fiture
অর্ঘ্য রায় চৌধুরী, লেখক ও প্রকৃতিপ্রেমী, উত্তর ২৪ পরগনা: আমাদের দেশে এমন কোন জঙ্গল গ্রামতীর্থস্থান বা শহর নেই যেখানে লেঙ্গুদেরদেখা পাওয়া যায়না। সবাই একই হলেওজঙ্গলে এবং শহরে দু-জায়গায় এদেরস্বভাব এক্কেবারেই আলাদা। আজ কথাবলব এই লেঙ্গুরদের নিয়ে। ভারতেলেঙ্গুরদের প্রায় ১১টি প্রজাতি আছে। তবেতাদের মধ্যে দেশের সব অঞ্চলে যেপ্রজাতিটি পাওয়া যায় সেটি হল Grey Langur। এদের অন্যনাম হল Sacred langur বা Hanuman langur। সংস্কৃতশব্দ 'লঙ্গুল' থেকে লঙ্গুর শব্দের উৎপত্তি।বাংলায় সাধারণত মুখপোড়া হনুমান বালেঙ্গুর বলা হয়।হিন্দিতে লঙ্গুর। Langur বাLangoor শব্দটি ইংরেজিতেও ব্যবহারকরা হয়। Grey langur দের দুই ভাগেবিভক্ত করা হয় - Northern plains grey langur (Semnopithecus entellus)এবং Southern plains grey langur (Semnopithecusdussumieri)।ভৌগোলিক অবস্থান ছাড়া এদের মধ্যেতেমন কোন পার্থক্য নেই। 
প্রথমটির বিস্তৃতিগাঙ্গেয় অববাহিকা (Gangetic plain)তাপ্তি-কৃষ্ণা অঞ্চল, অসম এবংবাংলাদেশে। দ্বিতীয়টির বিস্তৃতি রাজস্থান,গুজরাট, মধ্যভারত থেকে পুরোতামিলনাড়ুঅবধি। এছাড়া নেপাল, তরাই অঞ্চলউত্তরাখন্ড-হিমাচলপ্রদেশ, ভূটান, তিব্বতএবং আফগানিস্তান আর পাকিস্তানের কিছুঅংশে দেখামেলে Nepal grey langur (Semnopithecusschistaceus) এবংজম্মু-কাশ্মীর এবং চাম্বা উপত্যকায় দেখামেলে Kashmir grey langur (Semnopithecusajax) এর। এরাPrimate পরিবারের সদস্য এবং প্রায় সারাভারতীয় উপমহাদেশে (Indian subcontinent) এদের দেখা মেলে। শহরেএরা হাতের কাছে যা পায় তাই খায়, সে চুরিকরেই হোক বা ছিনিয়ে নিয়েই হোক,চিনেবাদাম থেকে শুরু করে আইসক্রিমপর্যন্ত। একথা মনে হয়না নতুন করে বলতেহবে। বহুমন্দিরে বা তীর্থ স্থানে দর্শনার্থী /তীর্থ যাত্রীরা এদের বাদাম, চানা বাকলাদিয়ে থাকে। এছাড়া চটি, জুতো আর টুপিচুরি করতেও এরা ওস্তাদ। শহর ছেড়ে যদিজঙ্গলে আসা হয় তাহলে এদের স্বভাবএকেবারেই আলাদা। এরা শান্ত এবংচুপচাপ থাকে। সাধারণত গাছের কচিপাতা, ফল আর ফুল খায়। হরিণরা যখনখাবারের সন্ধানে বেরোয় তখন এরা কচিপাতা মাটিতে ফেলে দেয় যাতে হরিণদেরসুবিধা হয়। আমি বহু জায়গায় দেখেছিলেঙ্গুরা হরিণদের সাথেই জল খেতে যায়এবং হরিণদের জল খাওয়া হলে তবেইজল খায়। বাঘ বা চিতাবাঘের উপস্থিতিটের পেলে এরা জঙ্গলের অন্যান্য প্রাণীদেরalarm call দিয়ে সাবধান করে দেয়।এরকম খুব কমই শোনা বা দেখা গেছে যেবাঘ বা চিতা বাঘ লেঙ্গুরকে মেরেছে ওদেরউপস্থিতি টেরপেলেই ওরা গাছে উঠে যায়।লেঙ্গুররা দলবদ্ধ ভাবে থাকে এবং হরিণ বাগাউরদের (Indian bison) মতই ওদেরওদলের একজন মুখ্য বা পান্ডা থাকে। শিশুরাবড় না হওয়া পর্যন্ত মায়ের শরীরের সাথেইলেগে থাকে। বহু জায়গায় লেঙ্গুরদেরপবিত্র বলা হয়। এদের সমৃদ্ধির প্রতীকওধরা হয়। অনেকেই তাই লেঙ্গুর দেখলেনমস্কার করে এবং ওদের বিরক্ত করেনা।বহু জায়গায় লেঙ্গুরদের জন্য পবিত্র বন(sacred grove) তৈরি করা হয়েছে।উত্তরভারতে পূজিত দুর্গার এক রুপশেরাওয়ালি মায়ের সঙ্গে লঙ্গুর দেবতা বালঙ্গুর বীরকে দেখা যায়। 
একটি প্রচলিতগল্প অনুযায়ী বৈষ্ণোদেবীর সন্ধানে যখনভৈরব তান্ত্রিক গর্ভগুহায় এসে পৌঁছালতখন লঙ্গুর বীর মা কে রক্ষা করেছিলেন।আজও বৈষ্ণোদেবীর গুহায় গেলে লঙ্গুরবীরের মন্দির দেখাযায়।আগে কোলকাতারবহু জায়গায় লেঙ্গুর বা মুখ পোড়া হনুমানদেখা যেত। যেমন গঙ্গার ধারে বিভিন্ন গাছেবা মন্দিরে। এখন এদের দেখা খুবই কমপাওয়া যায়। এখন গঙ্গার ধারে গাছ-গাছালি নেই বললেই চলে আর প্রগতিশীলএই শহর থেকে চড়াই, গন্ধগোকুল,শেয়ালের মত আস্তে আস্তে লেঙ্গুররাও চলেযাচ্ছে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. লেখাগুলি ভিন্ন স্বাদের। পড়তে বেশ লাগে। তবে বানান গত কিছু ত্রুটি আছে। কখনো কখনো দুটি আলাদা শব্দ একসাথে জুড়ে গিয়েছে। এবিষয়ে সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

    ReplyDelete