প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 

পদ্মার মায়াবন্ধন ছিঁড়ে এবার রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোতে, ওড়নার মতো করে জড়িয়ে আছে ইন্দিরাও। মনের তটে সেই সতীর্থ খোঁজার পালা। দক্ষিণের বারান্দায় নিবিড় 
অরণ্যের এক প্রান্তে হাত রেখে সেই যে নীরার বিষাদ মনে পড়ে। লতায় পাতায় আঁচল বৃষ্টির শব্দ, মধ্যমূলে শিমুল, কৃষ্ণচূড়া...... ধ্বনিগুচ্ছের শিস ছুঁয়ে হৃদয় চিহ্ন একাকার।। 

কিশোরীর ঠোঁটে তখন চাঁদের হাট। রূপবতীর খোলা আকাশে, তার কাকা বলে ইন্দিরাই সেই প্রাণোজ্জ্বল প্রতিমা। মানবিক দৃশ্যজগতে এই হৃদয়গত আলোড়ন কি সেই "কেল্টিক ভূয়সী পরিগ্রহণ "..  অন্তরঙ্গের প্রেমিকসত্তার বিকাশ৷ মনের মধ্যে কথাগুলোর তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে ; মরে গেছে নদীর চড়া.. তবু মনে পড়ে,

" সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে। 
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।। "

আবার নিজের মতো করে বলতে ইচ্ছা করে, 

বৃষ্টি বাহুতে রেখেছি আহত ঠিকানা;
প্রকৃতি সুবিনয় হলে,
বৃক্ষ ঘরে ফিরে যাই ;

শরীর আমার পাখি হতে চায় ;
বাঁধ ভাঙা টানে আলোর সুখে কেবল তাঁর স্বপ্ন, 
উঠোন জুড়ে কুঞ্জ  বৃন্দাবন.. 
বিজন ঘরে আজ ব্রজবুলি হয়ে যায়..।। 

ব্যক্তিগতের আড়ালে ইন্দিরা রবিকাকাকে আড়ালে রাখতে চায়। আসলে নিবিড় নিহিত মগ্নচৈতন্য সবার জন্য নয়৷ ঝুলে পড়া অপরাধবোধ কি যুদ্ধের ধূমল ভূমি!! কি ভাবছে ইন্দিরা!! রবিকাকার আক্ষেপ, "বব রে!! আমার যে সুনামের চেয়ে বদনামই বেশী"! ইন্দিরার মন বলে, সে সেই তো কাঁসাই আর সুবর্ণরেখার মেয়ে। তবে বৃথা হয়েছে কন্ঠ!! কোথায় সঁপেছিল সেই প্রাণ। অন্ধকারে এ কি নিমর্জন!! বর্ষার বুকে যখন কাঁচের শার্সিটা বন্ধ করতে চায় ইন্দিরা, কিন্তু ইন্দিরার খোলা চুলের মাখামাখি মন, রবিকাকার প্রেরণাদাত্রী৷ 

এই নদীকন্যা যে চিরায়ত পুরুষের চিঠিগুচ্ছ পৃথিবীর আবেদনে সাজাতে চায়৷ বিবর্ণ ইচ্ছার মতো রবীন্দ্রনাথের ভাবনাগুলি আজ আর পত্রগুচ্ছে দিতে মন চাইছে না। তবু সচেতন পুরুষ রবীন্দ্রনাথ। তিনি বললেন, আনএডিটেড যেন প্রকাশ না পায়৷ মনের কথা তো বিপজ্জনক নয়৷ তবে,  মাথা গুঁজে থাকা 
প্রত্যাখ্যাত ভ্রমগুলি যে একান্তে তাঁর৷।
( ক্রমশ )





Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours