প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান: 
অনন্ত বিশ্রান্তির বুকে আলস্য ভাব৷ শরীর শিল্প জুড়ে চাপা নিশুতির ডাক। অভিমান ভরে রবিকাকার বুকে আকুল করা আবেদন, "ইন্দিরা আর লিখবো না চিঠি তোকে! " অস্পষ্ট রূপরেখায় দহন প্রক্রিয়া। এ কেমন স্মৃতিবন্দি প্রেম, নারী হৃদয় নিষিদ্ধ বলেও মনে মনে বলে চিরভিখারির মতো ভালোবাসা খুঁটে খুঁটে  অনুভব,উপলব্ধি, সত্য এ সব তার - তাই লেখো আমায়। আলোকিত হৃদয়ের নির্মাণে কে যেন চিৎকার করে বলছে, কষ্ট লাঘবের দায় তোমার। এ প্রাণ যে তার, তাকে ছাড়া ভালোবাসাহীন রসদে মৃত্যু আবার৷। 

এ পৃথিবীর বুকে সব অন্ধকারে আলো দিতে নেই। কিন্তু ইন্দিরা যে পেয়েছে উজাড় করা প্রকাশপ্রার্থী। গহন উপলব্ধির গভীরে একটু তো সংযত হতেই হয়৷ বেদনার গোপন উপত্যকা ছুঁয়ে আছে অধিকার৷ সবটুকু অতৃপ্তির মন, আজ যাত্রাপথে অভিমুখ পেয়েছে৷ নীরব হেলানো কোলটাই শুধু তার৷ এবার ইন্দিরা যে আরো কথা বললেন, যে রবিকাকা হলেন নিস্তরঙ্গ নারীর জিয়নকাঠি৷ সে তাঁর বৃক্ষ। নতুন জন্ম নারীর আকাশস্পর্শী অভিলাষ তিনি৷ নারীত্বেরও তো উদ্যোগের উদ্দীপন  লাগে, থাকে উষ্ণতার অকুন্ঠ তেষ্টা - সম্পূর্ণতা৷। 

কিন্তু রবিকাকা এ কি বললেন!!  নতুন বউঠান নাকি তাঁকে বলেছিলেন, যে নিষিদ্ধ পত্র। ইন্দিরা হতবাক৷ সে দিতে পারে না লুকানো নারীজন্মের বৃক্ষ পুরুষকে৷ স্বপ্নসুখ, বুক ভরা ভালোবাসার আশ্রয় এখন সে দেবে কেন!!এমনকি সেই মহিমাময় শিরীষ যে একসময় অন্যের ছিল, তা মানতেও বিরোধ আসে৷ মন বলে, তুই দীর্ণ!!   প্রণয় অছিলা বললে তো ভুল হয়, সে আজ তাঁর অধিকার৷। 

রবিকাকা এবার মালাবদলের সঙ্গীর সাথে তিনতলাতেই আশ্রয় পান৷ না, দুই প্রেমই অন্য কাউকে মেনে নিতে পারছে না৷ মনের কোলে এ কি খেলনাপাতির ঘর। সাত বছর ধরে অসহনীয় যন্ত্রণা তাঁর৷ কিন্তু সচেতন পুরুষ তো বোঝে এ হলো ব্যক্তিগত দহন, আর এই দহনই তো পবিত্রতা হারাচ্ছে..  তাই দেহাংশের দাহ হলে, হৃদয়ের সৎকার করেছেন কবি।  

মার্জিত আফিমের মতো শরীরের তৃষ্ণা যেন একটু বেশী৷ প্রেমের কবিতা নাকি অশ্লীলতা কি বলবে দুই ভালোলাগার কান্না৷ ইন্দিরা তো ছেঁড়া খাতা নয়,বরং বিদেশে গড়ে ওঠা রাতের জঠর ছুঁড়ে নবজন্মের নারী প্রতীকী।  এবার শেরি হাতে ইন্দিরার সুরাপান যেন রক্তের বুদবুদ৷ নিঃস্ব ক্ষতে আরো একটু ঘৃতাহুতি প্রমথ চৌধুরী।  সহজ গুল্মের মতো আঁতকে ওঠে ইন্দিরা। প্রথম চৌধুরী তো সরলাদিদির পাণিপ্রার্থী৷ কিন্তু প্রত্যাখ্যান পেয়েছে তাই ইন্দিরার পাণি??  না তা হতে পারে না৷ আঁধার নিমের মতো বিষের মতো রেগে ওঠেন ইন্দিরা৷ তবে প্রমথ চৌধুরী তো ইন্দিরার জীবনে ঘটমান বর্তমান নয়!! 

ইন্দিরা বিশ্বাস করে সে বিরল ভাগ্যবতী। রবিকাকার হৃদয়ের গোড়ার কুঠারাঘাতের সাক্ষাৎ ব্যক্তিত্বের নারী৷ রবিকাকা, ইন্দিরার জীবনীশক্তির প্রতিনিধি। এবার অধিকার,ইন্দিরার ভালোবাসার রবীন্দ্রনাথ। পায়ের পাতা ছুঁয়ে জীবনের গন্তব্যপথে খুঁজে পাওয়া, শ্বাসবায়ু একান্তে তাঁর। (ক্রমশ)






Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours