ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে! রাঢ়ের একটি বিস্তির্ন অঞ্চল 'গোপভূম ' নামে পরিচিত , যেখানে গোপ রাজারা প্রায় সাত'শ বছর রাজত্ব করেছিলেন! এঁদের মধ্যে ঢেকুর গড়ের রাজা ইছাই ঘোষ, ভাল্কীর রাজা ভল্লুপদ, হরিশ্চন্দ্র, অমরার গড়ের রাজা মহেন্দ্র, রাজা বৈদ্যনাথের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ! এঁরা ছাড়াও অন্য আরও কয়েকজন প্রভাবশালী গোপরাজারা গোপভূমে দাপটের সাথে রাজত্ব করেন!
এ প্রসঙ্গে প্রথমেই কাঁকসার রাজ পরিবারের কথা উল্লেখ করা যায়! যদিও এঁরা ইতিহাস স্বীকৃত রাজা নন!কিন্তু আঞ্চলিক ইতিহাসে এঁদের উল্লেখযোগ্য স্হান আছে!এই রাজ পরিবার সম্পর্কে নানা কিংবদন্তী ও জনশ্রুতি ও প্রবাদ প্রচলিত!
ভল্লুপদের রাজ বংশের মতো কাঁকসার রাজ পরিবার প্রথমে গোপ সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল, পরে সদগোপে পরিনত হয়! যদিও এঁদের বিশ্বাস ছিল এঁরা যদুপতি শ্রী কৃষ্নের বংশধর এবং যাদব ক্ষত্রিয়!
কিন্তু পরবর্তীকালে এঁরা পশুপালন ছেড়ে কৃষিকেই প্রধান জীবিকা বেছে নেওয়ায় সদগোপ নামে পরিচিত হন! দক্ষিন বঙ্গে সদগোপদের আর একটি শাখা মহিষ্য, যাঁদের জীবিকাও কৃষি! এরা সদগোপ নন! সদগোপরা গোপেদের একটি শাখা, কিন্তু মাহিষ্যরা কৈবর্ত সম্প্রদায়ের শাখা! এঁরা মৎসজীবি থেকে কৃষিজীবিতে পরিনত হয়ে জালিক বা হালিক কৈবর্ত থেকে নিজেদের ' মাহিষ্য ' বলে নিজেদের পরিচয় দেয়! তাই সদগোপরা গোপ সম্ভুত, কিন্তু মাহিষ্যরা সদগোপ নয়, তারা কৈবর্ত থেকে কৃষিজিবী মাহিষ্য...মাহিষ্যরা কখনই গোপভুমের প্রকৃত অধিবাসী নয়!
গোপভুমের উল্লেখযোগ্য কাঁকসার রাজ বংশ কে কেন্দ্র অনেক কিংবদন্তী আছে! দ্বাদশ শতকের শেষ ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে সুদুর রাজপুতানা থেকে কঙ্কসেন রাও নামে সূর্যবংশীয় রাজপুত্র গোপভুমের (বর্তমান কাঁকসা) জঙ্গলাকীর্ন বিস্তৃত এলাকা বসবাসের জন্য পরিস্কার করবে গিয়ে একটি শিবলিঙ্গ আবিস্কার করেন!
সেই শিবলিঙ্গকে তিনি ভক্তিভরে পূজা শুরু করেন! কঙ্কসেন রাও এই শিবলিঙ্গ আবিস্কার করেন তাই শিবের নামকরন করা হয় ' কঙ্কেশ্বর '! জনশ্রুতি, কঙ্কেশ্বর শিবের নামানুসারে এই জনপদের নাম হয় 'কাঁকসা'!
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours