অমর কুমার নায়ক, প্রকৃতিপ্রেমী ও শিক্ষক

 সাপের সাথে আমাদের প্রথম পরিচয় খুব সম্ভবত আমাদের দেশের মেয়েদের পরম আরাদ্ধ মহাদেবের মাধ্যমেই। তার গলায় জড়ানো সেই জীবটি তাই আমদের প্রত্যেকের চেনা। আবার মনসা মঙ্গল কাব্যের দেবী মনসার বাহন হিসাবেও তার খ্যাতি কম নয়। স্কুল যাবার পথে প্রায় দিন দেখতাম রাস্তার ধারে ভিড়ের মধ্যে একটি লোক ক্রমাগত বাঁশি (বিন) বাজিয়ে যাচ্ছে আর একটি সাপ তার মাথা তুলে ‘নাচানাচি’ করে যাচ্ছে। আবার বর্ষা নামার আগে আমাদের গ্রামে সাপের প্যাঁটরা ঝোলায় নিয়ে একদল লোকের আবির্ভাব হত। এরা সাপুড়ে, সাপ খেলা দেখিয়ে নিজের জীবন ধারণ করে থাকে। সব মিলিয়ে সাপ আমাদের অত্যন্ত কাছের প্রাণী। ছোটো বেলায় বড়দের মুখে শুনতাম সাপ হল কলি যুগের ‘জ্যান্ত দেবতা’। তখন মনে প্রশ্ন উঠত, ‘দেবতা যদি হবেই তাহলে দেখলেই পিটিয়ে মারো কেন?’। এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এখন মনে হয় আমার পক্ষেও সম্ভব নয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সাপের বিভিন্ন অবস্থান। জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে সাপের মোট প্রজাতি সংখ্যা ৯৫টি। পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া উগ্রবিষাক্ত সাপগুলি হল গোখরো (Spectacle Cobra), কেউটে (Monocled Cobra), শঙ্খচূড় (King Cobra), কালাচ (Common Krait), চন্দ্রবোড়া (Russell’s Viper) এবং ফুরসা (Saw-scaled Viper) প্রভৃতি। তবে বিনের তালে নাচা বা শিবের গলায় থাকা সাপ হিসাবে অথবা ঘরের মধ্যে বা ধান ক্ষেতে মাঝে মাঝে যে সাপটি বেরিয়ে আসে সেটি হল গোখরো বা ক্ষরিস। ইংরাজি নাম Spectacle Cobra আর বিজ্ঞান সন্মত নাম Naja naja, মাথায় থাকা চশমার ছাপের মতো দেখতে হওয়ার জন্য বা গরুর ক্ষুরের মতো ছাপ হওয়ার জন্য এই নাম। গোখরোর বিষ নিউরোটক্সিক প্রকৃতির হয়। এটি সরাসরি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত হানে। এই সাপটি দৈর্ঘে তিন থেকে সাত ফুট অবধি হয়।
এদের মধ্যে রঙের তারতম্য বেশ লক্ষণীয়। খয়েরি, হলুদ, কালো এবং ধূসর বর্ণের গোখরো দেখা যায়। তবে অ্যালবিনো সাদা রঙের গোখরো সাপও দেখা যায়। এদের নাসারুন্ধ্র বেশ বড়, চোখ কালো এবং গোলাকার প্রকৃতির হয়। ফণা তুলে দাঁড়ালে মাথার চিহ্নটি দেখা যায়। ভারতের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। এদের যেমন কিছু জায়গায় পুজো করা হয় তেমনি আবার মানুষ ভয়ে মেরেও ফেলে। তবে চর্ম শিল্পে এদের ব্যাপক কদর থাকায় বহুল মাত্রায় এদের শিকার করা হত। ফলে এদের সংখ্যা এখন অনেক কম। ভারতীয় বন্যপ্রান আইন অনুযায়ী এরা সংরক্ষিত প্রজাতি। এদের ধরা বা মারা আইনত দণ্ডনীয়।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours