মুজতবা আল মামুন, সাংবাদিক, কলকাতা : লোকসানের পালা চুকিয়ে, এখন লাভে চলছে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে কর্মীরাও আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, লাভের জায়গা পাকা করতে। ঋণ শোধ করে নবরত্ন খেতাব আদায় করতে। ঠিক তখন কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, বেঙ্গল কেমিক্যালসের সরকারি শেয়ার বিক্রি করে দেবে। অর্থাৎ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত এই শতাব্দী প্রাচীন সংস্থাকে বিলগ্নিকরণ করা হবে। পাশাপাশি সংস্থাকে রুগ্ন করতে, অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করা চলছে। শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের জিজ্ঞাসা, কয়েক দশকের দুরাবস্থা কাটিয়ে সংস্থা যখন লাভে চলছে, তখন কেন তা বেসরকারিকরণ করা হবে ? সেই ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সংগঠন গত শুক্রবার ২ আগস্ট বিক্ষোভ সমাবেশ করলো সংস্থার দুই কারখানার গেটে ও কাঁকুড়গাছিতে। কর্মীদের তরফ থেকে জানানো হয়, আমাদের বেতন হয় লাভের টাকা থেকে। কেন্দ্রকে ভর্তুকি দিতে হয় না। নতুন করে কোনও ঋণ নিতেও হচ্ছে না। পূর্বের ঋণ শোধ করা চলছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যালস দারুণ চলছে। তারপরও কেন মোদি সরকার তা বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছে ? কর্মীদের ক্ষোভ, লাভ বাড়াতে আরও লোক নেওয়া জরুরী। আমাদের সংস্থার জমি এবং পরিকাঠামো রয়েছে। সেগুলো কাজে লাগিয়ে সংস্থাকে আরও বাড়ানো যায়। কিন্তু তার বদলে অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। যারা দুর্দিনে দিবারাত্র পরিশ্রম করে সংস্থাকে ভাল জায়গায় তুলে আনতে, স্থায়ী কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছিলেন, আজ তাদের পুরস্কৃত করার বদলে ছাঁটাই করা চলছে, এসব মানা যায় না। সরকার তার সিদ্ধান্ত না বদলালে, আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার কথা জানালেন কর্মীরা। সহমর্মী সংস্থাগুলোরও তাতে সায় দিল। বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায়, ইংরেজদের আঘাত করতে ভারতবাসীযেমন বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক ছিল, তেমনই নিজস্ব পণ্য উৎপাদন করার তাগিদও অনুভব করেছিলেন একদল বাঙালি। তাতে কিছু মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন কল-কারখানা গড়তে ৷
একই সঙ্গে চাকুরে বাঙালির অপবাদ ঘোচাতেও চেয়েছিলেন। সেই ভাবনা থেকে স্বদেশি আন্দোলনের প্রাক্কালেই, ব্রিটিশ সরকারের তাচ্ছিল্য আর দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের অসহযোগিতা উপেক্ষা করেই, ব্যবসায় নেমেছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ৷ ফলে এই বিজ্ঞানীর উদ্যোগে ১৯০১ সালে ২৩,৩৭১ টাকা মূলধন নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যালস অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ওয়ার্কস লিমিটেড নামে এক সংস্থা আত্মপ্রকাশ করেছিল। মাত্র পরেরো বছরে সেই মূলধন চারলক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায় ৷
সেদিন বাঙালির শিল্পবিমুখতা কাটাতে এগিয়ে এসেছিলেন খোদ আচার্য। সেই বাঙালির ভালবাসা জড়িত, আদরের বেঙ্গল কেমিক্যালস অবাঙালি হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তা রুখতেই হবে। রাজ্যের সুধীজনের অভিযোগ, কেন্দ্রের বর্তমান সরকার বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর।
তার জায়গায় অবাঙালি সংস্কৃতি আমদানি করছে। তারা তো চাইবেই, বাঙালির লাভজনক উদ্যোগ কেড়ে নিতে। গত শুক্রবার কর্মী ও সহযোগী সংগঠনগুলো সঠিক ভাবেই যে কোনও মূল্যে তা রোখার শপথ নিল।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours