কাজল ভট্টাচার্য, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
আরও কিছু বেশি দিন বাঁচার সাধ আছে নাকি?
তাহলে লক্ষ্মী ছেলে বা মেয়ের মতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন দেখি। না, একেবারেই না। শুয়ে শুয়ে চ্যাট করা চলবে না। লগ আউট করুন দেখি ফেসবুকে থেকে।
'খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়ালো!'
কাল বরং সকাল সকাল উঠে যা করার করবেন। এখন 'ঠাকুর ঠাকুর' বলে চোখ বুজুন। তাহলে অনেকগুলো সকাল দেখতে পাবেন। আরও অনেক অনেক দিন বাঁচবেন।
বেশিদিন না বাঁচলেও চলবে?
তাহলে জেগে থাকুন। তাতে খানিকটা আয়ুক্ষয় হবে ঠিকই, কিন্তু আপনার মন যা চায় তাই করুন। একটাই তো মাত্র জীবন! ইচ্ছে হলে, রাতজাগা পেঁচাদের থেকেও অনুপ্রেরণা ধার করতে পারেন। কারণ একমাত্র ওই তো আপনার রাতজাগার সঙ্গী। তবে মনে রাখবেন, ওই লেট রাইসার পেঁচারাও কিন্তু অন্যান্য পাখিদের চেয়ে কমবেশি দশ শতাংশ সময় কম বাঁচে।
রাত অনেকের কাছেই বড় প্রিয়। কেমন যেন এক নেশা আছে কালো অন্ধকার রাতের। কিছুতেই ঘুমোতে দেয় না। শুধু দুখিনী রাধা বা বিরহী যক্ষের কথা বলছি না। অনেকেই পরম আল্হাদে, নিশুতি রাতের গন্ধ শোঁকেন। মৌতাত করেন। রাতও নাকি ফিসফাস করে।
রাত গভীর হলেই এই লেট রাইসার মানুষগুলির মাথার ভেতরে যে পোকাগুলির বাস, তা যেন কিলবিল করে ওঠে। হোয়াট চ্যাট করতে করতেই, ওপারে থাকা বন্ধু বা বান্ধবীর কথায় কোনও এক সূত্র পেয়ে যান। বাহ, এটা নিয়ে তো জমিয়ে লেখা যায় ! অথবা ফেসবুকের যে কোনও এক পোস্ট দেখে চমকে ওঠেন। নেট ঘেঁটে তো সে তাজ্জব। এমনটাও হয় নাকি !
ওই ঘিলু পোকাদের তাড়নায় কেউ বাগিয়ে কবিতা লিখতে বসে, আবার কেউ ছবি আঁকতে। ওদিকে তখন রাত দুটো বাজতে চলেছে। হাজার জনের হাজার রকমের কাজ। মিল এক জায়গাতেই। এদের প্রতিটি কাজই সৃষ্টিমুখী। তা উন্নত মানের হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। তবে আপনমনে তারা সৃষ্টির খেলায় মেতে ওঠেন। এমনটাই বলছেন ইউনিভার্সিটি অফ মাদ্রিদের সমীক্ষকরা।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জগতের সৃষ্টিশীল কাজে এগিয়ে এই লেট রাইসাররাই। দেরিতে ঘুমোয়, তাই ওঠেও দেরিতে। সোজা সরল হিসাব। মানসিকতায় একদম তরতাজা। চিরাচরিত রাস্তায় এগনো এঁদের ধাঁচে নেই। সর্বদা নতুনের সন্ধান। প্রোগ্রেসিভ। তাই ঝকঝকে তকতকে, স্মার্ট। এই রাতজাগা মানুষগুলোই নতুন পথের সন্ধান দেয় সমাজকে।
তারারাও জাগতে জাগতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। বিশ্ব- ব্রহ্মাণ্ডের নিয়মে বাঁধা তারা, নীহারিকা, জগত সংসারের সবকিছু। ব্যতিক্রম একমাত্র মানুষ। আপনিই পারেন আপনার 'বায়োলজিক্যাল ক্লক'কে, আপনার মর্জি মতো চালাতে। এই ক্ষমতা জীবকূলের আর কারও নেই।

'ঘুমায়ে পড়েছে ধরা
সখী ঘুমায় চন্দ্রতারা!'
দিকবালারা ঘুমিয়ে পড়লেও, আপনি তখনও নিদ্রাহীন। আপনি তখনও ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে ক্যানভাসের দিকে। একটু একটু করে রূপ ধরা দিচ্ছে রেখা আর বর্ণের সমাহারে। আপ্লুত আপনি। মজে গেছেন আপনার রূপের দুনিয়ায়। আবার শব্দের মায়াজালেও হতে পারেন বুঁদ। রাতের নিঃসঙ্গতা এঁদের মনসংযোগ বাড়ায়। মনকে বিক্ষিপ্ত হতে দেয় না। সবমিলিয়ে মেধার বহিঃপ্রকাশ। সমীক্ষকদের 'ইনডাকটিভ রিজনিং টেস্টে' এঁরাই এগিয়ে।
একসময় ক্লান্তি ভর করে। চোখ যায় ঘড়ির দিকে। রাত শেষ হতে চললো। আরেকটা সিগারেট ধরান। ফোঁকা শেষ হলে, বাথরুম ঘুরে এসেই সোজা বিছানায়। সে রাতের মতো কাজ শেষ। জীবন থেকে সাময়িক অবসর।
লেট রাইসারদের কাছে রাত জাগার জন্য ব্যাপক রসদ মজুত। কিন্তু সকাল সকাল ওঠার মতো তেমন কোনও কারণ থাকে না।
'আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজ!'
এই নীতিকথা মেনে চলা মানুষের সংখ্যা আজও কম না। পরীক্ষকদের মতে, এঁরা সাবধানী জনগণ। পূর্বপুরুষের চেনা ছকে এগোতেই এঁরা ভালবাসেন। কোনও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন না। রাত দশটা বাজতে না বাজতেই বিছানায় যান। আবার ভোর পাঁচটা, ছ'টার মধ্যে বিছানা ছেড়ে চা বা কফি বানিয়ে ফেলেন। তারপরেই জিমে ছোটা। অথবা প্রাতঃভ্রমণে বেরনো। এদের কাজের বহরটাও বেশি।
কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি, ঘুমাতে গিয়ে জীবনের কতটা সময় বরবাদ করে ফেলেন ? রাত দশটা থেকে সকাল ছ'টা। ঝাড়া আট ঘণ্টা। মানে একদিনের তিন ভাগের এক ভাগ। ষাট বছরের আয়ুতে, সর্বসাকূল্যে কুড়ি বছর কেটে যায় শুধুই ঘুমিয়ে। হিসেবটা দেখে চমকে গেলেন নাতো?
রাতজাগা পেঁচা আর সাতসকালে উঠে পড়া পাখিদের নিয়ে এক বেশ মজার গবেষণা করা হয়। দেখা যায় তারা যখন আলাদা আলাদা সময়ে ঘুম থেকে ওঠে, তখন তাদের মগজ একইরকম চনমনে। সতেজ। কিন্তু পার্থক্য ধরা পড়ে ঘণ্টা দশেক পর। পাখিদের মগজ তখন অনেক শ্লথ। ঢিলেঢালা। বিশেষ করে মগজের যে অংশ মনসংযোগের সহায়, তা অনেকটাই নিস্তেজ। ঠিক একই জিনিস দেখা যায় মানুষের মধ্যেও।
লেট রাইসাররা মিস করছে সকাল, আর্লি রাইসাররা রাত। দু'পক্ষের কাছেই যুক্তির পাহাড়। এই দুই পক্ষের বিয়াল্লিশজনের স্যালিভা সংগ্রহ করেন ওয়েস্টমিনস্টারের গবেষকরা। দিনের বিভিন্ন সময়ে আটবার ওই সংগ্রহের কাজ চলে। পরপর দু'দিন নমুনা সংগ্রহের পর, তার বিশ্লষণ বসেন গবেষকরা। দেখা যায়, যারা সকালে ওঠে তাদের স্যালিভায় করিস্টল- এর মাত্রা বেশি।
এই করিস্টল জিনিসটা কী ?
করিস্টল এক বিশেষ ধরনের হরমোন। যার মূল কাজ আমাদের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা। করিস্টল বাড়া মানেই উদ্বেগ বাড়া। দুশ্চিন্তায় ঘায়েল। এর সঙ্গে যোগ হয় পেশিব্যথা, মাথাধরা, গা ম্যাজম্যাজ করার মতো ঘ্যানঘেনে কিছু পাতি উপসর্গ। এতসব কিছু হওয়ার পর আর কারই বা মেজাজ শরিফ থাকে? মুডটাই যায় বিগড়ে। পান থেকে চুন খসলেই খিচখিচ। রাগে অগ্নিশর্মা।
কিন্তু কেন? বড়ো সন্দেহবাদী বিজ্ঞান। কোনও কিছুই সহজে মেনে নিতে তার ভীষণ আপত্তি। একের পর আরেক প্রশ্ন। ফের গবেষণা। ফের সমীক্ষা। দেখা গেল, যারা সাতসকালে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন, তাঁদের কাজের বহরটাও বেশি। সবকাজ যে মসৃণ ভাবে হয় এমনটাও নয়। তাই কাজ বেশি মানে ঝামেলাও বেশি। টানটান উত্তেজনা। উদ্বেগে ভরা দিন। দিনশেষে শরীর, মনে ভর করে একরাশ অবসাদ। আসে ঝিমুনি।

তবে মনস্তত্ত্ববিদরা সাবধান করেছেন লেট রাইসারদেরও। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে দেখা দিতে পারে মানসিক সমস্যা। শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিও থাকে। সেটা ওই 'আর্লি টু বেড'দের চেয়ে কম তো নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেশি।
তবে সান্ত্বনা একটাই। এই সকালে ওঠা ব্যস্তসমস্ত পাবলিকের চেয়ে, অনেক স্বচ্ছন্দ জীবন লেট রাইসারদের। কাজের চাপ তারা সেভাবে নেন না। সৃষ্টির নেশায় মত্ত। জীবন যখন, তখন দুঃখ কষ্ট থাকবেই। আবার সৃষ্টিশীল মানুষরা আর পাঁচজনের চাইতে একটু বেশি অনুভূতিশীল। একটুতেই ভেঙে পড়া। আবার উত্থানেও সময় লাগে না। রাতে ঘুমোতে যায় এক তৃপ্তির স্বাদ নিয়ে। আবার ঘুম ভাঙে এক নতুন উদ্যমে। তাতে কয়েকটা বছরের আয়ু নাহয় কমেই গেল, ক্ষতি কী ?
মনে আছে তো 'আনন্দ' সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়লগ ? ক্যানসারের রোগী রাজেশ খান্না, ডাক্তার অমিতাভ বচ্চনকে কী বলেছিল,
"বাবুমশায় জিন্দগি লম্বা নেহি, বড়ি হোনে চাহিয়ে!"
আরও কিছু বেশি দিন বাঁচার সাধ আছে নাকি?
তাহলে লক্ষ্মী ছেলে বা মেয়ের মতো তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন দেখি। না, একেবারেই না। শুয়ে শুয়ে চ্যাট করা চলবে না। লগ আউট করুন দেখি ফেসবুকে থেকে।
'খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়ালো!'
কাল বরং সকাল সকাল উঠে যা করার করবেন। এখন 'ঠাকুর ঠাকুর' বলে চোখ বুজুন। তাহলে অনেকগুলো সকাল দেখতে পাবেন। আরও অনেক অনেক দিন বাঁচবেন।
বেশিদিন না বাঁচলেও চলবে?
তাহলে জেগে থাকুন। তাতে খানিকটা আয়ুক্ষয় হবে ঠিকই, কিন্তু আপনার মন যা চায় তাই করুন। একটাই তো মাত্র জীবন! ইচ্ছে হলে, রাতজাগা পেঁচাদের থেকেও অনুপ্রেরণা ধার করতে পারেন। কারণ একমাত্র ওই তো আপনার রাতজাগার সঙ্গী। তবে মনে রাখবেন, ওই লেট রাইসার পেঁচারাও কিন্তু অন্যান্য পাখিদের চেয়ে কমবেশি দশ শতাংশ সময় কম বাঁচে।
রাত অনেকের কাছেই বড় প্রিয়। কেমন যেন এক নেশা আছে কালো অন্ধকার রাতের। কিছুতেই ঘুমোতে দেয় না। শুধু দুখিনী রাধা বা বিরহী যক্ষের কথা বলছি না। অনেকেই পরম আল্হাদে, নিশুতি রাতের গন্ধ শোঁকেন। মৌতাত করেন। রাতও নাকি ফিসফাস করে।
রাত গভীর হলেই এই লেট রাইসার মানুষগুলির মাথার ভেতরে যে পোকাগুলির বাস, তা যেন কিলবিল করে ওঠে। হোয়াট চ্যাট করতে করতেই, ওপারে থাকা বন্ধু বা বান্ধবীর কথায় কোনও এক সূত্র পেয়ে যান। বাহ, এটা নিয়ে তো জমিয়ে লেখা যায় ! অথবা ফেসবুকের যে কোনও এক পোস্ট দেখে চমকে ওঠেন। নেট ঘেঁটে তো সে তাজ্জব। এমনটাও হয় নাকি !
ওই ঘিলু পোকাদের তাড়নায় কেউ বাগিয়ে কবিতা লিখতে বসে, আবার কেউ ছবি আঁকতে। ওদিকে তখন রাত দুটো বাজতে চলেছে। হাজার জনের হাজার রকমের কাজ। মিল এক জায়গাতেই। এদের প্রতিটি কাজই সৃষ্টিমুখী। তা উন্নত মানের হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে। তবে আপনমনে তারা সৃষ্টির খেলায় মেতে ওঠেন। এমনটাই বলছেন ইউনিভার্সিটি অফ মাদ্রিদের সমীক্ষকরা।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, জগতের সৃষ্টিশীল কাজে এগিয়ে এই লেট রাইসাররাই। দেরিতে ঘুমোয়, তাই ওঠেও দেরিতে। সোজা সরল হিসাব। মানসিকতায় একদম তরতাজা। চিরাচরিত রাস্তায় এগনো এঁদের ধাঁচে নেই। সর্বদা নতুনের সন্ধান। প্রোগ্রেসিভ। তাই ঝকঝকে তকতকে, স্মার্ট। এই রাতজাগা মানুষগুলোই নতুন পথের সন্ধান দেয় সমাজকে।
তারারাও জাগতে জাগতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। বিশ্ব- ব্রহ্মাণ্ডের নিয়মে বাঁধা তারা, নীহারিকা, জগত সংসারের সবকিছু। ব্যতিক্রম একমাত্র মানুষ। আপনিই পারেন আপনার 'বায়োলজিক্যাল ক্লক'কে, আপনার মর্জি মতো চালাতে। এই ক্ষমতা জীবকূলের আর কারও নেই।

'ঘুমায়ে পড়েছে ধরা
সখী ঘুমায় চন্দ্রতারা!'
দিকবালারা ঘুমিয়ে পড়লেও, আপনি তখনও নিদ্রাহীন। আপনি তখনও ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে ক্যানভাসের দিকে। একটু একটু করে রূপ ধরা দিচ্ছে রেখা আর বর্ণের সমাহারে। আপ্লুত আপনি। মজে গেছেন আপনার রূপের দুনিয়ায়। আবার শব্দের মায়াজালেও হতে পারেন বুঁদ। রাতের নিঃসঙ্গতা এঁদের মনসংযোগ বাড়ায়। মনকে বিক্ষিপ্ত হতে দেয় না। সবমিলিয়ে মেধার বহিঃপ্রকাশ। সমীক্ষকদের 'ইনডাকটিভ রিজনিং টেস্টে' এঁরাই এগিয়ে।
একসময় ক্লান্তি ভর করে। চোখ যায় ঘড়ির দিকে। রাত শেষ হতে চললো। আরেকটা সিগারেট ধরান। ফোঁকা শেষ হলে, বাথরুম ঘুরে এসেই সোজা বিছানায়। সে রাতের মতো কাজ শেষ। জীবন থেকে সাময়িক অবসর।
লেট রাইসারদের কাছে রাত জাগার জন্য ব্যাপক রসদ মজুত। কিন্তু সকাল সকাল ওঠার মতো তেমন কোনও কারণ থাকে না।
'আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইজ!'
এই নীতিকথা মেনে চলা মানুষের সংখ্যা আজও কম না। পরীক্ষকদের মতে, এঁরা সাবধানী জনগণ। পূর্বপুরুষের চেনা ছকে এগোতেই এঁরা ভালবাসেন। কোনও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন না। রাত দশটা বাজতে না বাজতেই বিছানায় যান। আবার ভোর পাঁচটা, ছ'টার মধ্যে বিছানা ছেড়ে চা বা কফি বানিয়ে ফেলেন। তারপরেই জিমে ছোটা। অথবা প্রাতঃভ্রমণে বেরনো। এদের কাজের বহরটাও বেশি।
কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি, ঘুমাতে গিয়ে জীবনের কতটা সময় বরবাদ করে ফেলেন ? রাত দশটা থেকে সকাল ছ'টা। ঝাড়া আট ঘণ্টা। মানে একদিনের তিন ভাগের এক ভাগ। ষাট বছরের আয়ুতে, সর্বসাকূল্যে কুড়ি বছর কেটে যায় শুধুই ঘুমিয়ে। হিসেবটা দেখে চমকে গেলেন নাতো?
রাতজাগা পেঁচা আর সাতসকালে উঠে পড়া পাখিদের নিয়ে এক বেশ মজার গবেষণা করা হয়। দেখা যায় তারা যখন আলাদা আলাদা সময়ে ঘুম থেকে ওঠে, তখন তাদের মগজ একইরকম চনমনে। সতেজ। কিন্তু পার্থক্য ধরা পড়ে ঘণ্টা দশেক পর। পাখিদের মগজ তখন অনেক শ্লথ। ঢিলেঢালা। বিশেষ করে মগজের যে অংশ মনসংযোগের সহায়, তা অনেকটাই নিস্তেজ। ঠিক একই জিনিস দেখা যায় মানুষের মধ্যেও।
লেট রাইসাররা মিস করছে সকাল, আর্লি রাইসাররা রাত। দু'পক্ষের কাছেই যুক্তির পাহাড়। এই দুই পক্ষের বিয়াল্লিশজনের স্যালিভা সংগ্রহ করেন ওয়েস্টমিনস্টারের গবেষকরা। দিনের বিভিন্ন সময়ে আটবার ওই সংগ্রহের কাজ চলে। পরপর দু'দিন নমুনা সংগ্রহের পর, তার বিশ্লষণ বসেন গবেষকরা। দেখা যায়, যারা সকালে ওঠে তাদের স্যালিভায় করিস্টল- এর মাত্রা বেশি।
এই করিস্টল জিনিসটা কী ?
করিস্টল এক বিশেষ ধরনের হরমোন। যার মূল কাজ আমাদের উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা। করিস্টল বাড়া মানেই উদ্বেগ বাড়া। দুশ্চিন্তায় ঘায়েল। এর সঙ্গে যোগ হয় পেশিব্যথা, মাথাধরা, গা ম্যাজম্যাজ করার মতো ঘ্যানঘেনে কিছু পাতি উপসর্গ। এতসব কিছু হওয়ার পর আর কারই বা মেজাজ শরিফ থাকে? মুডটাই যায় বিগড়ে। পান থেকে চুন খসলেই খিচখিচ। রাগে অগ্নিশর্মা।
কিন্তু কেন? বড়ো সন্দেহবাদী বিজ্ঞান। কোনও কিছুই সহজে মেনে নিতে তার ভীষণ আপত্তি। একের পর আরেক প্রশ্ন। ফের গবেষণা। ফের সমীক্ষা। দেখা গেল, যারা সাতসকালে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েন, তাঁদের কাজের বহরটাও বেশি। সবকাজ যে মসৃণ ভাবে হয় এমনটাও নয়। তাই কাজ বেশি মানে ঝামেলাও বেশি। টানটান উত্তেজনা। উদ্বেগে ভরা দিন। দিনশেষে শরীর, মনে ভর করে একরাশ অবসাদ। আসে ঝিমুনি।

তবে মনস্তত্ত্ববিদরা সাবধান করেছেন লেট রাইসারদেরও। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে দেখা দিতে পারে মানসিক সমস্যা। শারীরিক সমস্যার ঝুঁকিও থাকে। সেটা ওই 'আর্লি টু বেড'দের চেয়ে কম তো নয়ই, বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেশি।
তবে সান্ত্বনা একটাই। এই সকালে ওঠা ব্যস্তসমস্ত পাবলিকের চেয়ে, অনেক স্বচ্ছন্দ জীবন লেট রাইসারদের। কাজের চাপ তারা সেভাবে নেন না। সৃষ্টির নেশায় মত্ত। জীবন যখন, তখন দুঃখ কষ্ট থাকবেই। আবার সৃষ্টিশীল মানুষরা আর পাঁচজনের চাইতে একটু বেশি অনুভূতিশীল। একটুতেই ভেঙে পড়া। আবার উত্থানেও সময় লাগে না। রাতে ঘুমোতে যায় এক তৃপ্তির স্বাদ নিয়ে। আবার ঘুম ভাঙে এক নতুন উদ্যমে। তাতে কয়েকটা বছরের আয়ু নাহয় কমেই গেল, ক্ষতি কী ?
মনে আছে তো 'আনন্দ' সিনেমার সেই বিখ্যাত ডায়লগ ? ক্যানসারের রোগী রাজেশ খান্না, ডাক্তার অমিতাভ বচ্চনকে কী বলেছিল,
"বাবুমশায় জিন্দগি লম্বা নেহি, বড়ি হোনে চাহিয়ে!"
Post A Comment:
0 comments so far,add yours