fiture
শৌভিক রায়, লেখক, কোচবিহার:  বসন্তবৌরি যেন স্নান শেষে গা মোছেনি! আমলকীর ঝিরিঝিরি পাতায় কেউ ছিটিয়েছে জল অঞ্জলি ভরে। সবুজ মাঠে জলাশয় তৈরী হয়েছে আপনাআপনি। আকাশের কালোর সাথে বৈপরীত্য রেখে সবুজের দল অদ্ভুত রঙ এনেছে। ঝকঝকে চারিদিক। মাঝেমাঝে কালো-সবজে-সাদা পাখির আনাগোনা মাঠেঘাটে। লম্বা পায়ে হেঁটে বেড়ানো আর সতর্ক চোখে খুঁজে বেড়ানো, যদি মেলে একটা দু'টো গেড়ি-গুগলি। মিলেও যায়। বৈকুণ্ঠপুর,চিলাপাতা, জলদাপাড়া বা বক্সার অরণ্যের আদিম গাছগুলোর গা দেখলেই বোঝা যায় স্নানে তাদের কি পরিতৃপ্তি! কালো হয়ে উঠেছে গা একদম। আবলুশ কালো, জল পেয়ে পেয়ে। নদীরা সব ভয়ঙ্কর সুন্দরী যেন! কি তাদের মনোহর রূপ। থৈ থৈ যৌবন উপচে পড়ে ভেজাচ্ছে চারদিক। যে দেখছে পাগল হচ্ছে সে-ই! নদীর রূপলাবণ্যে মরণ মরণ দশা মেঘ-যুবকের। মিলনের তীব্র স্পৃহায় তাই তো কেবল সে ঝরতে চায়, মিশতে চায় নদীর সাথে। তাদের মিলনে আসছে বান। ফুঁসলে ওঠা নদীকে বিদ্ধ করছে মেঘ-যুবক তার বৃষ্টি মিলনে। মিলন শেষে ভরা সুখে বয়ে চলা। 
আপাত শান্ত, কিন্তু ভেতরে ভেতরে চলবে খুনসুটি আবার কখন মিলন হবে ভেবে। লজ্জায় তাই পার ভাঙবে নদী। বেহায়া মেঘ-যুবক খলখল হেসে আবার মাতবে অভিসারে! তরাই-ডুয়ার্সে নেমেছে বৃষ্টি। বৃষ্টি গাছের পাতায়, বৃষ্টি পায়ের পাতায়। কখনো পূর্ণ উদ্যমে আকাশের আলো সাথী করে ঝরছে বৃষ্টি, কখনো টুপটাপ একা একা। কখনো ঝিরিঝিরি সে, কখনো অঝোরে। বৃষ্টির গান চারিদিকে, যেন মন্ত্রোচ্চারণ, যেন এক বোবা অবুঝ কান্না। সারারাত বৃষ্টি, সারাদিন বৃষ্টি। ঋতুমতী প্রকৃতি। প্রকৃত উর্বরা। পুরুষ-প্রকৃতির ঔরসে বীজ ধারণে প্রস্তুত সে। জন্ম দেবে কিছুদিন পর তার নিজস্ব ফসল। লালন করবে সেই ফসলে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান মানুষকে। প্রয়োজন তার তাই ঋতুমতী হবার বারবার। ঝরুক তাই বৃষ্টি। রিমঝিম ঝরুক, টুপটাপ ঝরুক, সারা দিনমান ঝরুক। বর্ষা সাথী এক সে প্রিয়া। জীবন প্রিয়া। জীবন সাথী। তাকে নিয়েই বর্ষামঙ্গল, তাকে নিয়েই বর্ষায় অবগাহন। হাত ধরে তাকে নিয়ে যাওয়া সবুজ গ্রামের ছোট্ট নীড়ের মাটির দাওয়ায়, যেখানে হাত বাড়ায় ছোট্ট শিশু বর্ষা ধরবে বলে। আর আদুরে বর্ষা সত্যি দিয়ে যায় আলতো চুমু তার ফোলা ফোলা তালুতে। প্রিয়ার সাথে পাড়ি কেবল পা ভেজানো ছোট্ট নদীতে হাত ধরাধরি করে বর্ষা মাথায়।
দে ছুট জলের মাঝে সবুজ মাঠে, হেসে গড়াগড়ি। ছলাৎছলাৎ জল, থুপথাপ জল, জলের বাদ্যে বর্ষাগান। জলই জীবন, জলই প্রাণ। বর্ষা ঝরে। আকুল বর্ষায় আনচান সব। প্রতিটা স্পন্দনে বর্ষাগীত। বর্ষার আবহে জাগে প্রাণ। বর্ষা আমার, বর্ষা তোমার। বর্ষা থাকুক গানে, বর্ষা থাকুক প্রাণে। বর্ষায় জাগুক সব। ধুয়ে যাক মলিনতা, ধুয়ে যাক কাঠিন্য। বর্ষা আসুক জীবন ভরে। বর্ষা পুরুষ হয়ে সৃষ্টি করুক প্রাণ। বর্ষা দিক ভালবাসার গান।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours