প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

কল্পনায় চিঠির শব্দে ভেসে ওঠে মুখচ্ছবি।  গম্ভীর, চিন্তামগ্ন  আসা যাওয়ায় ঘটেছে ঐশ্বরিক নৈর্ব্যক্তিকতা।  কোথাও ভলতেয়ার বলেছিলেন, অন্তরে শয়তান না থাকলে শিল্পী হওয়া যায় না। আহা! এটা ইন্দিরার মনে পড়ছে।  কিন্তু, এটা তো সেই মনুষত্বের ঈশিত্বের প্রকাশ!! এই প্রত্যয়, উন্মোচন কি ঐশী মহিমাতেই প্রলেপ দিয়ে আছে!! এই আস্থা প্রত্যয় মূল্যবোধেই গড়ে উঠেছে ইন্দিরা।  

আজ ভীষণ ক্ষোভে কেটেকুটে যেন বিশ্বাসের বৈধর্ম্য বিপজ্জনক মনে হচ্ছে। বেদবিদ্বেষী অনীশ্বরবাদ ডেকে আনবে না তো!!  সেই যে "সাতটি তারার  তিমির ", আত্মঘাতী রণাঙ্গন স্তব্ধ হলে, সভ্যতার উপহার আলোকের জন্য সৌরচেতনার উত্তরণ।

অনির্বচনীয় স্বপনের বুকে কোথাও উত্তাল আহ্বানে ডেকে আনে শব্দ " উন্মুক্ত  অসভ্যতা "। তবে কি "iconoclust", " black formation ",destruction of icons and other images. তাই কি কবি বললেন, মহাসমারোহ, মহল্লার দল, সব ছেড়েছেন। পৌত্তলিকতাকে ভুলে গেছেন, না ভুল বলছি হানা দিয়েছে স্মরণীয় শতক৷ সৃজন কথায় বলতে গেলে, অমাময়ী বিস্ফোরণ। নীতিবোধ, ন্যায়চেতনাভ,রূঢ়ভাবে চ্যালেঞ্জ। ইন্দিরা মনে করে জীবনবোধের সেই ধর্মপ্রাণ বাবার কথা। অন্বেষী ব্যাখ্যা ছুঁয়ে আছে ধর্ম। শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা তো বড়ো কথা। ইন্দিরার মনে পড়ছে তিন বছরের ভাই চেবির কথা। দুবছর বয়সেই চেবি চলে গেলো প্রলয়ছায়া রূপাঙ্কনে। আর ঠাকুর বাড়ির পুরুষ, গায়ের রঙে অর্থহীন অভিমান৷ 

এলিয়ে পড়ে আছে ইন্দিরার দেহ। দক্ষিণের বারান্দায় বসন্তবিলাসের উদাসী হাওয়া। রবিকাকার চিঠিগুলো, বিদ্বেষ ভরে লুটিয়ে আছে ইন্দিরার মনে। উদাসীন হয়ে ভোগ্যবস্তুর উপর টানহীন দেহিটা একা হয়ে গেছে। বিষম হৃদয়ে সে কি উত্থান পতন - অট্টহাসির সাথে উদ্যমহীন মনোবিকার যেন আগামীর আকাশে নীহারিকাপুঞ্জের বিস্ফোরণ। 
কন্ঠস্বরের কথার নির্যাস ফিরিয়ে দেয় স্মৃতির পৃথিবী। 

রবীন্দ্রনাথের ব্যাপ্তি, অনুভব, দ্যুতি, চমক অনন্য। জরাগ্রস্থ দশাতো শরীরের মনের নয়।  সমস্ত মনের বিচিত্র ভাব, উদয় জীবনের কথা। আলোকিত মনের বাঁধনে ইন্দিরার মানবিক হৃদয়ের গভীরতম কাব্য সুরচিত। বিস্তীর্ণ উপত্যকাকে ব্যাকুল তৃষ্ণা আছে ইন্দিরার। ভাগ করবে না সে রবিকাকাকে কারোর সাথে। পূর্ণপত্রাবলিতে অনন্তকে ছোঁয় ইন্দিরা। ব্যক্তিত্ব, স্টাইল, ভঙ্গিতে রয়েছে ভিন্ন ভাষা। দিনরাত্তির নিয়মে চাঁদোয়া ছুঁয়ে আছে মুখব।গোছানো সংসার,  আরাম, বিলাস সব হতেই আজ মুক্ত হতে চেয়েছে সে৷ একতিরিশ আর উনিশ হাঁটছে ভালোবেসে৷ উন্নুক্ত অরাজকতা নাকি আজ মন উদাস হয়ে যাচ্ছে সচেতনে৷ দীর্ঘ বেদনা, দীর্ঘ যন্ত্রণা ইন্দ্রিয়সুখ নয়, তবু এক অন্যরকম সম্ভোগ। 

আলো ছায়ার খেলা নিঃশব্দের সমারোহ।  দ্যুলোক ভূলোকের মাঝখানে শূণ্য পরিপূর্ণতা৷ অদৃশ্য সূর্য চেপে আছে বনহংসী বর্ণালী কন্ঠহার৷ অলৌকিক সূর্যাস্তে এক সান্ধ্য উপক্ষিত মন। রবীন্দ্রনাথের নতুন বৌঠানের কথা খুব মনে পড়ে। নিঃসঙ্গ নিবিড়তা, উজ্জ্বল ক্ষণখণ্ড ঘর বাঁধা। তাই তো জীবনানন্দ মনে পড়ে, " সূর্যের কিরণে
নিমেষেই বিকরিত হয়ে ওঠে "



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours