দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সব জায়গায় কৃষ্ণ পুজো হয়। কিন্তু নলহাটি থানার শীতলগ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণপুরে হয় কৃষ্ণের পিতা বসুদেবের পুজো।
পিতা বসুদেবের নাম অনুসারেই কৃষ্ণের অপর নাম বাসুদেব। মন্দিরের বাইরের দেওয়ালে ঘি দিয়ে সাতটা লম্বা লম্বা দাগ দিয়ে দ্বাদশক্ষরী মন্ত্রে তাঁর পুজো হয়।
রাণী ভবানীর প্রতিষ্ঠিত এই চৈতন্য মহাপ্রভূর মন্দিরে নারায়ণ, শালগ্রাম শিলা, গোপাল ও গণেশের নিত্যসেবা হয়। দোল উৎসব, জন্মাষ্টমী ও দুর্গাপুজোর দশমীর পর একাদশীর গোটা গ্রামের মানুষ এখানে প্রসাদ পায়।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে এখানে তিন বেলা গোবিন্দ সেবা হয়। সকালে ফলমূল, দুধ, মিষ্টান্ন, তালের বড়া, লুচি, মাখন, ছানা, নবনী এসব দিয়ে পুজো দিয়ে ভোগ হয়।
দুপুর ১১টার মধ্যে অন্নের ভোগ, ৫ রকম ভাজা, শাক, তরকারি, পায়েসান্ন ইত্যাদি দেওয়া হয়। সন্ধ্যেয় শীতলীতে (পুজোর নাম) একইভাবে তালের বড়া, লুচি মাখনন নবনী ইত্যাদি দেওয়া হয়। সারাদিন চলে হরিনাম সংকীর্তন।
কৃষ্ণপুরে শুক্রবার ছিল জন্মাষ্টমী। শনিবার নন্দ উৎসব। সেই উপলক্ষে সকালে পুজোর পরেই তালের বড়া ও লুচির হরি লুট হয়।
মূলতঃ কিশোর কিশোরীরা সেই হরির লুটে আকাশে ছুড়ে দেওয়া বড়া ও লুচি কুড়োবার জন্য হুড়োহুড়ি করে। তার কিছুক্ষণ পরেই হয় পাকা তাল ফল নিয়ে কাড়াকাড়ি। এই উৎসব মূলতঃ বৃন্দাবনের নন্দ রাজার আমলে রাখাল বালকদের খেলার অনুকরণে প্রতীকীমাত্র।
কৃষ্ণপুরের চৈতন্য মহাপ্রভূর পুজো চালাতেন তিন শরিক। বর্তমানে পুজো ও নিত্যসেবা চালান চুরাশি বছর বয়স্ক সেবাইয়েত প্রভাকর অধিকারী। তিনি তৃণমূলের নলহাটি-২ ব্লক সভাপতি বিভাস চন্দ্র অধিকারীর বাবা। প্রভাকর অধিকারী বলেন, রানী ভবানীর তৈরি মন্দির। আগে আমরা তিন ভাই চালাতাম। এখন আমি বেঁচে আছি। আমি চালাই। এখানে শুধু কৃষ্ণ নয়, কৃষ্ণের পিতা বসুদেবেরও পুজো হয়। গোঠের রাখাল বাখালদের নিয়ে যেমন নন্দ উৎসব হতো, তেমন হয়। তবে বাচ্চারা কেউ কৃষ্ণ সাজে না।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours