শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

ডাক্তার জাকির নায়েকের জন্ম ১৮ অক্টোবর  ১৯৬৫ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে (মুম্বাই)। পড়ালেখা করেন খৃষ্টান মিশনারী স্কুলে। তারপর কিষান চন্দ চেলারাম কলেজ। মেডিকেল ডিগ্রিনেন টোপিওয়া ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে। 
 
১৯৮৭,সালে ইসলাম ধর্মের বক্তা  আহমদ দিদাতের প্রভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে  ডাক্তার জাকির নায়েক ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দেন।  ইসলাম ধর্মের উপর বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক রিসার্চ  ফাউন্ডেশন  (আইআরএফ)। ২১ জানুয়ারী ২০০৬ থেকে পিসটিভির যাত্রা শুরু হয়। তিনি নিজে পিসটিভির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বক্তা। লর্ড প্রোডাকশন লিঃ এর নামে পিসটিভি সম্প্রচারের  অনুমতি নেয়া হয়। দূুবাই ভিত্তিক  হলেও এই টিভির জনপ্রিয়তা  দক্ষিন এশিয়া সহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে। যে কারনে ২০০৯ এ পিসটিভি উর্দু ও ২০১১তে পিসটিভি বাংলা নামেও পিস টিভির কার্যক্রম শুরু হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি শ্রেনীর কাছে জাকির নায়েক ও পিস টিভির জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তার ভক্ত ও শ্রোতারা অনেকেই মনে করেন তিনি বহুভাষী। আসলে তা  সঠিক নয়। তিনি সাধারনত ইংরেজিতে লেকচার দিয়ে থাকেন। তার বক্তব্য  শেষে বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে প্রচার করা হয়ে থাকে। এমন কি তিনি আরবী ভাষায়ও দক্ষ নন। তাকে আরবিতে বক্তব্য দেননি  কখনো। তিনি লেকচার দেয়ার সময় গীতা, বেদ, বাইবেল কোরআন প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ থেকে পাতা নম্বর সহ উদ্ধৃতি দেন বলে,  মুসলিম সম্প্রদায়ের  একটি অংশের ভক্তশ্রোতার নিকট তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। যদিও জাকির নায়েকের উদ্ধৃত কথা ও ধর্ম গ্রন্থগুলো কখনো তার ভক্তরা কেউ মিলিয়ে দেখে না। তার দর্শক-শ্রোতা করতালি দিয়ে মুখরিত করে তোলেন অডিটোরিয়াম। উল্লেখ্য ইসলামে করতালি বা হাততালি হারাম। এ নিয়ে ডাক্তার জাকির নায়েককে কথা বলতে শোনা যায়নি।

ভারতে তার নামে মামলা হলে, তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরে মালয়শিয়াতে আশ্রয়নেন। যদিও তিনি প্রেস কনফারেন্স করে দাবি করেন। তিনি সৌদি আরবেরও নাগরিক। তবে  স্থায়িভাবে বসবাসের অনুমতি পান নাজিব রাজ্জাকের সরকারের  সময়। নাজিব রাজ্জাক সরকারে পতন ঘটলে  মহাথির মোহাস্মদ  পুনরায় ক্ষমতায় এলেও জাকির নায়েকের বসবাসের অনুমতি বহাল রাখা হয়। দুই যুগের অধিক সময় ভারতে নির্বিঘ্ন ধর্মীয় লেকচার দিলেও। মালয়শিয়াতে  সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর আতিথীয়তা পাওয়ার পরও বছর না ঘুরতেই। ডাক্তার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে  জাতি ও ধর্ম,সম্প্রদায়ের  বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগ উঠে। তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট ও জাতিবিদ্বেষ ছড়ানোর মত মারাত্বক অভিযোগ এনে তার বক্তব্য দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি তাকে ফেসবুকে পোষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

ডাক্তার জাকির নায়েক চায়নিজদের চায়না ফিরে যেতে বলেন। আরো অভিযোগ করেন, ভারতে মুসলিমরা যে সুবিধা ভোগ করে,  তারচেয়ে ১শ ভাগ বেশি সুবিধা ভোগ করে মালয়শিয়ান হিন্দুরা!  তার এমন বক্তব্য  শোনার পর মালয়শিয়াতে তীব্র  প্রতিবাদ শুরু হয়। তাকে বহিস্কারের দাবিও জানানো হয়।কেউ কেউ  গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন। ডাক্তার জাকির নায়েক ইতোমধ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন। তবে শেষ রক্ষা হয় কি  না তা বলা কঠিন। এর আগেও তিনি  বলেছিলেন প্রত্যেক মুসলমানের  জঙ্গি হওয়া উচিত।  যা নিয়ে আজো বিতর্ক চলছে।

বাংলাদেশে গুলশানে জঙ্গি হামলা হলে, জাকির নায়েকও শিরোনাম হন। তার লেকচারে অনুপ্রাণিত হয়ে গুলশানে  ঢাকার জঙ্গিরা  জঙ্গি  হামলায় অংশ নিয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠে। সে সময়ের তথ্যমন্ত্রী বলেন ; বাংলাদেশের মানুষ জাকির নায়েক ও পিসটিভি ধারন করে না। তারা কোরআন, সুন্না ও  দেশের সংবিধান মেনে চলে।  জুলাই ২০১৬ তে বাংলাদেশ পিসটিভ নিষিদ্ধ  হয়।  ভারতও  পিস টিভি ও জাকির নায়েকের লেকচার নিষিদ্ধ করে দেয়।  জাকির নায়েকের আইআরএফ নিষিদ্ধ হয় আরো আগেই।

শ্রীলঙ্কায় চার্চে হামলা হওয়ার পর এপ্রিল ২০১৯ এ, শ্রীলঙ্কাতেও পিস টিভি নিষিদ্ধ করা হয়। কানাডাতেও নিষিদ্ধ। এ ছাড়াও ইংল্যান্ডে "অফকম" জাকির নায়েকের, তিনটি ভিডিও ক্লিপ আলামত হিসেবে নেয়। ইউকেতেও ডাক্তার জাকির নায়েক নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারেন,সাম্প্রদায়িকতা, ও জাতিবিদ্বেষ ছড়ানোর সহ বিভিন্ন অভিযোগে। 

ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেওবন্দ ডাক্তার জাকির নায়েক থেকে ধর্মপ্রান মুসলিমদের দুরে থাকার পরামর্শ দেয়। ফতোয়া বিভাগ দারুল উলুম দেওবন্দ,  ফতোয়া নং ৩১৩৯২, এপ্রিল ১০,  ২০১১ দ্রষ্টব্য। জাকির নায়েককে দেওবন্দ সহ অনেক ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাফের ঘোষনা করে। কোরআন, হাদীস, সুন্না, বেহেস্তি হুর, কারবালায় নবী দৌহিত্রকে হত্যার খলনায়ক ইয়াজিদের নামের সাথে রাদিআল্লাহু বলা,  তারাবি নামাজ, মিলাদ, ঈদে মিলাদুন্নবী, তাবলিগ নিয়ে  আলেম উলামা  সাথে ভিন্নমত  প্রকাশ এবং  চার মাজাহাব অপ্রয়োজনীয় মত দেয়া এবং চার ঈমাম ভুল করেছেন বলা ! জাকির  নায়েকের এমন  অনেক মতামত দেয়া নিয়ে বিভ্রম হওয়ায় অসংখ্য হাফেজ, ক্বারী, আলেম, মুফতি মুহাদ্দীস, তথা অনেক ইসলামী পন্ডিত জাকির নায়েককে কাফের মনে করেন। জাকির নায়েক মনে করেন কোরআানে ব্যাকরন গত ভুল থাকলে থাকতেও পারে। আল্লাহ্  করতে পারবেন না এমন ১ হাজার উদাহারন তিনি দিতে পারবেন। চারজন নারী নবীও ছিলেন, বলে জাকির নায়েক  দাবি করেন। ডাক্তার জাকির নায়েক মনে করেন, রাম ও কৃষ্ণ নবী রাসুল হলেও হতে পারেন।  তার দাবী যেহেতু তিনি হিন্দুস্তানে জন্ম নিয়েছেন তাই একজন মুসলমান হয়েও নিজেকে হিন্দুও বলা যবে। জাকির নায়েকের এ সকল অপ্রচলিত  বক্তব্য আলেম উলামাদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। জাকির নায়েকের পোশাক কোটটাই  ইসলামীক  স্কলারদের নিকট অগ্রহনযোগ্য।  যদিও মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশের নিকট তিনি ভীষন জনপ্রিয়। তেমনি আবার মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি অংশ ডাক্তার জাকির নায়েককে খৃস্টান ইহুদী চক্রের হোতা বলে মনে করে।

ভারতে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে মামলা করা  ও পিসটিভি নিষিদ্ধ করলে অনেকেই ভারত সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে। এখন মালয়েশিয়াতে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হলে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাচ্ছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশও ঢাকা এটাকের পর যখন জাকির নায়েক ও পিসটিভি বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করে  এ দেশে জায়ামাত পন্থীরা আওয়ামী লীগ জোট সরকারে কঠোর সমালোচনা করেছিলো।
ডাক্তার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ইসলামের  কট্টর ওহাবী / সালাফী মত প্রচারের অভিযোগ রয়েছে। তালেবান আল-কায়েদাকে তিনি  সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করেন না। ডাক্তার জাকির নায়েক, আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেতা  ওসামা বিন  লাদেনকে কখনোই  সন্ত্রাসী বলে স্বীকার করেননি। বরং প্রত্যেক মুসলমানকে জঙ্গি হওয়া উচিত বলে মনে করেন! ডাক্তার জাকির নায়েকের ইসলাম ও মুসলমান নিয়ে দেয়া বক্তব্য কতটুকু ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে বা বিপক্ষে যাচ্ছে বা যাবে সময়ই তা নির্ধারণ করবে।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours