প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
(আলো আঁধারি পথ পেরিয়ে, যখন আয়োজনহীন পথের খোঁজে সত্য উপলব্ধির পূর্ণতা আসে, তখন একটাই কথা শ্রবণ করি... শীল - সমাধি - প্রজ্ঞা।
কিন্তু, সত্য উপলব্ধি করে পারমার্থিক সত্যজ্ঞান লাভে যখনই প্রেরণা পাই, তখনই প্রশ্ন আসে!)
"তুমি তো বৌদ্ধ নও , তবে বুদ্ধ প্রীতি কেন? "
আবার প্রশ্ন আসে,
" তুমি তো বৌদ্ধ নও, তবে বৌদ্ধ পথে কিভাবে! "
আজ ছোট্টো আলোচনায় ক্ষুদ্র বিদ্যায় বিশ্লেষণ করলাম।
বুদ্ধপথে যাওয়ার জন্য কি বৌদ্ধ হতে হয়??
বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি ", বুদ্ধ পথে শরণাপন্ন হও।
ধম্মং শরণং গচ্ছামি ', ধর্ম পথে যাও। এই ধর্ম কি??
জীবন
যাপনে শৈলীই হল ধর্ম। তাহলে ধর্ম মানে কি!! সকলের মঙ্গল সাধনই ধর্ম।
যাপন এমন হবে যা নিজেকে সুখী করবে এবং অন্যদের সুখে বাঁচতে শেখাবে৷
প্রকৃত সুখ কোথায় থাকে!!
আপন
অন্তরেই শান্তির অবস্থান৷ শান্তি বলতে বোঝায়, বিকার বিহীন চিত্তের
বিশুদ্ধি। তবে আর ধর্ম" শব্দের সাথে এমন পৃথকীকরণ কেন!! যিনি জীবন যাপনের
যথার্থ উপায় জানেন, তিনিই তো প্রকৃত ধার্মিক৷
প্রকৃতি
তো কার্য কারণের নিয়মাধীন। আমাদের কেউ সেই কার্য কারণের নিয়মের বাইরে নয়।
তবে ধর্ম দিয়ে কাউকে ভেদ করা যায় কি? বিকার মুক্ত উপায়ে শিক্ষা দেওয়াই
জীবন যাপনের যথার্থ উপায়, তাই শুদ্ধ ধর্ম।
তাহলে বুদ্ধপথ" বলতে গেলে ধর্ম কথা উঠে আসে কেন!!
ভগবান
বুদ্ধ মধ্যম মার্গকে সম্বোধি লাভের, ক্লেশ উপশমের, আর্য সত্য অধিগমের এবং
নির্বাণ সাক্ষাতের একমাত্র মার্গ বলে অভিহিত করেছেন।
সম্যক দৃষ্টি, সম্যক সংকল্প, সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব, সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি।
"বুদ্ধ
" শব্দের অর্থ হলো জ্ঞান। সেই সত্য জ্ঞানের পথের সন্ধানে ভেদাভেদের
"ধর্ম " এর স্থান কোথায়?? প্রথমে সংযম দ্বারা কায়িক এবং বাচনিক দুষ্কর্ম
থেকে বিরত হতে হবে। তারপর সতত অভ্যাস দ্বারা মানসিক দুষ্কর্ম থেকে বিরত হতে
হবে। আসল কথা হল - নিজের চিত্তকে বিকার থেকে বিমুক্ত রাখা৷
মার্গ সত্য। "মার্গ সত্য হল - ধর্ম যা ইচ্ছা করতে হবে পরে কামনা করতে হবে এবং স্মৃতি করতে হবে "।
এই
পথ হলো আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে সম্যক দৃষ্টি
আর সম্যক সংকল্প হল প্রজ্ঞা মার্গ৷ সম্যক বাক্য, সম্যক কর্ম, সম্যক আজীব
হলো শীল মার্গ এবং সম্যক প্রচেষ্টা, সম্যক স্মৃতি এবং সম্যক সমাধি হল সমাধি
মার্গ।
এখানে ধর্ম দিয়ে বিভাজন কোথায় বলতে পারেন??
নৈতিক
জীবন লাভ করার জন্যই তো ধর্মসাধন। আসলে নাম পরিবর্তন করলে গন্ধের তারতম্য
হয় না। আসলে সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতীয়তার রঙীন চশমা খুলে ফেলে দেখলেই
ধর্মের শুদ্ধ রূপে দেখতে পাওয়া যাবে। বুঝতে হবে তথাগত পথে সাম্প্রদায়িক
তকমার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্বন্ধ নেই । সত্যধর্মের আলো প্রকাশ পায় কলুষ
মুক্তির সাথে। কল্যাণকামী মার্গ - ই যথার্থ, আর এই যথার্থ পথেই দুঃখকে দূর
করা সম্ভব।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours