দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
রোজ কত কী ঘটে যাহা - তাহা—
এমন কেন সত্যি হয় না, আহা। -- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
দৃশ্য
- এক, পাক ঈদ উল আযহা নামায পড়তে যাচ্ছেন একদল মুসল্লি। আর একই রাস্তায়
তার পাশ দিয়ে যাচ্ছেন শ্রাবণের শেষ সোমবার শিবের মাথায় জল ঢালতে হিন্দু
পূন্যার্থী। দুই- নামায আযহা করে ফেরার পথে চলছে দুই সম্প্রদায়ের
সৌহার্দ্য বিনিময়। আবার অসুস্থ শিব ভক্তদের সেবা করছে এক মুসল্লি। সোমবার
দিন ভোর সোশ্যাল মিডিয়ায় চললো সম্প্রীতির ছবি। আর তার ভাইরাল করলো
নেটিজেনরা।
কমেন্টে ভরিয়ে দিচ্ছে মানুষ। অনেকে লিখছেন, এটাই আসল ভারতবর্ষ!
মোদ্দা কথা, সোশ্যাল মিডিয়াকে আশ্রয় করে মানুষ চাইছে, এটাই হোক! দূর হোক বিদ্বেষ। সকলের প্রার্থনা-- অন্তর থেকে বিদ্বেষ বিষ নাশো!
জানা
গেছে, পুণ্যার্থীকে মাথায় জল ঢেলে সুশ্রষা করে সুস্থ করছেন যিনি তিনি একজন
মুসল্লি। তিনি মানব ধর্মকে সার করেছেন। তাঁর নাম সাহেব । অন্যদিকে ঈদের
নামায আযহা করে ফেরত মুসলিম ভাইদের সঙ্গে হিন্দু পূন্যার্থীদের সৌহাদ্য
বিনিময়ের দৃশ্য হৃদয় ছুঁয়েছে সবার। সম্প্রীতির ছবি ধরা পড়েছে মল্লারপুর
থানার লছিয়াতোড় গ্রামে।
হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই উৎসবে মেতে উঠতে দেখেছে গোটা জেলা।
মল্লারপুরের
তালোঞা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম লছিয়াতোড়। সেই যেন গোটা দেশ কে
পথ দেখালো। এই গ্রামে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বসবাস। দুর্গাপুজো
থেকে ইদ পরব সবেতেই উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে
দেন। কিন্তু সোমবার সকালের ঘটনার মধ্য দিয়ে সকলের মন জয় করলো এই গ্রাম।
এদিন সকালে একদল হিন্দু পূন্যার্থী জল ঢালতে ডাবুক গ্রামের শিবমন্দির
যাওয়ার উদ্দেশে গ্রাম থেকে হেঁটে আসছিলেন। মাঝারিপাড়ার কাছে হঠাৎই এক
নাবালক পুণ্যার্থী প্রচণ্ড রোদ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রামেরই সাহেব শেখ
তাকে বাড়ির বারান্দায় বসিয়ে মাথায় জল ঢেলে ও খাইয়ে সুশ্রষা করে সুস্থ করে
তোলেন। সাহেব বলেন, সকাল থেকেই হিন্দু ভাইরা শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য
যাচ্ছিল। হঠাৎই বছর চৌদ্দর এক নাবালক আমার বাড়ির সামনে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
আমি সেই সময় ইদগাহতে ইদের নামাজ পড়তে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। কিন্তু ওই
নাবালকের অসুস্থতা দেখে আমি বাড়ি থেকে বোতলে করে জল এনে খাইয়ে এবং মাথায়
ঢেলে সুস্থ করে তুলি। তিনি বলেন, মানুষ মানুষের পাশে থাকবে এটাই আল কোরানের
শিক্ষা। সেটাই মেনে চলেছি মাত্র। অসুস্থ হয়ে পড়া মল্লারপুরের লেট পাড়ার
বাসিন্দা সৌমেন লেট বলেন, সাহেব ভাই আমার জন্য খুব করেছে। এটা মনে রাখবো।
ঘটনার
সময় উপস্থিত ছিলেন মল্লারপুরের বাসিন্দা সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়। তিনি
বলেন, ওই নাবালক হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়ে। যেভাবে একটি মুসলিম পরিবার এক
হিন্দু পূন্যার্থীর সাহায্যে এগিয়ে এল তা দেখার মতো। সাহেবের প্রশংসায়
পঞ্চমুখ তৃণমূলের ওই অঞ্চলের সভাপতি মহম্মদ বদরুদ্দোজা।
গ্রামের
বাসিন্দা তপন লেট, জাহাঙ্গির শেখরা সাহেবের কাজের প্রশংসা করেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অভ্যস্থ সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, বিভেদের ছবি ছয়লাপ
হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।এই ধরনের ছবি বেশি করে ভাইরাল হওয়া উচিৎ। সোশ্যাল
মিডিয়া যেন তাঁর উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্ছে। মিডিয়া ঝড়ে এই ছবি ভাইরাল
যিনি করুন তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। কারণ, বিভিন্ন বিভেদের ছবি
আপলোড করে ধর্মীয় মেরুকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা নেওয়ায় সোশ্যাল
মিডিয়ার দুর্নাম একটা ছিল। বেশি করে হোক সম্প্রীতির ছবি ভাইরাল, দাবি উঠলো
নেটিজেনদের!!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours