শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
তিন তালাক বাতিল করা হয়েছে পাকিস্তান আমলেই। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান তিন তালাক বাতিল করেন। যা পাকিস্তান ভেঙ্গে আজকের বাংলাদেশ হওয়ার পরও বলবৎ আছে। তিন তালাক সৌদী আরব সহ প্রায় ২০টি মুসলিম দেশে বাতিল করা হয়েছে এবং তা বে-আইনি;শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদিও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হানাফি মাজহাবের অসংখ্য মুসলিম ফলোয়ার রয়েছে তবুও তিন তালক বেআইনি। দ্রঃ তিন তালাক হানাফি মাজহাব ছাড়া অন্য মাজহাব সাধারণত মানে না।
তিন তালাক বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ভারতের মুসলিম পার্সনাল ল বোর্ড। লোকসভার সাংসদ আসাদ ওয়াইসি এআইএমআইএম নেতা বলেছেন, তিনি এই তিন তালাক বিলের বিরোধীতা করেই যাবেন। লোকসভায় তিন তালাক বিলের উপর প্রবল বিরোধীতা করে তাকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। অথচ তিনি ইংল্যান্ড থেকে পড়ালেখা করে এসেছেন ৷ তাও আবার আইনশাস্ত্রের উপর ! তিনি তিন তালাক বিলকে বিজেপির ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ বলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। উল্টো দিকে আবার লোকসভায় বিজেপি নেত্রী স্মৃতি ইরানি তিন তালাক বিলের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। বলেছেন, মুসলিম নারীদের নিপিড়ন থেকে রক্ষা করবে এই তিন তালাক বিল।
তৃণমূল, কংগ্রেস তিন তালাক বিলের বিরুদ্ধে। তারা যে এই বিলের বিপক্ষে শ্রেফ বিজেপির বিরোধীতা করার জন্য তা অনুমান করা যায় খুব সহজেই। অথচ তিন তালাক 'সমস্যা' কংগ্রেসের আমলেই শুরু। শাহ বানু (স্ত্রী ) বনাম মোহাম্মদ আহমেদ খান (স্বামী) মামলা কে কেন্দ্র করে কম জল ঘোলা হয়নি। ১৯৭৮ সালে ৬২ বছর বয়সি শাহবানুকে তার স্বামী তিন তালাক দেয় (তালাকে বাইন/ তালাকে বিদ্দত/তাৎক্ষণিক তিন তালাক)। শাহবানুকে তিন মাস দশ দিনের বেশি খারপোাষ দিতে তার স্বামী অস্বীকার করে। ৫ জন সন্তান নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন? তিনি অনেকের কাছে গিয়ে ন্যায়বিচারের আশ্বাস না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতের রায়ে ১৯৮৫ সালে বিচারক অনুর্ধ ৫০০ টাকা প্রতিমাসে শাবানুকে খারপোষ বাবদ দিতে নির্দেশ দেয়। শেষে মাসিক ১৭৯ রুপির জন্য আর্জী জানায় শাহবানু। কিন্তু তার স্বামী আদালতের রায় মানতে অস্বীকার করে। এই বলে যে; এ রায় আদালতের এখতিয়ারের বাইরে। এমন কি, মি আহমেদ খানের পাশে মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনগুলো দাড়িয়ে যায়। বিষয়টি এত জটিল আকার ধারন করে যে, ভারতীয় সংসদ এবং সুপ্রীমকোর্ট পর্যন্ত শাহবানু মামলায় জড়িয়ে পরে। কংগ্রেস প্রথমে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের পক্ষে থাকলেও ; "মুসলিম ভোট ব্যাংক " নষ্ট হওয়ার ভয়ে পার্সোনাল ল বোর্ডের চাপে সরে আসে। (উল্লেখ্য মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড ভারতীয় সকল মতের আলেমদের নিয়ে গঠিত।) কংগ্রেসের এমন দ্বৈতনীতির কারনে সে সময়ের তরুন কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী আরিফ মোহাম্মদ পদত্যাগ করেন। আরিফ মোহাম্মদের মতে তিন তালাক কেবল অমানবিকই নয়; এটা কোরান সুন্না বিরোধীও। তিনি ইসলামের ২য় খলিফা ওমর এর আমলে একটি তিন তালাকের বিচারের ঘটনা তুলে ধরেন। যে ঘটনায় তন তালাক দাতাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে শাস্তি দেয়া হয়।
তৃনমূল (টিএমসি)তিন তালাক বিল এর বিরুদ্ধে সোচ্চার! তারাও ভারতীয় কট্টর মোল্লাদের পক্ষে। কংগ্রেস, টিএসআর, ওয়াইএসআর, আরো কয়েকটি দল তিন তালাক বিলের বিরোধী। কমিউনিস্টরাও নারী মুক্তি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলেও কেন তারা তিন তালাক বিলে প্রকারান্তরে বিরোধী তা করে চলছে তা বোধগম্য নয়!
বিজেপি কি আসলেই ইসলাম ও মুসলিম বিরোধীতার জন্য তিন তালাক বেআইনি ঘোষনা করতে যাচ্ছে? ইতহাস কি বলে? ইতিহাস বলে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যখন ২য় বিয়ে করতে যায়, তখন ১ম স্ত্রীর অনুমতি নিতে বললে, মোল্লারা বিরোধীতা করে। বলে এটা ইসলাম বিরোধীতা ও মুসলিম শরীয়া বিরোধী। যদিও সেই আইনটিও পাকিস্তান আনলেই কার্যকরি করা হয়। জেনারেল আইয়ুব খানের আমলে তিন তালাক যখন বেআইনি ঘোষনা করা হয়৷ তখনও, একটি পক্ষ দাবি করে এটা ইসলাম ও মুসলিম স্বার্থ বিরোধী। ১৯৬২ সাল থেকে পাকিস্তান ও আজকের বাংলাদেশে তিনজনের তালাক বে-আইনি । তাতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলমানের ক্ষতি হয়েছে বলে কেউ শুনেনি। ভারতেও তিন তালাক বে-আইনি ঘোষনা হলেও ইসলাম ও মুসলিমদের কোন ক্ষতি হবে না। যেমন ১৯৪৯ ও ১৯৬২ সালে হয়নি তখন বিজেপিও তা করেনি। বরজোড় তিন তালাক নিয়ে খোলা কিছু ফতোয়ার দোকান বন্ধ হবে। আমরা তিন তালাক নিয়ে টিভি এবং পত্রিকায় জঘন্য খবরও পেয়েছি। স্বামী তালাক দিলে শ্বশুরের নিকটও বিয়ে দেয়া হয়ছে! সেখানেই শেষ নয়; আবার দেবরের সাথেও রাত কাটাতে বলা হয়েছে! ধর্মের নামে (যদিও ধর্ম এসব অনুমোদন দেয় না) এসব অধর্ম কাজ চলতে দেয়া যায় না৷
১৯৪৯ ও ১৯৬২ সালে নারী আন্দোলনের তোপে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তা আজ ভারতের মত গনতান্ত্রিক দেশে প্রতিষ্ঠিত হতে ছয় সাত দশক লেগে গেলো তা ভাবতেই অবাক লাগছে। আরো বিস্মিত হই যখন দেখি বিভিন্ন অজুহাতে তিন তালাক বিলের বিরোধীতা করছে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া কিছু মানুষ।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours