old temple
ভব্নীপ্রসাদ ভট্টাচার্য,ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ গুরুগৃহে রূপেন্দ্রনাথ ছিলেন দশবছর ! রূপেন্দ্র নাথের শিক্ষাগুরু জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন, তিনি ছিলেন রূপেন্দ্র নাথের থেকে তেইশ বছরের বড়ো! তখনও জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের ভারতজোড়া খ্যাতি না হলেও সংস্কৃত শিক্ষার কেন্দ্র নবনায্যায়ের এক নতুন পীঠস্হান গড়ে তুলেছেন গঙ্গার ত্রিবেনী সঙ্গম ত্রিবেনীতে! সেই ক্ষনজন্মা পন্ডিতের কাহিনী সর্বজনবিদিত! অনেক নামী পন্ডিত তাঁর সাথে তর্কযুদ্ধ করতে এসে পরাজিত হয়ে মাথা নিচু করে ফিরে গেছেন! সম্ভবতঃ সারা দেশে তিনিই একমাত্র পন্ডিত যাঁর প্রতিভার চ্ছটায় উদ্ভাসিত হয়েছে সমগ্র অষ্টাদশ শতাব্দী! তাঁর জন্ম ১৩ ই সেপ্টেম্বর ১৬৯৪, তিরোধান ১৯ শে অক্টোবর ১৮০৭ খ্রীঃ ! এই মহান গুরুর কাছে সংস্কৃত, স্মৃতি, ন্যায়, ব্যাকরন শিক্ষা লাভ করেন রূপেন্দ্র নাথ! তিনি উপাধীও লাভ করেছিলেন, কিন্তু নামের সাথে উপাধী সংযুক্ত করা তিনি পছন্দ করতেন না!গ্রামের কেউ তাঁকে তর্কলঙ্কার, ন্যায়তীর্থ, বিদ্যালঙ্কার সম্বোধন করলে তিনি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হতেন! তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রেও সুপন্ডিত ছিলেন! তাই স্হানীয় জমিদার তাঁকে 'ধন্বন্তরী' উপাধি দিলেও তাঁর সন্মুখে সেটা বলা যেত না! গ্রামের মানুষ তাই তাঁকে বলতেন 'পন্ডিতমশাই ' ও ' কোবরেজ মশাই' এই পদবীর প্রথমটি পেয়েছিলেন বৃত্তি অনুসারে দ্বিতীয়টি নিজ কন্যাকে কোন চতুষ্পাঠীতে ভর্তি করতে না পেরে নিজেই টোল খুলেছিলেন তাই এই পদবী প্রাপ্তি! এটি তাঁর ইচ্ছার বিরূদ্ধে হলেও সেটি প্রকৃত পক্ষে তাঁর বংশানুক্রমিক বৃত্তি ছিল!
রূপেন্দ্রনাথের পিতা ও পিতামহের চতুষ্পাঠী টোল ছিল! কিন্তু সৌরীন্দ্রনাথ তাঁর পুত্রকে ভিন্ন পথের যাত্রী করতে চেয়ে ছিলেন! সেই সময় সোঁয়াই সহ পার্শবর্তী গ্রামগুলিতে কোন ডাক্তার বা কবিরাজ ছিল না! মানুষ অসুখে বিশুখে, রোগ ব্যাধি মহামারীতে ছিল অসহায়! তাঁরা ঝাড়ফুক মন্ত্র তন্ত্র , তাবিজ কবজে বিশ্বাস করতো! যারা ধনী তারা যঞ্জ গ্রহশান্তি স্বস্ত্যয়ন করতেন! প্রকৃত চিকিৎসার পরিবর্তে ঝাড় ফুক, তুকতাক ওঝা, গুনিন বা পুরোহিতের উপর নির্ভরশীল ছিল রোগীর আত্মীয় স্বজন! সেই সময় ম্যালেরিয়া, কলেরা আর আন্ত্রিক রোগে গ্রামের পর গ্রামে চিকিৎসার অভাবে মড়কে শেষ হয়ে যেত! রূপেন্দ্রনাথের পিতা বুঝতেন, রাজাদের মানুষকে এইসব রোগের হাত থেকে বাঁচাতে তুকতাক ঝাড়ফুক নয়, সঠিক চিকিৎসা দিতে হবে! তাই তিনি ছোট ভাই সমীরেন্দ্রনাথকে কবিরাজ করতে চেয়েছিলেন! অলক্ষে বিধাতা অন্যকিছু চেয়েছিলেন! তাই সমীরেন্দ্রনাথ একদিল গোপনে গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস নেওয়ায় নিজের পুত্রকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে পারদর্শী করে যোগ্য কবিরাজ করে গড়ে তুলতে! ( চলবে)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours