শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ: 

বাংলাদেশের জন্ম যারা এখনো  বরদাস্ত করতে পারছে না। বাঙালির  "নসল" বদলে দিতে গিয়ে  ১৯৭১ এ  সালে যারা মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির কাছে চরমভাবে পরাজিত হয়েছে। তারা কিন্তু বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে তাদের অপতৎপরতা বন্ধ রাখেনি এখনো। তার উদাহারন অনেক। অরুন্ধতী রায় নব্য সংস্করন! যেমন বাংলাদেশের ভিতরেও রয়েছে তাদের  এজেন্ডা বাস্তবায়নকারি। তেমনি রয়েছে বিদেশেও। বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাঙালির বিরুদ্ধে যেমন ধর্মান্ধতা ও ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে ৫২ তে,  ৭১ এ। এখনো ব্যাবহার করা হচ্ছে। তেমনি ভিন্নভাবে  বিদেশি  "বুূদ্ধিজীবীদের" ও  ব্যাবহার করা হচ্ছে। তাদের অন্যতম দুজন হলেন সুজানা অরুন্ধতী রায় ও শর্মীলা বোস। 
 
শর্মীলা বোস,  নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের নাতনী। তার পিতা কৃষ্ণ বোষ ছিলেন তৃণমূল  কংগ্রেসের নেতা। শর্মীলা বোস  বোষ্টনে জন্মেছেন। বেড়ে উঠেছেন কোলকাতায়। তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন হাভার্ড থেকে। তার বিতর্কিত বইয়ের নাম," Dead reckoning  memories of the 1971 Bangladesh war.
"  বইটি সম্পর্কে আমি প্রথমে জানি পাকিস্তানি টিভি চ্যানেলের টকশো থেকে। পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবি থেকে শুরু করে টিভির এংকর, সে দেশের জামায়াতে ইসলামীর নেতা, এমনকি সাবেক জেনারেলেরাও শর্মীলা বোসের লেখাকে দলিল  হিসেবে তুলে ধরেছেন!  ২০১১ সালে ২৮৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ হয় ইংরেজি ভাষায়। তবে এ বিষয়ে আমি অবগত হই ২০১৪ সালে। বিহারীরা দাঙ্গাবাজ কে না জানে। তারা ভারতের উত্তর প্রদেশ ও বিহার থেকে পূর্বপাকিস্তানে এসেছিলো। "মোর ক্যাথ্যালিক দ্যান পোপ" এই নীতিতে বিশ্বাসী ছিলো বিহারীরা। তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের থেকে নিজেদের বড় পাকিস্তানি মনে করতো!  তারা নিজেরা (বিহারিরা) কখনো পশ্চিম পাকিস্তান না দেখলেও পূর্ব পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ)  বাঙালিদের ২য় শ্রেনীর নাগরিক মনে করতো। তারা রেলগাড়িতে শুয়ে শুয়ে যেতো। বাঙালিদের বসতেও দিতো না! যার জন্য মুখে মুখে ছড়িয়ে পরেছিলো। "চার টিকিট করতা হ্যায়, জি চাহে বইঠ কে যায়ে গা জি চাহে সো কে জায়ে গা"।  শর্মীলা বোস তার বইয়ে লিখেছেন, বাঙালিরা বিহারীদের উচ্ছেদ করেছে!  বিহারীদের মা বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে বাঙালিরা। ঢাকা ও খুলনায় নাকি বিহারীদের মেরে রক্তের বন্যা বয়ে দেয়া হয়েছে!  শর্মীলা বোসের উক্ত বইটি পড়লে যে কারো মনে হতে পারে পশ্চিম পাকিস্তানীরা যেন বাঙালি শাসকদের বিরুদ্ধেই যু্দ্ধে নেমেছিলো। বইটিতে  পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে ৩০ লাখ বাঙালির হত্যাযজ্ঞ ও তিন  লাখের অধিক বাঙালি নারীর ধর্ষনের কথাকে গাল-গল্প বলে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তার বইয়ের লেখা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী আলবদর, আল শামস্ , রাজাকারদের ভাষা  হুবহু মিলে যায়। ভারতবর্ষের একজন স্বাধীনতাকামী  মহান নেতার নাতনীর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন মিথ্যাচার যে কোন ব্যাক্তিকেই বিস্মিত করবে। তিনি নিজেও একজন ভারতীয় বাঙালি হয়ে এমন  অপপ্রচার চালাতে পারেন তা ভাবলে অবাক না হয়ে পারি না। 
কদিন আগে আরো একজন বিখ্যাত লেখিকা  সুজানা অরুন্ধতী রায়। জন্মেছেন  সিলং আাসামে এখন মেঘালয় অংশে।  তিনি অরুন্ধতী রায় বলে পরিচিত। তার বাবা বাঙালি।হিন্দু, মা দক্ষিন ভারতের  মালায়ালি  সিরিয়ান খৃষ্টান ।  তিনি বলেছেন ; "৭২  বছরে নাকি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কখনোই পাকিস্তানি জনগনের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়নি!"  তিনি এত কিছু জানেন, সারা পৃথিবী সম্পর্কে। আর জানেন না কেবল ১৯৭১ এর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গনহত্যা ও ধর্ষন সম্পর্কে! পাকিস্তান টিভিতেও পাকিস্তানী বুদ্ধিজীবীরাও মাঝে মাঝে ৭১ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গনহত্যা ও ধর্ষনের কথা তুলে ধরে থাকে। সারা পৃথিবী জানে ১৯৭১ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় কান্ড। জানেন না কেবল অরুন্ধতী রায় (?)! অরুন্ধতী রায় ঘন্টায় ঘন্টায় কাশ্মীরের জঙ্গিদের পক্ষে উকালতি করেন। কিন্তু তার জীবনে  বেলুচিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জবর দখল ও  খুন ধর্ষন নিয়ে একটি বাক্যও ব্যয় করেনি। যদিও তার দাবি তিনি পৃথিবীর সকল নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলেন। 

ইতোমধ্যে অরুন্ধতী রায় তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি হয়তো একটি বাংলা প্রবাদ ভুলে গেছেন, "কথায় হাতি পায়, কথায় হাতির পায়।" কিন্তু  এমন অনেক কথা ও কাজ রয়েছে যা ক্ষমার অযোগ্য। অরুন্ধতী রায় তেমন একটি অপরাধই করেছেন। তার বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

অরুন্ধতী রায় ও শর্মীলা বোসদের মত বুদ্ধিজীবীদের  বুদ্ধিবৃত্তিক বদমাইশি  থেকে।আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে তাদের এমন পরিকল্পিত প্রোপাগাণ্ডা একদিন বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।

 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours