শামা আরজু, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

তিনি সেলিব্রেটি কেউ ছিলেন না।

জাহাঙ্গীরনগর ভার্সিটিতে পড়তেন তিনি।ছিলেন তুখোড় ছাত্রনেতা।তখনকার সময়ে মেধাবী ছাত্ররাই রাজনীতি করতো।বিসিএস দিয়ে সরকারী বড়ো পদে চাকুরী পাওয়া তাঁর জন্য কোনো ব্যাপার ছিলোনা।
কিন্তু তিনি তা করবেন না।আদর্শের সাথে মিলিয়ে ভূমিহীনদের স্বার্থে কাজ করার ব্রত নিয়ে পরিবার পরিজন সেই কুষ্টিয়ায় ফেলে  ১৯৮৬ তে চলে এলেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে এখানে।প্রান্তিক এলাকায় কাজ।সীমাহীন কাজের চাপ।

ভাবী অসুস্থ।একা ছেলেটাকে নিয়ে প্রায় একাই জীবনটা কাটিয়ে দিলেন।ভাবী পারতেন ঢাকায় অন্য কোনো ভালো চাকুরী নিয়ে ভাইয়াকে ঢাকায় শিফ্ট করতে।ভাইয়া যাবেন না।অাদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা তাঁকে দিয়ে হবেনা।অনেকবার আশ্বাস দিয়েও তাঁকে বদলী করলেন না ঢাকায়।মানসিক টানাপোড়নে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।কতো কথাই তো বলা হয়না আমাদের । মারা যাওয়ার দশদিন আগে ফোনে আমাকে বলেছিলেন- আপুমনি, ভাবছি চাকুরী শেষ করে বাড়ীতে থাকবো কী করে! বাইরে থাকতে থাকতে ঘর যে বড়ো অচেনা লাগছে।
আমি বাসে ঢাকা যাচ্ছি।কথা বোঝা যাচ্ছিলো না।ভাইয়া আরও কিছু বলতে চাইলেও শোনা হলো না।জানি না কী ছিলো সেই না বলা কথা।
আমাকে আর কেউ কোনোদিন আপুমনি ডাকবেনা। এ নীতি অনেকটা নেশার মত। ছাত্রকালে দেখেছি অনেক মেধাবী সহপাঠী বন্ধু দল করতে গিয়ে শিক্ষা থেকে অনেক দূরে চলে যায়।কিসের লোভে যেন দলীয় কর্ম্মে ওরা নিজেদের এত সম্পৃক্ত করতো যে তার উপর বাবা মার আগামীর স্বপ্ন রয়েছে, তা ওদের মনেই থাকতো না। কম সংখ্যক শিক্ষার্থী এই রোড হতে বের হতে পেরেছে।তাই এই নীতি যাদের একবার পেয়ে বসে সে সংসার সন্তান স্ত্রীর দায়িত্ব বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু ভাইয়া বেমালুম ভুলে যাননি, বেমালুম ভুলে গেলে তিনি অসুস্থ হতেন না। মানসিক টানাপোড়নে থাকতেন না।
এটাই সত্যি।
২০১৬ তে বাড়ী যাবার পথে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর জীবনের সব লেনদেন ফুরায়।
ভাবী আমাকে কাঁদতে কাঁদতে সেদিন বলেছিলেন-আপা,আপনিতো লেখালেখি করেন।এগুলি একটু লিখবেন তো!

একজন খুশী ম্যাডামকে সবাই চিনে।কিন্তু জাহাঙ্গীর বুলবুলকে কে মনে রাখে! 

নষ্ট রাজনীতি!
নদী নষ্ট বীজ নষ্ট...।




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours