তরুনার্ক লাহা, শিক্ষক ও লেখক, বাঁকুড়াঃ

সর্দার পাড়ার সর্দার কুকুরটাই খবরটা প্রথম পেল।
পাঁচটা ছানাপোনা নিয়ে ভীষণ দুর্বল সুন্দরী ।বিশেষ করে সর্দারের চোখে এই মাদী কুকুরটি সুন্দরীই মনে হয়।পথে ঘাটে  অনেক মাদীই ঘুরে বেড়ায়।কিন্তু সুন্দরীর প্রতি সর্দারের টান বেশী ।
ঘোষ পাড়ার এক গলিতে সুন্দরীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ।সেদিন থেকেই সর্দার সুন্দরীর প্রেমে মজে যায় যাকে বলে Love at first sight.তারপর থেকে কোনো কুকুরকে সুন্দরীর ছায়া মাড়াতে দেয় নি।প্রথম প্রথম ভীষণ রাগ হতো সুন্দরীর।এতদিন নানাজনের সানিধ্য উপভোগ করে এসেছে অথচ সর্দার আসতেই......
সর্দার কাছে এলেই সুন্দরী ঘেউ ঘেউ করে অসন্তোষ প্রকাশ করত।সর্দার প্রতিবাদ করত না।তারপর থেকে সর্দারের প্রতি কেমন যেন একটা  টান পড়ে গেল।সর্দারের ভালোবাসায় অতীত হারিয়ে যায়।এখন মাঠে ঘাটে যখন খুশী দুজনে এক হয়েছে।ঘোষ পাড়ার কুকুরগুলো দূরে দাঁড়িয়ে হিংসায় জ্বলে পুড়ে খাক।এবছর এই পাঁচ ছানাপোনার জন্মদাতা এই সর্দার ।
ঘোষ পাড়ার লজে আজ বিয়ে বাড়ি।খাবার দাবারের অঢেল আয়োজন।লজের চারপাশে আলোর রোশনাই ।খাবারের গন্ধে বাতাস বেশ ভারী ।ডাষ্টবিনের চারপাশে পাড়া বেপাড়ার অনেকেই ঘুরঘুর করছে।
সর্দার  সুন্দরী আর ছানাপোনাদের এক ঝোপে রেখে চলে আসে ঘোষ পাড়ার লজের সামনে।সুন্দরী সর্দারের প্রতিক্ষায় বসে থাকে।
ডাষ্টবিনে খাবার ফেলা শুরু হতেই হামলে পড়ে সবাই ।সর্দারের শরীরে জোর মারাত্মক ।দাঁতগুলো যেন শানদেওয়া বাটালি। ঘোষ পাড়ার কুকুরগুলো রণে ভঙ্গ দেয়।তারা সরে যায় পাশের ঝোপে।তাদের মনে সুন্দরীর সানিধ্য না পাওয়ার জ্বালা এবং আজ পিছু হটে যাওয়ার গ্লানি ---মনে আগুন জ্বলে তাদের।
সুন্দরীর অপেক্ষা যেন শেষ হতে চায়।সারারাত ছানাপোনাদের নিয়ে অভুক্ত থাকে।চোখের পাতা কিছুতেই এক হয় না।সে জানে দিনকাল বড্ড খারাপ ।আবার মনে একটা সন্দেহ দানা বাঁধে-অন্য কোনো......
ভোরবেলায় সর্দারকে খুঁজতে বেরোয় সুন্দরী ।লজের সামনে এসে দেখে সর্দারের ক্ষতবিক্ষত মৃত শরীরটা।
কিছুক্ষণ জুলজুল করে তাকিয়ে ফেরার পথ ধরে।ঝোপের আড়াল থেকে ঘোষ পাড়ার কুকুরগুলো সব দেখে।
সুন্দরী নিজের জায়গায় ফিরে আসে।সঙ্গে ঘোষ পাড়ার মতি,ভুলো,কালু,বিচ্চু।এরপর আবার নতুন সঙ্গী ,নতুন জীবন ।


                                
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours