সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:  এই মুহূর্তে আমি চন্দ্রাহত। লাল রঙের আবেশে দিশেহারা। তাই, অধ্যাপক দাদা কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন, বুঝতে পারিনি। যাবে নাকি লোকাল ডান্স দেখতে?কোথায় দাদা? আশেপাশে কোথাও হচ্ছে।আওয়াজ পাচ্ছি। ছেলে মেয়ে গুলো?আরে আমাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে আমার ঘরটার দখল নিয়েছে। ছি,ছি কি কান্ড। প্রাণখোলা হাসিতে অন্ধকার খানখান হল। পাশের হোটেলেই আসর বসেছে।নাচ গানের বিশেষ মাহাত্ম্য নেই।তবে শীতের আমেজে আবাল বৃদ্ধ বনিতার গা গরম হচ্ছে।শুরুতে প্রায় কুড়ি বাইশ জন মেয়ে ছিল আস্তে আস্তে মেয়ে কমছে।বুঝতে পারলাম শহুরে বাবুদের আসল গা গরমের ব‍্যবস্থা পাকা। এসবে আমার বড্ডো কষ্ট হয়। তোমার ভালো লাগছেনা না? না দাদা। আত্মকথনের মতোই বলে চললেন, জানো তোমার বৌদি এখানেই ব্লকে ছিলেন। 
এখান থেকে তিরিশ টি মেয়ে আরবে পাচার হচ্ছিল।ও একটা ইন্টারন‍্যাশানাল র‍্যাকেটকে ধরে।বুঝতে ই পারছো জীবন নিয়ে টানাটানি।ও যেতে চায়নি।বড্ডো জেদী।সরকার ই ওর ফোর্স ট্রান্সফার করে। হঠাৎ ই এক অদেখা মানুষের জন্যে শ্রদ্ধায় আনত হলাম। ফিরে এলাম হোটেলে।লঞ্চ থেকে খাবার নিয়ে সাদেক বাহিনী উপস্থিত।ঘরে ঘরে ডাকাডাকি চলছে।মাথা ব‍্যাথা,শরীর খারাপ তাদের ঘরেই খাবার পাঠানো হল।টানাটানি করে তোলা গেল না জিমকে।সে এখন হাইবারনেশনে। খাবার জায়গা টা হোটেলের বাগানের মধ্যে। মেনু বেগুনভাজা,সীম চচ্চড়ি, পাবদা মাছ।সমোঝদাররা বললো পাবদা নয়,হাঙরবাটা।এই নামটা প্রথম শুনলাম।কোথায় হাঙর কোথায় বাটা?বাপরে। কোনায় বসে আছি।প্রায় সকলের খাওয়া শেষ।এক দুজন বাকী।দিদি আপনাকে দিই।না ভাই ।ওরা আসুক।সাদিক বলে উঠলো বাপরে সকাল থেকে দুই দাদা কি সার্ভিস দিচ্ছেন।এখন আবার জল দিতে গেলেন। এসে পরেছি সাদিক।হলো আপনার?দিদি বসে আছেন আপনাদের জন্য। এবাবা,এগারো টা বাজে তুমি বসে আছো? বাবা জানলে মারবে। জানেন রায় দা ওদের বাড়িতে নটার পর গেলে ওর বাবার কাছে পারমিশন নিয়ে তবে এন্ট্রি।বাবারে। আরে তাহলে আমার আর যাওয়া হলনা।টুকরো টাকরা হাসির মধ্যেই,আরে সাদিক তুমি ও বসোনা আমাদের সাথে খেতে। ও এককথায় রাজী হয়ে গেল।দিদি আমার বৌ।মোবাইল খুলে ছবি দেখালো। মিষ্টি বছর কুড়ির মেয়ের ছবি। ও মরেনি।মানে? চমকে তাকাতেই সে শুরু করলো---- আমি অনাথ।
ফাদার ফেডরিক আমাকে বড় করেন।বিয়ে করবোনা বলেছিলাম, ফাদার ওর সাথে বিয়ে দিলো।ও তখন নাইনে পড়ে।খুব মাথা পরিষ্কার মেয়ের। বি এ পাশ করলো।ভালো চাকরি ও পেলো।লম্বা শ্বাস টেনে বললো ----চলে গেল।নিস্তব্ধ চরাচর জুড়ে এক দীর্ঘায়িত শব্দ‌। সে যে চলে গেল,বলে গেলনা। সে কোথায় গেল......(ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours