প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 

পদ্মার বুকে ফিরে যেতে হবে তাকে। ঘর গেরস্থলি সম্বৃদ্ধ হলেও অরণ্য যে স্থাণু বৃক্ষবৎ আশ্রয় করেই ডোরে বাঁধা স্তুতি আজ। প্রবৃত্তি কিন্তু রবিকাকে ভুল পথে নিয়ে যায় না৷ আগুনের ফুলকি মনে হলেও ইন্দিরা কি সত্যিই ছেলেমানুষ!!চিরন্তন শাশ্বত প্রতি পদে রহস্যময় জীবনের উদঘাটন। প্রবাহের গতিশক্তি মেনেই, নদীর চলন; জীবনের কথক হয়েই মানুষের যাত্রা।  

প্রবৃত্তি বদলে গেছে হৃদয়ের গভীরে। জীবনীশক্তির প্রাবল্যের মতো করেই প্রবৃত্তি। আর এই প্রবৃত্তি অর্থাৎ জীবনীশক্তির প্রাবল্য নেই। আচ্ছা! সন্দেহজনক মন বলছে, কেন ইন্দিরা সব চিঠি ছিঁড়ে ফেলল!মানুষ তো লোহার কল নয়, অগ্নিদগ্ধ প্রাণে শূন্য উড়ে যাওয়া বলাকার মতো সাদা দলছুট বিশ্বাসেরা..  একা।। শিলাইদহ!  এতো চাকচিক্যের লাবণ্যের ভূমিতে অভিমান৷ 

বৈচিত্র‍্যের ভিজে মাটিতে, অনন্ত নীলিমা। নীচে শায়িত পাণ্ডুরতা। ধরণীর মনে ইন্দিরার মন, আজ অশরীরী উদার৷ নদীর জীবিত বেলায় সূর্যাস্ত শোক, তবেই তো মনের প্রলয় বলেছেন রবিকাকা৷ 

এ জগত সংসার, পদ্মার চর, নক্ষত্রের নিঃশব্দ আহুতি আর ইন্দিরা হলেন উপলব্ধি, অনুভূতি, ব্যাকুলতা, মনের দোসর রবিকাকার৷ সূর্যোদয়ের তৃষ্ণা, উপেক্ষিত নিস্তব্ধ পাঠশালায় বোটের চোয়ালে রোদ। জাদুবাস্তবে রবিকাকার মুখে মাল্যদানের সারথির কথা।  আলোর বুকে ছায়া কান্নার দ্যুতিই তো চির রুগ্নের সাবেকি আঁতাত৷ বীরেন্দ্রের মা প্রফুল্লময়ীকে রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করেন না। রবিকাকা বললেন, "she has been always outsider! "
মেঘরঙাশীর্ণ মেয়ের এলোচুলে ছোটোকাকিমার সাথে বলুদাদার আত্মস্থ ভাব, একি তবে জটিল জীবনের ইঙ্গিত। 

ইন্দিরা তবে মোহভরা টোপ। বিষকুম্ভ কাদাজলে শরীর সাঁতরিয়ে যায় দেহ৷ নিয়তির নিশিপদ্ম ছুঁয়ে আছে বিনুনি ছেড়ে যেন রজঃরক্ত ছড়িয়ে নিদারুণ বেদনা জেগে ওঠে মনে। বলুর মায়া উপকূলে একাই ঘুরে চলে শরীর জুড়ে। নিরুপায়, বিচ্ছিন্ন দ্বীপে এ যেন শ্বেতী পড়া মনের আধার৷ 

স্তব্ধতার সাথে শুদ্ধতার সম্পর্ক বোধ হয়। মানুষের আর্ত ডাকের পাণ্ডুর চিহ্ন কোথাও ক্রোধ। গভীর নৈরাশ্যের চোরাবালি যেন বিভীষিকাময় কল্পনার উদার প্রতিধ্বনি। শিলাইদহ মানেই গ্রামের দৃশ্য। ছোটো ছোটো কুটির, ঘন গাছের সারি, তুচ্ছ মনের প্রতীকী এঁকেই পুকুর ঘাটে মেয়েদের জটলা, বহুদূরের শব্দহরিণ কাঁটা আবার। 

শোভাময় কবিতাময় চরে জ্বলন্ত তারকারা। আলো আঁধারি পথে পায়ে জড়াজড়ি করে আছে বঁড়শি৷ 
ভোরের বাতাসে সূর্য পোড়া গন্ধ ছুঁয়েই যদি আজ এলোচুল বিলুপ্তির প্রজাতি হয়, তবে দৃশ্যটুকু ছুঁয়েই চোখ অতীত হয়। সর্বান্ত চুড়ির যৌতুকে রটে যায় মনের কথা৷ হাসি আর গভীর চাহুনি রূপসি রহস্য এঁকে যায় ভালোবেসে৷ পবিত্র পদ্মাসনে মনে পড়ে শাশ্বত মৌলিকতা। নিবিড় হৃদয়ের টুকরো শ্বাসরোধ, মৃতকাল যেন প্রাণোচ্ছল জীবনে পরিগণিত হয়, ভালোবাসায়।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours