শামা আরজু, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

আর কতো কাঁদবেন,সারাজীবন তো
 কেঁদেই পার করে দিলেন!

কী করবো আর?

জানেন আপনার সাথে কারো মিলবে না, আপনিই তো বলেন কেউ আপনার যোগ্য না।তবু কেন ওদের কথায় ভুলে যান!

আমি তো মানুষ, যন্ত্র না।

কিন্তু ওরা তো মানুষ না।

মানুষ কোথায় পাবো? 

সব অমানুষরা আপনার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করুক আর আপনি বারবার কষ্ট পান।

প্রথমবার মেয়ের বাবা নতুন বউ নিয়ে যে বাসায় উঠেছিলো সেখানে ওর এক ক্লাসমেটের বাসাও ছিলো।ওই মেয়েটাই আমার মেয়েকে বলতো তার পিতার বাধ্য আর অনুগত  স্বামী হয়ে ওঠার গল্প।আমাকে যে আপাদমস্তক কাজের বুয়া করে রেখেছিলো সেই এখন পুরুষ কাজের বুয়া।ঘর মোছে, কাপড় ধোয়।তার এখন ব্যায়াম করা লাগেনা কারণ সে বউ এর কথায় ওঠে আর বসে।যথেষ্ট ওঠ বস করা লাগে।ব্যায়ামের আর দরকার পড়ে না।কি করবে বেচারা ! এই বউও যদি তাকে ত্যাগ করে চলে যায় তবে যে তার আর মুখ থাকেনা।
মেয়ে মাঝেমাঝে বলতো মা ওই বেটিকে গিয়ে বলে আসি সব? বলে আসি ওই ব্যাটা (তার বাপ) কি করতো আপনার সাথে?  কি করতো আমাদের সাথে? বলে আসি,বেটি তুই চোর, আমার মায়ের সংসারের সব জিনিস তোর ঘরে!

আমি কেবলই থামিয়েছি।অন্যের সংসার ভাঙতে আমি চাইনি।
ফারুক যেটা আমার সাথে করেছিলো তানভীরকে বলে আমি তার বউ এর নাম্বারটা নিয়ে,সবই বলে দিতে পারতা, করিনি।মেয়েটার কি দোষ এই ঘুনে ধরা সমাজে ঘরভাঙ্গা মেয়ের জীবন খুবই ঠুনকো হয়ে যায়।বাচ্চাগুলি পড়ে চরম অনিশ্চয়তায়। জীবন  থেকে  নেয়া এসব শিক্ষা আমার চেয়ে আর ভালো কে জানে!

ম্যারিন ইজ্ঞিয়ারটাকে অবশ্য একটু শায়েস্তা না করে পারিনি।ভেবেছিলো আমি একা মেয়েমানুষ, ধমকালেই ভয় পাবো।অতো সোজা! ওকে আমি চিনতাম না, কেবল নাম জানতাম।নাম, পেশা,আর বন্ধুর পরিচয় বললাম এক বড় ভাইকে।বড় ভাই চিনলেন। ওই ব্যাটা ম্যারিনারের পরিবারে চলে গেলো কথাটা। ওর অবশ্য ঘর ভাঙ্গার ভয় ছিলো না। তার বউ বাচ্চা পয়দা করার আগেই ওকে ছেড়ে চলে গেছে। ওর বড় ভাই আমার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ক্ষমা চাইলেন এবং বললেন, প্রয়োজনে উনিই ক্ষমা চাইবেন আমার কাছে।আমি আর বাড়ালাম না।ওর বড় ভাই বলেছিলো -এরপরও যদি আমাকে বিরক্ত করে তবে যেন আমি উনাকে জানাই।না,আমাকে আর কিছুই বলতে হয়নি।বরং অনেক পরে ওই ম্যারিনার ফোনে আমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে।

আমি পারিনা মন থেকে ক্ষমা করতে। অাজব ! সে আমাকে এবং আমার মেয়েকে একই সংগে চাইতো। যে কথা কখনও মুখে আনতে ঘৃণা হতো আজ লিখতে গিয়ে সেই ভাবটা আর কাজ করছেনা।একদম না।যেন আমি হাওয়ায় ভাসছি। যেন আমি মহাশূণ্যে ভেসে বেড়াচ্ছি।
করবেই বা কেন আমি জানি আর আমার মেয়ে জানে,এই শহরে একাধিক বর্বর মানুষ আছে যারা আমকে প্রপোজ  করতো,আমার মেয়েকেও।আমি বলতাম মেয়েকে,মেয়ে বলতো আমাকে।আমরা দু'জন কখনও গলাগলি করে হাসতাম,কখনও কাঁদতাম খুব জড়াজড়ি করে।কখনও গান গাইতাম--- "প্রতিদিন যদি কাঁদিবি কেবল/ একদিন নয় হাসিবি তোরা/ একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া সকলে মিলিয়া গাহিবো গান/ আমার মতো সুখী কে আছে /আয় সখি আয় আমার কাছে/ সুখি হৃদয়ের সুখের গান/শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ"। 
না প্রাণ জুড়াতো না। জুড়ায় না।আমাদের স্বস্তিতে থাকতে নেই।আমাদের ব্যাটা নামের সাইন বোর্ড নেই।আমরা অরক্ষিত বরই গাছের মতোই।সবারই ঢিলাতে ইচ্ছে করে।আমরা ব্যথা পাই,রক্তাক্ত হই।আমরা আর্তনাদ করি।হৃদয়তো ছাই, কান অবধি যায়না কারো।
আমাদের আর্তনাদ আমরাই গুঁজে রাখি বুকের ভেতর।

হীরণ বিয়ে করলো। বুঝিয়ে বললাম। অন্য নারী আমার ঘরের জিনিস এমনকি আমার পরার শাড়ীগুলিও চুরি করে সংসার করছে।আমি ওদের মতো হতে পারবো না।তবুও আমার পিছু ছাড়ছে না।ওর দম বন্ধ হয়ে এলে ও নাকি আমাকে ফোন করে।আমি ওর অক্সিজেন।কিন্তু দম তো আমারও আছে!

এবার থামেন না। জানিতো। বলেছেন তো।

আমার মনে হয় না কাউকে এসব বলেছি।আর বললেই বাকি হয়েছে বলো! তোমার কি শুনতে বিরক্ত লাগছে? 

না, আপনার কান্না দেখে খাারাপ লাগছে।

আমার প্রথম বইটা পড়ার সময় পিংকু মোট পাচঁদিন ফোন করে জানতে চেয়েছিলো, আমি চৌদ্দটা বছর কিভাব এসব সহ্য করেছি।আর আমার বন্ধু রোজী ঐ বই পড়ে বলেছিলো -- তুইতো আসল কথাটাই লিখলিনা।

এবারের আঘাতটা এমন ভাবে আসবে কল্পনাই করিনি।সারাটাজীবন কেনই বা আমায় কাঁদতে হবে? আমি তো কেবল ভালোই বেসেছি, দুঃখী মানুষকে।আজকাল মনে হয় কিরণও আমায় যা বলেছে, সবই মিথ্যে।ওর পরিবারে ও খুব আদর্শবান একজন পুরুষ।ওর আসল রূপটা পরিবারে জেনে যাবে,  এই ভয়ে আমাকে সহ্য করে যাচ্ছে।নইলে অনেক আগেই সরে পড়তো।এসব বললে ওখুব রেগে যায়।আগে ও আমার সাথে রাগ করে থাকতে পারতো না। এখন আমি পারিনা।আমি অস্থির হয়ে পড়ি।ও বলে আমার ধৈর্য নেই।অথচ একটা সময় ও ই অস্থির হয়ে যেতো।এখন আর ও অস্থির হয়ে আমার কাছে  ছুটে আসে না। যে আবেগ নিয়ে ও শুরু করেছিলো তার ছিঁটে ফোঁটাও আর ওর ভেতরে অবশিষ্ট নেই।

ডিভোর্সের পর কাবিনের টাকা নিতে  চাইনি।আমার মনে হতো ওটা শরীরবেচা টাকা।বড়ভাই আমাকে এই নিয়ে খুব বকেছিলেন।আর কতো ছাড় দিবা ওকে!

আপা প্লিজ এবার থামেন।সবাই তো পার পেয়েই গেলো।ওরাতো কষ্ট পায়না।কষ্ট কেবল আপনিই পাচ্ছেন।

সে তো আমি নিজেই নিয়েছি।সবাই বাড়ী গাড়ী কিংবা গয়না অথবা প্রমোশন নেয়।আমি নিই দলা দলা কষ্ট।

"মানুষ এমনন তয় একবার পাইলে নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর"।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours