল ব্যাস আর কিছু শোনার
অবকাশটুকু নেই। তোমার মতো অপরজনেরও যে কিছু বলার আছে তা একবারও চিন্তা করে
না । সেই ধৈর্য টুকু আগে রপ্ত করতে হবে ।
৮ । বন্ধুত্বে বিশ্বাস রাখাটাও ভীষণরকম জরুরি ।
৯
। অনেক সময়ই দেখা যায় তৃতীয় কোন পক্ষের বক্তব্যের জের ধরে সম্পর্কে ফাটল
ধরে। সেক্ষেত্রে মুখোমুখি আলোচনা করে নেওয়া উচিত । সবসময়ই সরাসরি জেনে
নেওয়া ভাল।। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষকে সামনে রেখে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে
নিতে হয়।
১০
। কখনো অন্যকে অকারণে দায়ী করতে নেই। বন্ধুর কোন কিছু অপছন্দ হলে অন্যের
কাছে সমালোচনা একদম করা উচিত নয় , বরং সরাসরি বন্ধুকেই সেকথা বলা উচিত ।
শুনতে তেতো লাগলেও ফল কিন্তু মিষ্টি হবেই হবে।
১১
। বন্ধুত্বে সৎ থাকাটাও প্রয়োজন । মিথ্যে তথ্য কিংবা ধারণা দিয়ে
বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়তে নেই । নিজে যা সেটাই প্রকাশ করতে হয় । কৃত্রিমতা
দিয়ে বন্ধুত্ব হয়না। তার চেয়ে নিজের ব্যাক্তিত্বকে প্রদর্শন করা উচিত ।
মনের মতো বন্ধু পেতে সততার কোন বিকল্প নেই। সততা প্রিজারভেটিভ ছাড়াই
সম্পর্কের গাছকে সতেজ রাখে।
১২
। আরো একটা ব্যাপার বন্ধুত্বকে টাকা-পয়সা, শ্রেণীভেদ, সম্পদ, ক্ষমতা,
পদমর্যাদার ভিত্তিতে কখনোই পরিমাপ করা উচিত নয় । বন্ধুত্বে আরো একটা
ব্যাপারে সজাগ থাকলে ভাল হয়। সেটি হলো অর্থের লেনদেন , অর্থের লেনদেন
এড়িয়ে চলাই উচিত । বন্ধুর অভাব কিংবা সীমাবদ্ধতাকে তার দূর্বলতা ভাবতে
নেই । সামান্য একটু করুণা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট।
বন্ধুকে কখনো করুণা নয়, সম্মান দিতে হয়।
১৩ । সমালোচনা করা যেতেই পারে, তবে কটুক্তি নয়। বন্ধুর সমালোচনা বন্ধুরা করবে নাতো করবে কে? তবে সমালোচনার ভাষা যেন সুন্দর হয় ।
১৪ । একবার ভুল করলে তাকে ছুঁড়ে ফেলতে নেই বরং তাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন ।
১৫
। ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না, কথাটি অনেকাংশেই ভুল। বন্ধু যদি বিপরীত
লিঙ্গের হন, তার অনুভূতির প্রকাশভঙ্গীও কিছুটা আলাদা হবে এবং এই সত্যকে
মেনে নিতে হবে এবং বিষয়টিকে সম্মান করতে হবে । অযথা অস্বস্তির সৃষ্টি করতে
নেই । দৃষ্টিশোভন দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন । আপনার আচরণে যেন তাকে
অকারণে বিব্রত হতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
১৬ । সরি ----- ছোট্ট একটা সরি বিশাল দূরত্বকে এক নিমেষেই দূর করতে পারে।
১৭ । বন্ধুত্বে ইগোকে সবসময়ই দূরে সরিয়ে রাখতে হয়। মনে রাখতে হবে এই ইগোতে কেবল বন্ধুই হারায় না, নিজেকেও হেরে যেতে হয় ।
১৮
। বন্ধুত্বকে সময় দেওয়া ভীষণ জরুরী । নতুন বন্ধুদের পাশাপাশি পুরোনো
সম্পর্কগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত । দৈনন্দিন ব্যস্ততায় পুরোনো বন্ধুত্ব
যেন হারিয়ে না যায় !
১৯
। আপনার বন্ধু আর আপনার মাঝখানে কেবল এক মুঠোফোন দূরত্ব। বন্ধুকে মনে
করুন, পুরোনো স্মৃতিকে কাছে টেনে আনুন, স্মৃতি মধুর মুহূর্তগুলো রোমান্থন
করুন।
২০ । আপনার হাতখানা একটু বাড়িয়েই দেখুন না ।
বন্ধুরা
সব পাশেই আছে চুপিচুপি বা লুকিয়ে। হয়তো বা সেই বন্ধু প্রতিনিয়ত অপেক্ষা
করছে কখন আপনি তার বন্ধুত্বের গুরুত্ব ও মূল্য দেবেন ...
Post A Comment:
0 comments so far,add yours