শামা আরজু, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:
প্রথম
শ্রেণির ক্লাস টিচার জানালো, ময়না প্রায়ই বিদ্যালয়ে আসে না। কারণটা
জানতাম ক্লাসে গিয়েই দিলাম ঝাড়ি। তবে মাথায় রাখি ও শিশু।
এই মেয়ে প্রতিটা দিন তুমি দেরীতে স্কুলে আসো,পেয়েছো কী! একদম নাম কেটে বের করে দেবো।
তারপরও দেরী।
আবারও দেরী।
এই মেয়ে তোর মাকে কাল নিয়ে আসবি!
তুমি থেকে তুই এ নেমেও লাভ নেই।ওর মা আর আসে না।ওদের বাড়ীতে গিয়েও পাইনি ওর মাকে।প্রতিবেশীদের কাছেই শুনলাম সব।
কেন
যে আমার অমন শখের অসুখ হলো,বুঝি না।কতো কতো সুখী আমি!তবু ডাক্তার বলেন
আমার নাকি বিষণ্ণতা, তাও আবার বেশি মাত্রার। ডাক্তার মনে হয় এই আমলে
চাকুরী পেয়েছেন। প্রশ্নফাঁস।
মেয়েটির
নাম ময়না।পাখির নামে নাম।কিন্তু এই পাখি বন্দী। দারিদ্র্যের কাছে বন্দী।
ময়নার মা আার বাবার বিয়ে হয়েছিলো পছন্দ করেই।বিয়ের চার বছরের মাথায় বিধবা
হলেন।যে বয়সে বিধবা হলেন তার চেয়ে বেশি বয়সে আজকাল শহরের মেয়েরা বিয়েই
করেনা।ময়নার বাবা মারা যাবার পর থেকেই ময়নার মা অসুস্থ হয়ে গেলো।পুরো
অস্বাভাবিকই হয়ে যায় সময় সময়।ওষুধ খেলে একটু ভালো থাকে কিন্তুু ওষুধ পাবে
কই! ভাত যাদের নেই তাদের আবার ওষুধ?
ময়না ভোরে উঠে
পাশের বাড়িতে কাজে চলে যায়। একটা পরোটা আর এক কাপ চা। এরপর স্কুল। বারোটা
পর্যন্ত। আবার কাজ। বিনিময়ে একথালা ভাত,যা দিয়ে ময়নারই পেট ভরবে না। সেই
ভাতই ওরা মা মেয়ে ভাগ করে পেটে গলিয়ে দেয়।তারপর আবার কাজ। সন্ধ্যা
পর্যন্ত।মালিকের দয়ার শরীর তাই সন্ধ্যার আগেই একথালা ভাত দিয়ে ছুটি দিয়ে
দেয়।সেইরকম একথালা ভাত!যা দিয়ে একজনের পেটই পুরে না।সেই ভাতই ওরা মা মেয়ে
ভাগ করে পেটে গলিয়ে দেয়।তারপর আবার কাজ।
আজই এক বোন বলছিলো বই কেনা আমাদের জন্য বিলাসিতা মাত্র। অস্বীকার করি কী করে!
ময়নার
কাছে যখন কথাগুলি শুনছিলাম, তখন অবাক হয়ে মনে করলাম , মাত্র কয়েকটা দিন
আগেই তো বাংলাদেশের একটা নামকরা চ্যানেলে অভিনেত্রী মীম এর বাড়ি দেখিয়ে
তাঁর শিল্পবোধের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছিলো। ময়নাদের দেখানো হয় না কেন! ওরা কী
ডিজিটাল সমাজের আবর্জনা? মিডিয়া লাশ খোঁজে নিউজের জন্য।লাশ যতো বেশী
পত্রিকার কাটতি ততো বেশি।
এমন একটা ময়নার জীবন কিংবা মৃত্যুতে কারোই কিছু যায় আসে না।
না মিডিয়ার, না মানুষের!
তবুও মানুষ...
তবু
এদেশে মানুষ লাখ লাখ টাকা খরচ করে সৌদিতে গিয়ে শয়তানকে ঢিল মারে,আর
পাশের শয়তানকে তোয়াজ করে চলে। যে কিনা ময়নার মাদের আর্থিক দৈন্যতার জন্য
যেকোনো ভাবেই দায়ী।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours