vromon kahini
স্বাতী রায়, লেখিকা ও চিত্রগ্রাহক, কলকাতা:

খটখট ঝনঝন করে একটা আওয়াজ ভেসে আসছে, দুটো লেপ আর এক খানা কম্বলের ভিতর থেকে উলিকট জাম্পার ইত্যাদি যাবতীয় শীতবস্ত্র পরা ভাল্লুক সম আমি অতি কষ্টে এক ইঞ্চি ফাঁকা করে শুধু চোখ বের করে উঁকি মারলুম আওয়াজের উৎস সন্ধানে। ট্রেকারস হাটের জানলা ঝাপসা, বরফ জমে গেছে। বোঝা গেলো প্রবল হাওয়া। জানালার কোনো এক ফাঁক দিয়ে শিরশির করে ভিতরে ঢুকেও আসছে। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে টোংলু তে রাত বারোটায় তখন মাইনাস সাত ডিগ্রি ঠাণ্ডা। টয়লেট যাওয়ার নামেই তেড়ে কান্না পাচ্ছে। ও দিকে পূর্ণিমায় স্লিপিং বুদ্ধার কাত হয়ে ঘুমোনো দেখবো বলে এত কাণ্ড। গুলি মারো ঠাণ্ডা কে। সিয়াচেনে পাহারারত জওয়ানদের কথা মনে করে বাঙালী কিসে কম বলে তেড়েফুঁড়ে লেপ সরিয়ে বেরিয়েই টপাস করে ফেদার জ্যাকেট গলিয়ে নিলুম। নাক আর চোখ বাদ দিয়ে শরীরের কোনো অংশই আর দৃশ্যমান নয়। পায়ে স্নিকার গলিয়ে ক্যামেরা বাগিয়ে বেরিয়ে এলাম বাইরে। আহা, চাঁদের আলোয় ঝকঝক করছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। ক্যামেরায় হাত ছোঁয়াতেও ভুলে গেছি, মনোপড টা কাঁধে ফেলে সম্পূর্ণ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে। খেয়াল হতে ক্যামেরা চোখে ঠেকালুম, তাতে আবার গ্লাভস খুলতে হল, জাস্ট কয়েক সেকেন্ড - নাক আর আঙুলের অস্তিত্ব আর টের পাওয়া যাচ্ছে না। ছবি তো তুলবই তুলব। যা দেখলাম, তার কিছুটা তো ধরে রাখতে হবে। 

পরদিন ভোর বেলায় সূর্যোদয় দেখার ছিল। কিন্তু আগের দিন এসে এক হাত দূরের কিছু দেখা যাচ্ছিল না, এত কুয়াশা আর মেঘ। আজ কি তিনি সদয় হবেন? কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা আমার উপর চিরকাল সদয়। পাক্কা ঘন্টা খানেক শো দিলেন, মেঘের চাদরের উপর ঘুমন্ত বুদ্ধ থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে মেঘের চাদরে মুখ ঢেকে যাওয়া অবধি। প্রথম আলোয় গোলাপি চুড়া, ধীরে ধীরে সোনালী তার পর সাদা। নিচে তুলোর মত পেঁজা মেঘ। মেঘ ঘিরে আসার পর ডিমের কুসুমের মত পেলব সূর্য... আহা, বেঁচে থাক আমার দুর্বিষহ পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা, বেঁচে থাক মারাত্মক ঠান্ডা, বেঁচে থাক বিলাসবর্জিত ট্রেকার্স হাট। এখনো টোংলু - টুমলিং এ ক্যালর ব্যালর করা বটুদের পৌঁছে দেয়নি যে সব প্রতিবন্ধকতা, সঅঅঅঅঅঅঅঅব বেঁচে থাক। কাঞ্চনের মুখের উপর দাদার লুঙ্গি বা বউদির ম্যাক্সি ঝুলতে দেখার আগে আমি মরে যেতে চাই।
তার আগে- টুমলিঙের অতিথিবৎসল সুরসিকা কিন্তু গম্ভীর নীলা দি বলেছেন, পরের বছর প্রচুর রডোডেনড্রন ফুটবে, এসো কিন্তু...
স্বর্গ কোথায়?


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours