চন্দ্রাবলী বন্দোপাধ্যায়, ম্যানেজিং এডিটর, দ্য অফনিউজ, কলকাতাঃ
ছোটো বেলায় স্বাধীনতা মানে বুঝতাম,থানার মাঠে ছোট্টো একটা প্যান্ডেল, অনেক লোক, প্যারেড, বিস্কুট আর লজেন্স।
আর আমি খুব সকালে চুলে ঝুটি বেধে নতুন জামা পরে প্যান্ডেলের সামনে হাজির হতাম। কিসের জন্য যে যেতাম সেটা আজও অজানা, কিন্তু যাওয়ার উৎসাহে কোনো ঘাটতি ছিলো না। পাড়ার সব বাচ্চারাই ঝেঁটিয়ে যেতাম।
আমার বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। আমি বাবার স্বাধীনতা মানে বুঝতাম বেল্ট, বুট পালিশ, আর বেল্টের গায়ে পিতলের বোতাম পালিশ। আগের দিন থেকে চলতো তোড়জোড়, মা ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো আর পিতলপালিশ দিয়ে ঘষে ঘষে পিতল গুলো চকচকে করে রাখতেন। দত্তবাড়ির জ্যেঠিমা এসে মাকে তাড়া দিত, - কই দিদি, হলো আপনার?
মা যথারীতি উত্তর দিতেন,- এই হয়ে এলো দিদি, যাচ্ছি।
দুপুরবেলা করে মায়েদের তাসের আসর বসতো। তখন জানতাম না ওটাকে তাস বলে, জানতাম বড়দের খেলা।
মা কাজ সেরে, স্লেটে অ-আ লিখে, আমাকে তার পর হাটাতে বলে, কান মুলে পড়তে বসিয়ে চলে যেত পাশের বাড়ি।বাড়িতে আমি আর বুড়ি কাজের মাসি থাকতাম।
কাজের মাসি মা কে বৌ বলে ডাকতো, আর বাবাকে ব্যাঙাচি বাবু বলে ডাকতো।
খুবই অদ্ভুত লাগতো। একদিন মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, যে সবাই বাবাকে ব্যানার্জীবাবু বলে মাসি ওই রকম কেন বলে? মা বললেন, মাসি নাকি লেখাপড়া জানে না তাই উচ্চারণ করতে পারেনা ।
তখন জানতাম না ব্যাঙাচি মানে কি।
আমি রোজ বাবার কাছ থেকে কুড়ি পয়সা করে চেয়ে নিতাম। দুপুরবেলা হাওয়াই মিঠাই ওয়ালা যেই ঘন্টি বাজাতো ছুটে গিয়ে কিনে নিতাম। মা ঘরে থাকতো না, সেই সুযোগ কাজে লাগাতাম।মা থাকলে খেতে দিত না।
একবার স্বাধীনতা দিবসের দিন, আমি প্যান্ডেলের চেয়ারে বসে আছি, পাড়ার অঞ্জুদা বললো,- এই বুল্টি নাক ঝেড়ে আয়, নাকে সর্দি নিয়ে ফুরুৎ ফুরুৎ করিস না। আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে পিছনের দিকের চেয়ারে এসে বসলাম। বাড়ি গেলেই মা পড়তে বসাবে, আর নিজের নাক ঝাড়ার মত বয়সও হয়নি তাই বিকল্প পথ পিছনে গিয়ে বসা।
ছোটোবেলার এই টুকরো স্মৃতি টুকুই আছে বাদ বাকি ঝপসা।
স্কুল জীবনে কিছু স্মৃতি আছে তাও সে রকম পরিস্কার না।
শুধু ইতিহাসের পাতা থেকে সংগ্রহ করা কিছু স্বাধীনতার ছবি আছে মনের ক্যানভাসে। তাতে রক্ত গরম হয়না, সমালোচনা আসে। এই সব নিয়েই বঙ্গ জীবন কেটে যায়।
এখন স্বাধীনতা মানে বুঝি ফেসবুক স্ট্যাটাস আর একটা সরকারি ছুটি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours