দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
তানাবাতা। ইচ্ছেপূরনের জন্য চিঠি লেখা। কেউ কেউ আবার কবিতার আকারে লেখে! আর সেই চিঠি লেখা কেন? ওরিহিমে তাঁর স্বামী হিকোবসির সাথে দেখার জন্য কান্নাকাটি করলে, তার বাবা বললেন, “চন্দ্রমাসের সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে ৭ম জুলাই তোমরা দেখা করতে পারবে”। সেই দিনই তানাবাতা হয়। এবার বিশ্বভারতীর পাঠভবনের পড়ুয়ারা যথারীতি উদয়ন গৃহের সামনে ইচ্ছে ডানা চিঠি সমেত বাঁশের ডালটি রেখে পালন করল এই উৎসব। পাঠভবনের এক পড়ুয়া জানান, বেশ ভালো লাগে এই উৎসব। খুব মজা হয়।
পাঠভবনের অধ্যক্ষা বোধিরূপা সিনহা জানান, পাঠভবনের পড়ুয়ারা এই ‘তানাবাতি’ উৎসব পালন করে। ছোট ছোট কাগজে লেখা। আর সেই কাগজকে জাপানীরা বলে তানজাকু। জাপানের প্রসঙ্গ উঠলে, তুমিকোবার নাম আসবেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুণগ্রাহী তিনি। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়ে নানা রকম কাজ কর্ম করেন। বাস ছিল জাপানী ইউকোহামা শহরে।
প্রসঙ্গে আসি, জাপানে মোটামুটি ভাবে অগাস্ট মাসে বাঁশ গাছের ডালে এভাবেই ইচ্ছাগুলো গাছে টাঙানো হয়। বিশ্বভারতীতেও সেই একইরীতিতে পালিত হয় বলে জানান জাপানী বিভাগের অধ্যাপিকা গীতা কীনী।
তিনি জানান, এই উৎসবের পিছনে আছে এক লোককথা। কেন উৎসব এই তানাবাতা? স্বর্গের যিনি দেবতা তাঁর কন্যার নাম ওরিহিমে। জাপানী শব্দ ওরির অর্থ বোনা। যে বিভিন্ন ধরনের কিমোনোর সুন্দর সুন্দর পোশাক বোনে। হিমের অর্থ কন্যা। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য সন্ধান করতে লাগলেন তাঁর নাম হিকোবসি। হিকোবসির কাজ গোপালন। আকাশ গঙ্গার প্রান্তে থাকত। খুব পরিশ্রমী ছিলেন। তাই মনে হলো এদের দুজনের বিয়ে দিলে ভালো হয়। বিয়ের পর তারা তাদের কাজকর্ম সব ভুলে গেল। তারা আনন্দে বৈবাহিক জীবন কাটাতে লাগলো। তারফলে, কেউ আর কিমোনো বুনছে না। তারজন্য পোশাক বোনার কেউ নেই। অন্যদিকে, গরুরা যত্র তত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই সবাই স্বর্গের দেবতার কাছে নালিশ করতে লাগলো। তখন তিনি ভীষণ রেগে গিয়ে বললেন, যাও তোমরা আকাশ গঙ্গার পূব ও পশ্চিমে চলে যাও। তোমরা গিয়ে নিজের কাজে মন দাও। এই লোক কথার মূলে আছে, সবাইকে কাজ ঠিক ঠাক করতে হবে। এই আলাদা হওয়ায় ওরিহিমের খুব দুঃখ যে হিকোবসির সাথে আর দেখা হবে না। তখন ওরিহিমে কান্নাকাটি করতে লাগলো তার বাবার কাছে। তখন বাবা বললেন, চন্দ্রমাসের শেষ সপ্তম মাসের সপ্তম দিনে ৭ম জুলাই তোমরা দেখা করতে পারবে। সেই দিনই তানাবাতা হয়। বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময় হয়ে থাকে। মোটামুটি ৭ জুলাই থেকে ৭ অগাস্টের মধ্যে জাপানের বিভিন্ন জায়গায় হয়ে থাকে। কিন্তু যখন ওরিহিমে আকাশ গঙ্গা পার হতে চায়, তখন ওরিহিমের কান্নাকাটির জন্য নীলকণ্ঠ পাখি, জাপানীরা যাকে বলে হাসাসাগি একটা সেতু তৈরী করে দেয়। যাতে করে ওরিহিমে হিকোবসির কাছে যেতে পারে। এই দিনটি এক অর্থে প্রেমিক প্রেমিকাদের মিলনের দিন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সবাই তাদের নিজেদের মনোবাসনাকে জানাই। ওরিহিমে ও হিকোবসি দুই নক্ষত্রকে প্রতিনিধিত্ব করে। ওরিহিমে শ্রবণা নক্ষত্র এবং হিকোবসি অভিজিৎ নক্ষত্র। তাই এই উতসবকে তারার উৎসবও বলেন জাপানীরা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours