গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, সিনিয়র জার্নালিস্ট, কলকাতা:
না, গরু নয়। ছাগল। এবার ছাগলদের কথাও ভাবতে হবে রাজনীতিকদের, বিশেষত কেন্দ্রের শাসক দলকে।
গরু মারা নিষিদ্ধ হয়েছে ঠিকই, তবে খাসীর মাংস তো নিষিদ্ধ নয়। ছাগল বেঁচে আছে বলেই না বাঙালীও রসেবশে আছে।
রবিবারের
দ্বিপ্রাহরিক আহারে বাঙালীর মন এখনও মজে আছে সেই আদি এবং অকৃত্রিম খাসীর
মাংসের বাটিতে। খাসীর মাংসে এখনও কারোর রক্তচক্ষু পড়েনি। শুধু মাত্র ছাগল
হয়ে জন্মাবার অপরাধেই কি তাদের এত হেনস্থা?
বিজ্ঞানীরা
বলছেন, যে ছাগলকূলকে এতদিন ধরে মানুষ অবহেলার চোখে দেখে এসেছে, সেই ছাগলের
দলেরও ঘাড়ের ওপর একটা করে মাথা আছে। মাথা আছে শুধু নয়, সে মাথা দিয়ে তারা
নাকি ভাবনাচিন্তা করতে পারে। আর একটু খোলসা করে বলা যাক। তাদের মাথায় যত
দুর্ভাবনা বা দুশ্চিন্তা ভিড় জমাচ্ছে তা তারা নিজেদের মা, মাসি, চাচীদের
কাছে মন খুলে জানাতে পারে। বোঝো কাণ্ড!
ছাগলদের
নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মাস কয়েক
আগে প্রাণী বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা ফ্রন্টিয়ারস ইন জুয়োলজিতে প্রকাশিত হয়েছে
এক দীর্ঘ সমীক্ষার ফলাফল। বিজ্ঞানীরা ছাগলদের কাণ্ডকারখানা দেখে রীতিমতো
বিস্মিত। অজকূলের আচার, আচরণ, ব্যবহার দেখে, তাদের পরীক্ষা করে, রীতিমতো
অঙ্ক কষে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এই মনুষ্যেতর এই জীবটিকে আর
হেলাফেলা করা যাবে না। তাদের নিজস্ব বাসস্থান থেকে বহু দূরে শঙ্কার কারণ
ঘটলে বা বাড়ি হারিয়ে ফেললে তারা সে কথা গলার ডাকে ভিন্নতা এনে অন্যদের
জানিয়ে দিতে পারে। আবার বাড়ি খুঁজে পেলে সে আনন্দের কথাও তাদের গলার শব্দে
ধরা পড়ে।
বাড়ি হারালে তারা
শঙ্কিত হয়ে পড়ে, বাড়ি খুঁজে পেলে মনে আনন্দ হয়। ভাব বিনিময়ে তারা যে
স্বচ্ছন্দ তা বুঝে গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের অনুভূতির কথা অজকূলের অন্য
সদস্যেরা বুঝতে পারলেও আমজনতার পক্ষে তা বোঝা অবশ্য সম্ভব ছিল না, অবশেষে
বিজ্ঞানীরা তাদের মনের কথাটি টেনে বাইরে এনেছেন। ছাগলেরাও এতদিনে বুঝে
গিয়েছে, মনের কথাটি আর রবে না গোপনে। মনের কথার সঙ্গে তাদের ড্যাবডেবে
চোখেও যে ভাষা আছে, তাও আর অজানা নেই।
যখন
প্রাণ খুলে মাটিতে মুখ গুঁজে সে ঘাস চিবোতে চায় তখনও তার প্রাণ চায় চক্ষু
না চায়। মানে তাদের চোখ থাকে ওপরে। কী করে? সেটাই তো রহস্য। তাদেরও তো
বাঁচতে হবে। চোখ সে সময় হয়ে যায় আনুভূমিক। ঘাস খাচ্ছে ঠিকই, চোখ আছে ওপরে।
যদি কেউ থাবা বাড়িয়ে আসে তাহলে সে যাতে পগার পার হতে পারে, সে জন্য এই
ব্যবস্থা। আর পালে বাঘ পড়লে সে এমন ডাক ছাড়বে, যার মধ্যে পোরা থাকে তার
শঙ্কার কথাগুলি। অজকূলের একটি সদস্য জানতে পারলেই অন্যেরা জেনে যায়, আর
দেরি নয়, এবার পালাও।
তাদের
দুর্ভাগ্য, বন্য প্রাণীর হাত থেকে বাঁচতে পারলেও তার রক্ষাকর্তা যে
বাড়িতেই ছুরি উঁচিয়ে বসে আছে, সে কথা এখনও তাদের জানা নেই। তার জাতভাই
মোদী, যোগী, শাহ ইত্যাদির দৌলতে মনুষ্যকূলের মাতৃস্থানীয় বলে ঘোষিত হলেও সে
তো মাতৃশ্বসাস্থানীয়ও হতে পারেনি। অতএব, তার কপাল পুড়ছে, এবং পুড়বে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours