শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:
পাকিস্তানের সংসদে আলোচনায়  ইমরান খান নিয়াজির সুর কিছুটা নরম ছিলো। যদিও বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ  ও পিপিপি নেতা বিলয়াল ভুট্টো   কড়া ভাষন দিয়েছেন। কেউ ভারতের  হাত কেটে দিতে চেয়েছেন, কেউ যুদ্ধের হুমকিও দিয়েছেন পাকিস্তান সংসদে। 
এই কাশ্মীর ইসুতেই কেবল সকল পাকিস্তানী রাজনীতিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। যদিও তারা তাদের দখলে থাকা কাশ্মীরের জনগনকে কাশ্মীরি ভাষা ভুলিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন উর্দু শেখায় পাকিস্তান! যে অপচেষ্টা তারা পূর্ববাংলায়,করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।

আমাদের দেশে কাশ্মীরের পক্ষে ব্যাপক জন সমর্থন রয়েছে। এ দেশের ধর্মীয় দলগুলোতো পারলে এখনি "জেহাদে" নামে। যদিও এ দেশের কাশ্মীরি সমর্থক অনেকই কাশ্মীরের ইতহাস ও ভূগোল সম্পর্কে অজ্ঞাত। নুন্যতম ধারনাও  নেই।  তাদের ধাারনা কাশ্মীর কেবল মুসলিমদের!  সেখানে যে হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু ও বৌদ্ধ বসবাস করে আসছে তারা তা ভুলে গেছে। বা জানেই না। জানবে কি করে। এ দেশের পত্রিকাগুলো তো কেবল কাশ্মীরের মুসলিম নির্যাতনের কথা বলে! লাখ লাখ  হিন্দু পন্ডিতদের যে কাশ্মীর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৮৯/৯০ সালে।  তাদের খুন করা হয়েছে পাইকারি ভাবে, ধর্ষন করা হয়েছে। এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়া হয়েছে গলিয়ে ফেলা হয়েছে দেহ। সে নিউজ এ দেশে ছাপা হয়নি। টিআরপি কমে যাওয়ার ভয়ে। জানবে কি করে, মানুষের জানার উৎস পত্রিকা ও বই। কাশ্মীর নিয়ে লেখা বইগুলো পরলেই বুঝা যায় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি থেকে লেখা। জুম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের রাজধানীর নাম জানে না। সেও কাশ্মীর নিয়ে ১৫ মিনিট জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়! যারা ৩৭০ ধারা জানলো গতকাল তারাও  চায়ের কাপে ঝড় তোলে। ফেসবুকে পোষ্টের পর পোষ্ট প্রসব করে। তার বা তাদের বক্তব্য ও চিন্তা কেমন হতে পারে কি হতে পারে তা,সহজেই অনুমেয়।

আর ৩৭০ ধারা কি তা তো অনেক ভারতীয়ই জানে না। অথচ সে ধারা একটি স্বাধীন দেশ বদলে ফেলেছে তা নিয়ে ঢাকায় যেন "যুদ্ধ ও জেহাদ " দুটোই শুরু হয়ে গেছে! কেউ কেউ তো দু কদম আগ বাড়িয়ে বলছেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি আমাদের উচিত কাশ্মীরিদের পক্ষে থাকা! অথচ ইতহাস বলে, কাশ্মীরি মুসলিমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোন কালেই ছিলো না! বাংলাদেশের মানুষ বড়ই বিচিত্র। পাকিস্তানিরা খুন করলো ধর্ষন করলো আমারা তা ভুলে গেলাম। আবার যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলো, যেমন কাশ্মীরি ও রোহিঙ্গা।  তাদের একদলের জন্য আমরা মিছিল করছি। আরেক দলকে তো জামাই আদরে পাহাড় বন কেটে পালাপোষা হচ্ছে। তার মানে এই নয়, যে কাশ্মীরি ও রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতন নীপিড়ন সমর্থন করা যায়৷ তবে আমাদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি,  ও  ইতহাসও মনে রাখা উচিত। তা না হলে তা হবে আত্মহত্যার সামিল। 

কোন বাঙালিকে কাশ্মীরে নাগরিকত্ব তো দুরের কথা বসবাসই করতে দেয়া হবে না। কোন ভারতীয়ও কাশ্মীরের নাগরিক হতে পারে পারে না ৩৭০ ধারা মূলে।  কিন্তু,  ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে কাশ্মীরে নাগরিকত্ব দেয়ে হয়েছে। তা তে তো, দিল্লীর মাথা ব্যাথা হওয়ারই কথা। আর বিজেপি সরকার তো লুকোচুরি করে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়নি। সব নির্বাচনেই তারা ইশতেহারে ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার কথা বলেছে। আর ৩৭০ ধারা তুলে দিলে ৩৫ এর এ,  অটোমেটিক্যালি বাতিল হয়ো যায়। ৩৫ এর এ,  আরেক অদ্ভুত ধারা! কোন কাশ্মীরি নারী কাশ্মীরের বাইরে কোন পুরুষকে বিয়ে করলে সে নারী তার সম্পত্তির অধিকার হারাবে!

এমনকি সে পুরুষ যদি মুসলমান হয় তবুও! এমন হাস্যকর, অসভ্য, বর্বর,মানবতা বিরোধী আইন কোন মানবিক, মানুষ জেনে বুঝে সমর্থন করতে পারে না। যদি কেবল, বিরোধীতার খাতিরে বিরোধীতা না করে।

পাকিস্তানের বন্ধু  চীন, সৌদী আরব পাকিস্তানের পক্ষে কথা,বলেনি। সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) এক কদম এগিয়ে সমর্থন দিয়েছে তা ভারতের আভ্যন্তরিন বিষয় বলে। কেজরিওয়াল ও তার আম আদমী পার্টি বিজেপি বিরেধীতা হলেও  ৩৭০ হটানো বিলে সমর্থন দিয়েছে৷ ওড়িষ্যার বিজিপি বিরোধী নেতা মুখ্যমন্ত্রীও সমর্থন দিয়েছে। দক্ষিনের কিছু বিরোধী দলও সমর্থন দিয়েছে।।এমনকি কট্টর মোদী বিরোধী মমতা ব্যানার্জীও সুর নরম করে ফেলেছেন!  কাশ্মীর ইসুতে পাকিস্তানের সকল দল যেমন এক হয়ে যায়। ভারতীয়রাও  তেমনি যুদ্ধ বেধে গেলে তারা সকলে এক হয়ে যায়, যাবে।

পুলওয়ামা  হামলায় ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুকে ভারতের অনেক ঝানু  রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনি খেল বলে জাহির করলেও, পাকিস্তানের ইমরান খান নিয়াজির তা পাকিস্তান ভিত্তিক  জঙ্গির কাজ বলে মেনে নেয়ায়  নরেন্দ্র মোদী এখন কট্টর হিন্দুবাদীর চোখে হিরো।  মোদীর এখন সু সময় চলছে। বিপুল  আসনে বিজয়,  ৩৭০ বাতিল করাতে তার জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। আমরা যতই তাকে হিন্দুৃত্ববাদী  বলে গালি দেই না কেন,  ঐ হিন্দুত্ববাই তার আসল পুঁজি। তাই তো তিনি নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার আগে ধ্যানে বসেছিলেন। এবার ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ বাধলে এবং পাকিস্তান পরাজিত হলে, নরেন্দ্র মোদী সুপার হিরোতে পরিনত হয়ে যাবেন৷  কি হবে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ  লাগলে কেউ কেউ বলেছেন, কাশ্মীর স্বাধীন হয়ে যাবে৷ সত্যিই যদি এক কাশ্মীর ভারতের হাত ছাড়া হয়ে যায় ভারতের ক্ষতি হবে অবশ্যই, তবে খুব একটা ক্ষতি হবে না। কিন্তু ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে যদি ৭১ এর মত এবার বেলুচিস্তান হারাতে হয় তবে পাকিস্তানের অস্তিত্বে টান পরবে। কেন না, বেলুচিস্তান প্রায় অর্ধেক পাকিস্তান এবং প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর।

বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাহত্যিক ডক্টর আহাম্মদ শরীফ সাধারনত কোন দেশ নিয়ে কথা বলেন না, কিন্তু তিনি অনেক আগেই ৯০/৯১ সালে  সন্দেহ পোষন করেছেন  পাকিস্তান আদৌ টিকবে কি না। ডক্টর আাহমদ শরীফের মত অনেকেরই এমনটাই ভাবনা। তবে আমরা মানবতাবাদীরা কোন সন্ত্রাস চাই না। যুদ্ধ তো চাই না। যুদ্ধে প্রথম আক্রান্ত হয় নারী ও শিশুরা।  সাম্রাজ্যবাদীদের অস্ত্র ব্যবসার প্রসার ঘটে। ভারত ও পাকিস্তান দুটিই পারমানবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। তাদের যুদ্ধ জড়ানো মানেই পারমানবিক বোমা হামলার সমূহ সম্ভবনা।  অথচ এ দু দেশে অসংখ্য ক্ষুধার্ত মানুষের নিরব কান্না কেউ শুনতে পায় না। কত মানুষ নিরক্ষর,  চিকিৎসারা অভাবে ধূকে ধূকে মরছে সে দিকে খেয়াল নেই শাসকদের! ভারত পাকিস্তানের মেহনতি মানুষের মুক্তি আসুক। কোন যুদ্ধ নয়। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours