দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরান্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে—
অবনী বাড়ি আছো? – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
জানি
না এখানে বৃষ্টি বারোমাস কিনা! মেঘ গাভীর মত চরে কিনা? আমরা অবনীর মতো
নিজেকে খুঁজে বেড়াই। পরান্মুখ নালিঘাস যে মায়ার মত আমাদের চেপে ধরেছে। তাই
বিচিত্রবোধে এত হানাহানি। খুব সত্যি কথা আমাদের জীবনে যেমন ধর্ম আছে, তেমনি
জিরাফও আছে। আসতে আসতে জিরাফের জয় হবে। এই আশায় বসে থাকা- বলতে শুনি অনেক
প্রবীণদের। মোদ্দা কথা, জিরাফের জয় না হলে, মানুষ ধর্মকে হাতিয়ার করে ফতোয়া
দেবে চিড়িয়াখানায় জিরাফ দেখা যাবে না। হিন্দু মুসলিম কোন গ্রহ্নে তার
উল্লেখ নেই। দিনে ফতোয়া চললেও, রাতে আবার ফতোয়াবাজরাও চুপি চুপি দেখে
যাবেন। আর তাহলেই হয়ত একদিন ধর্মান্ধতা দূর হবে। ফিরে আসি সেই ভাব নিয়ে-
এখানে মেঘ গাভীর মত চরে। প্রাচীন গ্রহ্ন ঋকবেদে, এরকম বলা আছে। ইন্দ্র
গাভীকে দোহন করেন। অর্থাৎ এই মেঘ আসলে গাভী। ইন্দ্র তাকে দোহন করেন। অর্থাৎ
বৃষ্টি আনেন। আর এই গাভীই রূপক অর্থে মেঘই হোক আর যাই হোক, গোমাতা হিসেবে
ভারতবর্ষের মূল বিষয়। তাই প্রায়ই গোরক্ষকদের তান্ডব চলে। হিন্দুদের
নিষিদ্ধ মাংস রাখা নিয়ে বিতর্কে মৃত্যুর খবর কারো অজানা নয়। নিষিদ্ধ বললে,
অনেকেই ঋকবেদ সংহিতা (৬।১৭।১১ ঋকবেদ) থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলবেন--
স্বাদোরিত্থা বিষ্ণু মধ্বঃ পিবন্তি গৌর্য্যঃ – সৌবর্ণ গাভী সকল সুস্বাদু
এবং এ প্রকারে সর্ব যজ্ঞে ব্যপ্ত মধুর সোমরস পান করে। তোমার বৃষদিগকে
ইন্দ্র ভক্ষণ করুন, তোমার অতি চমৎকার, অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ
করুন। বৈদিক ধর্মাচরণে যজ্ঞের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান ছিল বলে অনেকে মনে
করেন। সেই যজ্ঞে পশুবলি আবশ্যকীয় ছিল। এই পশুবলি ছিল উৎসর্গ প্রথা।
পরবর্তীকালে ভাগবত সম্প্রদায় যজ্ঞে পশু হত্যার কঠোর সমালোচনা করেন ও তার
যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁর মধ্যে অনেকেই আছেন। (অজিত
কুমার চক্রবর্তী- হিন্দু ধর্ম)।
এবার
আসি প্রসঙ্গে। হরফ প্রকাশনীর বইয়ের মুখবন্ধে—বিদগ্ধ আব্দুল আজীজ আল আমান
১০।৮৬।১৩ ঋকবেদের উল্লেখ করে বলেছেন, তোমার বৃষদিগকে ইন্দ্র ভক্ষণ করুন,
তোমার অতি চমৎকার, অতি সুখকর হোমদ্রব্য তিনি ভক্ষণ করুন। এই অকাট্য
প্রমাণের পর, আর তো কিছু বলার থাকে না। আর শুধুমাত্র গাভী নিয়ে এত
দ্বন্দ্ব। যেখানে গাভীকে জ্যোতিঃরাজি হিসেবে বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি পরিষ্কার
করতে ঋষির ব্যাখায় বলি-- ‘গাবো মতয়ঃ’ এদেরই মুক্ত করতে হবে অন্ধকারের
কারাগার থেকে। গো অশ্ব স্থূল ভৌতিক গো অশ্ব নয়। এগুলো আধ্যাত্মিক ধনরাজির
প্রতীক। একইভাবে সোমরস মধু মদিরাময় নয়। ইহা নদীগুলিতে অবস্থান করে। সমুদ্রে
অবস্থান করে। সেক্ষেত্রে যজ্ঞে অন্যান্য নিবেদনও প্রতীকার্থক হতে বাধ্য।
বাহ্য যজ্ঞ আন্তর দানের প্রতীক ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। ( বেদ রহস্য ঃ
শ্রী অরবিন্দ) সমগ্র বেদ রূপকল্পে পরিপূর্ণ। মুনিঋষিরা তাঁদের জ্ঞান
অযোগ্যদের হাত থেকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। হয়তো এই কথা বিশ্বাস করে যে
সর্বোত্তম বস্তুর অশুদ্ধতা নিয়ে যাবে নিকৃষ্টতম অবস্থার দিকে এবং সোমদেবতার
শক্তিশালী সুরাসার হয়তো দিতে হবে দুর্বল শিশুহস্তে। ( বেদ
রহস্য—উত্তরার্ধ—শ্রী অরবিন্দ) তাহলে, গাভীর মাংস সুস্বাদু, আমার উদরের দুই
দিক পরিপূর্ণ করবে, এই যুক্তি বাহ্যিক লক্ষণ মাত্র। কিন্তু সেকারণেই
অন্যরা ভক্ষণ করলে বাধা দিতে হবে, এমন কথা শুধু বেঠিক নয়, অন্যায়,
নীতিবিরুদ্ধ ও অমানবিক। আর এই অর্বাচীনদের জন্য হিন্দুদের গোমাতার আদর্শ
সন্তান বলে টিপ্পনি শুনতে হয়। হিন্দু ধর্ম বলতে যেটা আমরা বুঝি। তা স্বামী
বিবেকান্দ এক কথায় সহজভাবে বুঝিয়ে গেছেন- জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন
সেবিছে ঈশ্বর। সেই কথাই, বহুযুগ আগে উচ্চারিত যাজ্ঞ বল্ক্য উপনিষদে- ঈশ্বরো
জীবকলয়া প্রবিষ্টো ভগবানিতি। প্রণমৎ দণ্ডবৎভূমা-বাশ্চণ্ডাল গোখরম। জীবদেহ
পরমাত্মারই অংশ। তিনিই প্রতিটি জীবদেহে প্রবিষ্ট হয়ে আছেন বলেই ভগবান।
সুতরাং সন্যাসী চণ্ডাল থেকে শুরু করে গরু, গর্দভ, চতুষ্পদ পশুকেও ভগবান
জ্ঞানে ভূমিতে দণ্ডবৎ হয়ে প্রণাম জানাবেন।
আমরা
কিছুতেই একমত হতে পারি না এই ভেবে অনেকেই হতাশাগ্রস্থ হন। ঠিক আছে অন্ততঃ
এটাতেই আমরা একমত হই। পরে যুক্তি দিয়ে বিচার করা যাবে। লেট আস গোউ দেন, ইউ
এন্ড আই …
টু লিড ইউ টু এন ওভারহোয়েলমিং কোশ্চেন …(দ্য লভ সঙ অফ জে আলফ্রেড প্রুফ্রক)
আর সেটা অবশ্যই জয়শ্রীরাম ধ্বনি। এতৎ অক্ষরং হি ব্রহ্ম এব। এভাবে হাটে ঘাটে মাঠে এই ধ্বনি ছড়াবার দরকার কী খুব আছে?
আমরা
কিন্তু কেউ প্রুফ্রক নই। তাই বলব দ্বিধা ছাড়াই। না হলে তর্ক জমে না।
অমর্ত্য সেনের অমূল্য বই 'তর্কপ্রিয় ভারতীয়' আছে আমাদের কাছে। তাই তাঁর
পক্ষপাতিত্ব বিষয়ক বিশ্লেষণ প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করলামঃ ‘ --বলা হয় যে যখন বহু
বিবাহের কারণে একজন হিন্দুকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে। তখন ইসলামি আইনি
ব্যবস্থায় একজন মুসলমানের চারটি স্ত্রী থাকতে পারে। ( কার্যক্ষেত্রে যদিও
ভারতীয় মুসলিমরা এই আইনের সুযোগ কদাচিৎ গ্রহণ করে থাকেন।) ১৯৫৫-৫৬ সালে
হিন্দু আন্দোলনের ফলে হিন্দুদের এই ব্যক্তিগত আইনের বেশ কিছু ধারা যুক্ত
হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত আইন পালটায় নি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে ‘অভিন্ন দেওয়ানি
বিধি হিন্দুদের উপর চাপানো হল, মুসলিমদের উপর হল না’।
বিয়ের পার্থক্য যদি বড় হয়, তাহলে স্ত্রীর পরিচয় না দিয়ে একাধিক বিয়ের পথে অনেকে পা বাড়াবেন বলে মনে হয় না।
অমর্ত্যবাবু বলেছেন, ‘বার বার যে হিন্দু হিন্দু বলি, হিন্দু শব্দটি দেশ
ও স্থান নির্দেশক। ইন্দাস বা সিন্ধু নাম থেকে ইণ্ডিয়া শব্দ এসেছে। একসময়
ভারতীয় মুসলিমদের ফারসি বা আরবি ভাষায় বলা হত ‘হিন্দভী’ মুসলিম। ব্রিটিশরাও
আগে ‘হিন্দু মুসলমান’ বা ‘ হিন্দু খ্রিষ্টান’ বলতেন। অন্যদিকে, মুসলিম
আনুগত্য নিয়ে অনেক কথা উঠে আসে। তার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের ম্যচে
পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাজি পোড়ানো’। এক্ষেত্রে এই পার্থক্য খেলাচ্ছলে দূর
করতে না পারলে, দুই পক্ষের লোকসান। কারণ একটি নৌকায় আমরা উভয় সম্প্রদায়
আছি। বর্তমান ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা কতটা প্রয়োজন তার আলোচনায় লেখক বলেছেন,
অতীতের মুসলিম সম্রাটেরা কি করেছেন বা না করেছেন, তাঁরা সাম্প্রদায়িক
ছিলেন, না পরকে আপন করতে চাইতেন, পীড়ন করতেন, না সহনশীল ছিলেন, সে বিষয়ে
কোনও বক্তব্য কোন ভাবেই আবশ্যক নয়। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য এরকম
এক অবস্থান – যথা, মুঘলরা অমুকটা করেছিল অথবা করেনি—কোনও অপরিহার্য কারণ
হতে পারে না। মুসলিম শাসকদের অপরাধ আজকের ভারতের চোদ্দো কোটি মুসলমানের
স্কন্ধে চাপানোর কোনও অর্থ নেই। বহু শতাব্দী আগে মুসলিম শাসকরা কী করেছিলেন
বা না করেছিলেন, তার নিরিখে বর্তমান ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা
বা তাঁদের রাজনৈতিক আনুগত্য সম্পর্কে কোনও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
হিন্দুদের
বহুত্ব অর্থাৎ বহু ঈশ্বর বাদ থাকলেও, আল বিরুণীর বিবরণে হিন্দুদের কাছে
শিক্ষণীয় বলে একটা দিক উল্লেখ করা আছে। একাদশ শতকে ভারতে এসে উনি
হিন্দুধর্মের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ঈশ্বর সম্পর্কে ধর্মালম্বীদের মধ্যে
বিশেষ কলহ হয় না। বড়জোর বাগযুদ্ধ অর্থাৎ তর্ক বিতর্ক চলে। কিন্তু তাদের
মধ্যে কেউই নিজের দেহ, আত্মা বিসর্জন দিয়ে অর্থাৎ ‘খুনোখুনি’র পথে ধর্মীয়
কলহের নিষ্পপ্তি করতে চায় না। তাই বিষয়টি কিন্তু শিক্ষণীয়( অমর্ত্য সেন)।
হিন্দু
মুসলমানের আরেক বিবাদের কারণ পৌত্তলিকতা। আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে,
হুজুরদের ফতোয়া দিতে শোনা যায়, মূর্তি ভাঙার। দেশেও আমরা দেখেছি। শুধু
মূর্তি নয়, বিভিন্ন ধর্মস্থানও। তাই এই বিবাদের মূলে কিছু কথার প্রয়োজন
আছে। হিন্দু ধর্মের আরেক লক্ষণ মূর্তি পূজা। বৈদিক যুগে মূর্তি পূজার
প্রচলন ছিল না। মূর্তিপূজার ধারণা বহুপরবর্তী কালের। বেদ – উপনিষদের ঋষিগণ
নিরাকার আনন্দ –স্বরূপ ব্রহ্মোপলবদ্ধিতে সক্ষম হলেও, সাধারণ লোকের পক্ষে তা
সম্ভব ছিল না বলেই পরবর্তীকালে অধিকারভেদে ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন গুণ
অনুসারে প্রতীকরূপে মূর্তিপূজার প্রচলন হয়েছিল। পুরাণের যুগেই এই সব দেব
কল্পনা ও মূর্তিপূজার প্রচলন হয়েছিল। খ্রীষ্টপূর্ব চতূর্থ শতকে ইতিহাসখ্যাত
মেগাস্থিনিস তাঁর বিখ্যাত ভারত বিবরণে বলেছেন – ভারতীয়গণ মন্দিরে
দেবতাদিগের আরাধনা করিত না। খ্রীষ্ট পূর্ব প্রথম শতকে ভগবান বুদ্ধের মূর্তি
নির্মিত হয় নি। পরিবর্তে বুদ্ধের প্রতীকরূপে পদচিহ্ন, ধর্ম চক্র,
বোধিবৃক্ষ প্রভৃতি প্রতীকগুলি পাথরে খোদাই করে উপাসনা করা হত। গুপ্ত যুগে
এই মূর্তি পূজার ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। বেদে একেশ্বরবাদ স্বীকৃত। আমাদের
দেশে বহু দেবতায় বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও শিকড় একেশ্বরবাদে। সর্বং খল্বিদং
ব্রহ্ম তজ্জ্বলানীতি—ব্রহ্মেই সব কিছুর উৎপত্তি, স্থিতি, বিলয়। (ছান্দোগ্য
উপনিষদ)। তাই মূর্তি নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের বিভেদ খুব একটা যুক্তিযুক্ত নয়।
বিভিন্ন ধর্মস্থানে আঘাত প্রসঙ্গে আসি। যদি বিশেষ কোন ধর্মীয় রেলিকসকে
ভেঙে দেখা যায় তাহলে হিন্দু, বৌদ্ধ, সেমিটিক ধর্মকে পাবো। এমনকি পাঁচ হাজার
বছরের প্যাগান ধর্মকে ফিরে পাবো। সেটা নিয়ে হানাহানি ঠিক নয়। ধর্ম
পরিবর্তিত হয়। সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচা যেতে পারে। যা আমাদের সমৃদ্ধ করতে পারে (
শিল্পী- সাজ্জাদ হামদানি)।
ধর্মীয়
গোঁড়ামি নিয়ে বলতে গেলে একটু পিছোতে হবে। বিশ শতকের গোড়ার দিকে ১৯০২
সালে আমেরিকান বাইবেল লীগের প্রতিষ্ঠা হয়। ‘দ্য ফাণ্ডামেন্টালস’ নামে এই
সংগঠন ১২টি পুস্তিকা প্রচার করেন। বাইবেলের সবরকম সমালোচনার সমালোচনা ছিল
এদের লক্ষ্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এদের কার্যকারিতা জঙ্গী আকার ধারন করে।
সেই সময় এদের ধ্যান ধারনাকে মৌলবাদ বলা হয়। এরা সংস্কার বিমুখ। ধর্মীয়
ব্যাপারের কোন পরিবর্তনের তাঁরা খড়গ হস্ত। তাঁরা বিবর্তনে অবিশ্বাসী। (উৎস –
দ্য ফাণ্ডামেন্ট্যালস- সৌরীন ভট্টাচার্য)। আমাদের দেশেও যে এমনটি ঘটে না,
তা নয়। আর এই দিকটাকেই আমরা আলোচনার মধ্যে প্রকট করি। কিন্তু দেখি না
শাস্ত্রীয় অনুশাসনকে এড়িয়ে মারফতি ধর্মীয় ও মানবিক দর্শনকে। এই দর্শনের
উদ্ভব সুফি সাধনার ঐতিহ্য থেকে। মারেফত অর্থাৎ জ্ঞান। সত্যকে জানার জ্ঞান।
তাই এই সাধনা সংস্কার মূলক। এখানে গুরুর প্রভাব প্রবল। এটাই এই দর্শনের
সীমাবদ্ধতা। তবে এরা ঐশী প্রেমে পাগল হওয়ায়, সে দোষ ওতটা প্রকট নয়। কেউ
কেউ অবশ্য বলেন, ধর্মীয় অনুশাসনের সাথেই মিশে আছে এই মারফতি দর্শন। অনেকটা
দুধের মধ্যে থাকা মাখনের মত। (উৎস- মারফতি দর্শন- দিব্যজ্যোতি মজুমদার)।
মনে
এক বুক আশঙ্কা নিয়ে কেউ কেউ বলেন আদমসুমারীতে ধর্ম ভিত্তিক
সংখ্যাতত্ত্বের কথা। কিন্তু উল্টো ভাবে বলা যেতে পারে, হিংস্রতার জন্য
সংখ্যাটা বড় কথা নয়, তার প্রমান ইজরায়েল। সোজাকথা বিদ্বেষ তাই এত বিভাজন।
কিন্তু অনেক সময় বিদ্বেষ না থাকলেও, বিভাজন চলেই আসে! বাসে, ট্রেনে চট করে
একটা রুমাল জানালা দিয়ে গলিয়ে, নিজের জায়গা তো করলুম, কিন্তু পাশের
জায়গাটাও চাই। ওটা রেখেছি ভাইয়ের জন্য। একজন ভিড় ঠেলে এসে বললে, দাদা কেউ
আছে? উত্তর ছিল যথাযত- ভাই বসবে। বোধ হয় রসিকতা করেই বললে কেউ একজন—দাদা,
আমরা কী কেউ আপনার ভাই হতে পারি না? অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি!!
আসলে কি জানেন? আমরা মাথায় ভূত বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,
–‘মানুষের মৃত্যু আছে, ভূতের মৃত্যু নেই’। এই সর্বনেশে কর্তার ভূত ,
লেখকের কথায়, দেশটাকে নাড়েও না, অথচ ছাড়ে না। তাই আজ মানুষ ভয় পাচ্ছে! কেন
জানেন? তারপদবাবুকে জিজ্ঞেস করুন, বলবে। মানে তারাপদ রায়ের কথা বলছি। তবে
শুনুনঃ
জনৈক ভূত দ্বিতীয় ভূতকে জিজ্ঞাসা করল,
‘আচ্ছা, তুমি মানুষ বিশ্বাস করো,
তুমি মানো যে মানুষ আছে?’
দ্বিতীয় ভূত একটু ভীরু প্রকৃতির।
প্রশ্নটা শোনামাত্র শিউড়ে উঠল,
এদিক –ওদিক দেখে তারপর বলল,
‘এই ভর সন্ধ্যাবেলা এসব কি কথা!’
প্রথম ভূত সরাসরি প্রশ্ন করল,
‘কিন্তু কিভাবে বুঝলে যে ওরা মানুষ ?
ওদের বুকের মধ্যে তলিয়ে দেখেছ,
ওদের ভিতরে মানুষের মন আছে কি না,
মানুষের আত্মা, মানুষের বিবেক আছে কিনা?’
দ্বিতীয় ভূত সতর্কভাবে বলল,
‘তত কাছে যাইনি,
অতটা সাহস হয়নি।’
Post A Comment:
0 comments so far,add yours