জীবন রায় প্রাক্তন, সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

যে বোঝাবুঝিতে কোন তত্বের দরকার হয় না, দেখতে দেখতে বুঝে নেওয়া সম্ভব, সেটা অন্ততঃ বুঝলেও - কোন নিদৃষ্ট ভাবাদর্শের আশ্রয় না নিয়েও চলমান সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির যেমন একটা সীমারেখা পর্য্যন্ত মূল্যায়ন সম্ভব
----  তেমনি জাতি ধর্ম কিংবা অর্থনীতির চরিত্র নিরপেক্ষভাবে একটা রাষ্ট্রীয় সরকারের পরিবর্তনে নীতি যাই হোক না কেন আসু  অভিমুখটি কি হওয়া উচিত, সেটিকে চিহ্নিত করা খুব কঠিন হওয়া উচিত ছিলো না।
নীতি কিংবা ধর্মীয় অভিমুখ যাইহোক না কেন, একটা পরিবর্তনকামী সরকারের প্রথম নীতি হতে হোত
----- যা ছিলো, তা থেকে উন্নত ধরনের অর্থনীতি জনগনকে উপহার দেওয়া। অর্থনীতির চরিত্র যদি, দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে জন বিরোধী হয়েও থাকে, আসু পরিনাম হিসেবে বন্ঠনের দিক যেমন শক্তিশালী করতে হোত, তেমনি সাধারনভাবে সামাজিক একতাকে শক্তিশালী করার অভিমুখটিকে উন্মুক্ত করতে হোত। 
-----  কেন্দ্রে অটল বিহারীর সরকার এবং নরসিমহা রাও বা মনমোহন অর্থনীতির তুলনায়, যদি নরম প্রকৃতির তুলনায় মেনে চলা হয়, তবে নিশ্চিতব ভাবেই, শ্রীমতি মমতার সরকার একবারেই বিপরীত। এই মহিলার বোঝা কিংবা কারুর থেকে বোঝানোর লোক ছিলো না, যতে তিনি বুঝতে পারতেন
-----  বাংলার আগের সরকার পড়ে যাওয়ার যদি দুটি প্রধান কারন হয়ে থাকে (ক) মনমোহন অর্থনীতি এবং বিশ্বপুজিবাদী সংকটের বোঝা (খ) ভূমী সংস্কারকে, সমবায়ের পথ ধরে, গ্রামভিত্তিক শিল্পায়নকে শক্ত ভিত্তির উপরে দাড় করিয়ে, সাধারন শিল্পায়নের পথকে উন্মুক্ত করতে মারাত্মক পালটা আঘাত , তবে উনাকে  রাজনৈ্তিক বোঝাপড়াকে সংহত করেই  ক্রমে বিকল্পের পথটা উন্মুক্ত করতে হোত।

এই সুত্রেই, যখন দেখা গেলো, শ্রীমোদি অটলের পথে গিয়ে প্রথমেই ভেংগে পরতে থাকা আর্থ রাজনৈতিক, যতটা সম্ভব সন্তুলিত করে নিয়ে বাকি 'ধর্মীয় নীতিগুলির' জন্য সময়ের অপেক্ষা না করে
----- উনি রাতারাতী শ্রীমতির মতোই রাজনৈ্তিক সংহতির দিকে না  গিয়ে , রাতারাতি জিংগোইজমের পথে রাস্তায় নেমে গেলেন এল্বং সেই রাস্তায় নামায় অটল যখন মনমোহন সিং থেকে আরো এগিয়ে গিয়েও মনমোহন সিংগ থেকে রাজনৈ্তিক দিকে নিজেকে অনেক দূরে রাখলেন
----  শ্রীমোদিকে দেখা যাবে, দেশের পড়াশুনা করা  কিঞ্চিত  অর্থনীতিবোধ রয়েছে, এমন লোকজনদেরকেও বুঝিয়ে দিয়েছেন
----  শ্রীমোদির  রাজনীতি (সেটা হিন্দুত্ব, বা হিন্দু অথবা অযোধ্যা) হোক, সেটা কোন   অর্থনীতিকে ঘিরে নয় ( সে অর্থনীতি যে মেরুর হোক না কেন) সেটা ধর্মকে ঘিরেই। ঘটেছেও তাঃ তিনি যেমন টাকা বাজেয়াপ্ত করেছেন, রিজার্ভ ব্যংকার অনুমোদনে নয়, ধর্মবাবুদের হুকুমে তেমনি তিনি সরকারী কারখানা বেচতে বাজপায়ীর মতো কোন মন্ত্রককে দায় দেন নাই 
----- সরাসরি, হুকুম দিয়েছেন, রেল লাইন থেকে দুর্গাপুর কারখানা পর্য্যন্ত সব কিছুকেই বিক্রী করে দেওয়ার জন্য কারখানা প্রধানকেই দায়ীত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
----- একপ্রান্তে যখন রোজ শেয়ার বাজারে লক্ষ কোটী টাকা ঢুবে যাচ্ছে, অন্যপ্রান্তে একদিনে নাকি যখন বিশ্বের বানিজ্যিক পুজি প্রধান মুকেশের ২৯ লক্ষ কোটি টাকা বেড়ে যাচ্ছে
------ তখন তিনি,  হয় ৩৭০ তুলতে এবং একটা রাজ্যের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিতে পুরো রাজ্যটাকেই জেলখানা বানিয়ে দিয়ে (ভাবা যায়, বেচে থাকা, রাজ্যের সব মুখ্যমন্ত্রীকে গারদে ঢুকিয়ে দিয়ে
----- শুধু ইউরোপীয় নিরোর ভুমিকাতেই নয়, কার্য্যত মহম্মদ বীন তুগলকের ভূমিকা পালন করছেন। 

অর্থনীতির উলটো পথে যাত্রা শুরু করলে যা হয়, জিংগোইজম প্রথমেই 'গরুবাদ', পরে অধিবিধ্যাবাদ ক্রমে ৩৬ কোটি দেবতার পুনরাবির্ভাব ঘটিয়ে দেশ বিভাজনটাকেই প্রধান  এবং সেই বিভাজনকে পক্ষে আনতেই সব  রকম জ্ঞান ও সংস্কৃতি  বিরোধীতা
----- বাংলার ক্ষেত্রে শুধু রবীন্দ্র বিরোধীতাই নয়, রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধ বঙ্কীম চট্টোপাধ্যায়কে লাগিয়ে দিয়ে
----   জাতীয় সংগিতকে বদলে দিতে উনার লোক যখন দিল্লী হাইকোর্টে মামলা করছেন, তখন তার দলের কাউকে তিরস্কার করতে শোনা যায় নাই।
এই পরিস্তিতিতে এই 'তিন তালাকের মতো' বিষয়টিকেও ধর্মীয় বিভাজনের অংশ করে দিলেন, একে ফৌজধারীর বিচারভুক্ত করলেন। এদিকে সন্ত্রাস দমনের নামে একটা আইন করলেন।আমি একে, সত্তোর দশকের অভিজ্ঞতায় একে 'ধর আর ঢুকিয়ে দাও জেলে' বিনা বিচারে আটক হিসেবে নাম দিয়েছি। 
এদিকে দিন যত যাচ্ছে, ধর্মান্ধতার জিকিরগুলই যুক্তির মানদন্ডে ফেসে যাচ্ছে। এতোদিন যেখানে শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুকে নিয়ে, বাজার মাত করার চেষ্টা হচ্ছিলো,
---- এখন ইতিহাসের পাতা থেকে বেড়িয়ে এসেছে, নিজের একান্ত বন্ধু শেখ আবদুল্লাকে ১৯ বছর জেলবন্দী রেখেছিলেন নেহেরু এবং শেষ পর্য্যন্ত> ৩৭০ কে ঘিরেই ক্রমে, কাশ্মীর জাতীয়তাবাদকে (যাকে ধর্মান্ধরা মুসলমান ছাড়া কিছু বোঝেন নাই।) ভারতের অংশ করেন নাই। দল এমন কি পরিবারের পৃথক পতাকা থাকতেই পারে, কিন্তু কাশ্মীর ভারতীয় পতাকাকে ক্রমে মেনে নিয়েছিলো। ক্রমে ১৯৫৩ সালেই কাস্মির রিজার্ভ ব্যঙ্কের আওতায় চলে আসে। তবে কি বাকি রইলো ৩৭০ এর যার জন্য
------ পুরো রাজ্যটাকেই আজ পাকিস্থানের দিকে ঠেলে দেওয়া হোল। শেখ আবদুল্লার পর বেচে থাকা তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে আটক করে রাখা হয়েছে। 
-----  কালকের লেখায় বলেছে, যে ৩৭০ নম্বর ৪ঠা আগষ্ট পর্য্যন্ত আভ্যন্তরীন ছিলো, তাকেই রাতারাতি আন্তর্জাতীক করে, ১৬ই আগষ্টে সিকিউরিটি কাউন্সিলে পাঠিয়ে দেওয়া হোল, 
----   এদিকে কাস্মীরে যাদের উপরে লম্ফঝম্ফ, সেই কাশ্মিরী পন্ডিতরাই আরো ২৫০ জন কাশ্মিরী গুনীজনের সাথে এই ৩৭০ উঠিয়ে নেওয়ার বিরোধীত করছেন।

সব মিলিয়ে, আমরা আজ ধর্মান্ধদের হাতে কোথায় দাড়ীয়েছি, সেটার হিসেব নিকেশের সময় হয়েছে। 

সব শেষে একটা বিষয়কে উল্লেখে রেখে, আজকের লেখাটা শেষ করি। বিষয়টি, আমায় কয়েকদিন ধরে, ভেতরে ভেতরে হাসিয়ে চলেছে।
---- বিষয়টা এরকম। বিগত কয়েকবছর, আমাদের প্রধান মন্ত্রী, নিজেকে নেতাজীর সমকক্ষ হিসেবে প্রমান করতে গিয়ে
---- নিজেকে নেহেরুর উপরে উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। বাংলায় পুবের এবং পশ্চিমের দরজার তুলনা করতে গিয়ে একটা চলতি প্রবাদবাক্য রয়েছে। সেটা লিখে দেওয়ার রুচীর ঘাটতি আছি।

কেবল পাঠকদের সেই কথাটা বোঝানোর জন্য, যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম
----- আধুনিক অর্থনীতি যখন বিশ্ব অর্থনীতির সাথে, পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বিভাজিত হলেও, অন্যান্যনীতিগুলি সেই অর্থনীতির অভিমুখের সাথে যুক্ত হতে হবে, সেটা হোক না হিন্দুত্ব
----- সবাই বুঝতে পারছেন, অর্থনীতিটা কোন জাহান্নামে যাচ্ছে, কিন্তু 
----   ভদ্রোমোহদয়গন, কেউ কি কখনো নীতির দিক থেকে কি কেউ কোনদিন কণের মুখটা দেখেছেন, যা ঢাকা আছে ঘোমটার আড়ালে।

এবারে, দেখুন 
নেহেরুর হাত ধরে কেমনভাবে, অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, পঞ্চশীল, অর্থনীতির বিশ্বমুখ এবং গনতন্ত্রকে কিভাবে এক অভিন্নতার পথে ভেবেছেন।
সেই হরি সিং মহারাজা, যিনি কাশ্মীরের ভারতভুক্তির চুক্তি করেছিলেন, তার পুত্র সেকালের অন্যতম কেন্দ্রিয় মন্ত্রী জওহরলাল সম্পর্কে কি লিখছেন তা নিচে তুলে ধরেই লেখাটা শেষ করলাম। দুই দ্বারমুখের তফাৎটা বুঝা সম্ভব হবে। 
"Nehru ... as he had traveled across the world and studied at Cambridge. His anti-colonialism movement was not only confined to India but was also represented in Africa, Indonesia and he always believed in these ideals.... The result of this was that Nehru got directly involved in the discovery of India and thought that it was not only about the freedom of India but about freeing the world of imperialist yolk.  
In Parliament,  talked in terms of great historical movements in his letters to world leaders and even revealed his understanding of global affairs in his letters to his daughter Indira. Thus, Indian freedom movement was part of a major global trend and showed Nehru as an internationalist par excellence..... He looked at the UN as an important step for creating a structure for the world. He was influenced by socialism and said no to the world being divided into two power blocks. He used to say that we will develop out own path and started interacting with global leaders like Tito, Abdul Nasser, Sukarno and Julius Nerere. India became a hub on the non aligned movement.
When the Commonwealth was formed   Nehru worked out a structure which accepted the Queen of England as the head of Commonwealth but not of India.

Concerns

This has happened in our lifetime. I am convinced forums like ASEAN and SAARC are needed for Asia in international affairs. BRICS is another example of Nehruvian thought that developing countries should come together.

Nehru's concept of non-alignment brought India international prestige among newly independent states that shared its concerns about the military confrontation between the superpowers and the influence of the former colonial powers. New Delhi used non-alignment to establish a significant role for itself as a leader of the newly independent world in such multilateral organisations as the UN and the "non-aligned movement".
Dr. Karan Singh saw signing " the Treaty of Peace, Friendship, and Cooperation between India and the Soviet Union in 1971 and India's involvement in the internal affairs of its smaller neighbours  
Nehru’s concept of the Panchsheel Agreement, which believed in peaceful resolution of international disputes, and international cooperation to spur economic development, was enhanced by domestic economic reforms.  

For Nehru the policy of non-alignment was an indigenous product, emanating from India’s long struggle for freedom. So were probably the compulsions of the leaders of the Asian, African and Latin American countries who were able to assert their national identities mainly by adopting the policy of non-alignment. "
It was told to Amit Agnihotri, and printed in India To-day./

যদি গভীরে গিয়ে বিচার করা যায় দেখা যেবে, ভারতবর্ষ নামক সেই দেশটা,\
----- যা পুজিতান্ত্রিক দুনিয়ার সবথেকে বৃহত্তম জনসংখার দেশ, আর দুই বিশ্বকে ধরলে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ - সেই দেশটার রাজনীতি ক্রমে এক চোরাপথ ধরে উল্টো অর্থনীতির সাথে চলতে থাকায়
----   ক্রমে রাজনীতির বিভিন্ন অংশ এক থেকে অন্যে বিভাজিত হয়ে গিয়ে যে ভাবাদর্শগত সংকটের জন্ম দিয়েছে এবং সংকটই ক্রমে দেশের রাজনীতিকে শ্লোগান সর্বস্যতা এবং জিংগোবাদের দিকে ঠেলেছে
----  ডঃ করন সিংহের এই বিবরনী থেকে স্পষ্ট।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours