প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

আজ ঘড়ির কাঁটায় সকাল দশটা।  সাধারণের মতো আমিও বাড়ির কাজ করছি। অকস্মাৎ ভ্যানে করে ১০ টাকার পসরা সাজিয়ে হাঁক!!  "দশটাকায় পাচ্ছেন চুলের ক্লিপ, গাডার, কানের দুল..  হরেক রকম"।  না, না, একবারো ভাববেন না শিল্পসুষমামণ্ডিত আপনাদের সাজঘর, এ নিতান্তই ঝতিকা সুর..  হ্যাঁ, পেটের খিদের জ্বালায় অনাগত ভবিষ্যৎ।  


নাম !!  বিশ্বাস করুণ নাম টা আমি ইচ্ছা করেই  গোপন রাখলাম ওরই কারণে। কারণ ছেলেটি রাজধানী এক্সপ্রেসের  এসি বগিতে অ্যাটেনডেন্টের কাজ করেন। ও কেবল একা নয় এমন অনেক রবি, কাশি, শ্যাম আছেন, যাদের সংসার ৫০০০ টাকায় চলে। এদের রেলকর্তৃপক্ষ কনট্যাক্টরদের অধীনে নিযুক্ত করে। এদের কাজ এসি মেনটেন করা আর তার সাথে প্যাসেনঞ্জারদের বালিশ, কম্বল, চাদর, হ্যাণ্ড টাওয়েল দেওয়া। কিন্তু আমাদের এসি তে চড়া তথাকথিত বড়োলোকেরা ঝটিকাতমসা করে সেই বস্ত্র গুলো চুরি করে নিচ্ছেন। ছিঃ!  ছিন্ন নরমুণ্ড গুলোকে আবার রক্ত নদীতে কেটে ফেলছেন! লজ্জা করে না আপনাদের??  জানেন কি আপনার একটা চাদর বাড়লে একটা ছেলের পেটের ভাত চলে যায়?? তমসার পদতলে চিতা সাজিয়ে রাখছেন এই নিরন্ন মানুষগুলোর.. !!  শীতল আগুন নিয়ে খেলতে
খুব সুখ তাই না!! আর আপনাদের এই চুরির ফলে ছেলেরা মাস গেলে ৫০০ টাকাও হাতে পাচ্ছে না। নিরন্ন রা  আপনাদের দায় মাথা কেটে নিজেরা তার টাকা মেটাচ্ছে। আর আপনার বাড়িতে একটা চাদর বাড়ছে, ছিঃ!!


ভাবছেন কেন এমন বলছি?  কি আছে এই ভ্যানের মালিকের বুকে?  ঠিক ভানের উপকরণে নয়, এ আছে দারিদ্রের দুধ ওলটানো বাটির মুখে। বড়োলোকের সন্তান যখন পায়ে করে দুধের বাটি উল্টে দেয়, ঠিক তখনই আরো এক শিশু পাস্টিকের ছোটো কাপে একটু চা লেগে আছে কিনা, সেই খোঁজ করে। খরমধ্যাহ্নে এর থেকে আর কি আশা করা যায় বলুন তো? আপনি হয়তো বলবেন, এতো কথা কেন বাপু? কে সে এমন মানুষ?  বিশ্বাস করুণ, এ  আপনাদের রাণু মণ্ডল নয়; এ আপনাদের ইউটিউবসহ  অতসীফুল নয়, এ আমাদের দারিদ্রের প্রতিনিধি। 

অনেক দুঃখে আজ এই কথাগুলো লিখছি। এসি কোচে তো সাধারণত বড়োলোকেরাই চাপেন। এতো অভাব আপনাদের বাড়িতে??  একটা কম্বল, একটা চাদর চুরি করতে হবে!  প্রত্যাখানের কৃতিত্বের সুখ দিচ্ছেন , নাকি মেকি বড়োলোকিপনায় দারিদ্রের বুকের রক্ত চুষে খাচ্ছেন, কোনটা!!  জানেন কি!!  ওদেরো মা, বৌ, ছেলে আছে। ওদেরো  বাড়িতে একদিনের খাবারের জন্য মা বসে থাকেন কখন ছেলে টাকা আনবে মায়ের ভাত চড়বে!!  এমন দুঃখ দেখেছেন!!  লুপ্তপিন্ডের মতো গিলে খাচ্ছেন আপনারা, আর লুকিয়ে যাচ্ছে সচল প্রেতচ্ছায়া। 

অতীত আর অনাগত হয়েই কি চলবে সারাজীবন। রেলকর্তৃপক্ষ নীরব৷ এমন ভাবে অপ্রাপ্তির দুঃখ কি প্রশাসনের চোখে পড়ে না। আর কতো চোখ বুজে থাকবে তুমি প্রশাসন!!  ঘরে ঘরে বেকার, ধর্ষণ, অনাবৃত কেস, আর কতো!  আর কতো!! নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে সমাজ, আজ তো জেগে ওঠার সময়। দয়া করে মানুষ হয়ে উঠুন, মানবিকতায়৷ আজ যে অসহায় মানুষ!!  মানুষ কাঁদছে...  আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন!!  গপ্পো করতে আসি নি, মৃত্যু রোধ করতে চাই...  ; আর দরজা বন্ধ করবেন না, দরজা খুলে জেগে উঠুন।  সচেতন হয়ে উঠুন!!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

2 comments so far,Add yours

  1. এর প্রতিবাদ চাই। সরকার এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সবাই এগিয়ে আসুন।

    ReplyDelete
  2. অসাধারণ লেখা। এই ভাবেই লিখতে থাকো সঙ্গে আছি প্রতি মুহূর্ত ।।

    ReplyDelete