সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:
সেই বাসের দরজার মহিমা তখন ছোট বয়সে বোধগম্য হয়নি।বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঠুনকো জাগতিক দরজা বা কাল্পনিক দরজা কতো অলঙ্ঘনীয় হয়ে যায় সেটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যায়।
আড়ি ভাবের আঙুল গুলোও বড্ড শক্ত হয়ে ওঠে।
তাই ছায়াযুদ্ধেই হারিয়ে যায় কত শত সম্পর্ক।
যাক সে কথা।এখন ফিরে আসি জাগতিক আগলে।
যা খুব দরকারী হয়ে পরে যাত্রা পথে।যা মন্দির মসজিদের থেকেও পবিত্র সেই"সুলভ"।
ভেরীর পর ভেরী ।ধানের ক্ষেত।কখনও বা সরিষা ক্ষেত ।মাঝে এক ঝাঁক বক উড়ে গেল।উত্তেজিত জিম
ওরাও কি সূন্দরবন যাচ্ছে মা?পানকৌড়ি, মাছরাঙা, ঘুঘু,ছাতারের দল নিজেদের মত শীতের রোদ পোহাতে ব্যস্ত।
ওরাও বোধহয় শীতের ছুটি পেয়েছে।
পথে কিছু হাটুরে বাসে উঠে পরলো।আদুরে বৌদিরা ছিনতাই এর ভয়ে কাতর হয়ে দাদাদের বলে ফেললো কি দরকার ছিল ওঠানোর?
হায়রে শহুরে সভ্যতা।বড্ডো হাসি পেতে লাগলো।
এদিকে সবারই সুলভ মন্দিরের দরকার বোঝা যাচ্ছে।
উঠে গিয়ে ঐ ছিনতাইবাজদের কাছে বাথরুমের খোঁজ নিলাম।আমাকে নিশ্চিন্ত করে তারা দশ মিনিট সময় চেয়ে নিলো।
ধাইধপাধপ বাস পিটিয়ে তারা দাঁড় করালো কম্বোপ্যাক চা সিগারেটের দোকান সাথেই ঘরোয়া সুলভ।নেমেই সকলের দৌড় বুঝিয়ে দিলো স্থান মাহাত্ম্য।
এদিক ওদিক দেখতে দেখতে উৎসাহিত হলাম ,দেখলাম ইনটারপ্রেনিয়ার মহিলা। মহিলারা কিছু করলেই একটা ভালো লাগা আমাকে তার নিত্য দিনলিপি ও আগামীর স্বপ্ন জানতে আগ্রহী করে।
চারটি ঝকঝকে বাথরুমকে ঘিরে বেশ কিছু দেশি সাদা,গোলাপি গোলাপ।লাল জবা ও হলুদ সূর্যমুখী।মাঝে কপি,পালঙ।সবাই যেন হাসছে।
কি যত্নের ছাপ সেই ছোট্ট বাগানটিতে।
স্বপ্ন যেন কথা বলছে।
এককাপ চা নিয়ে বসলাম মহিলার পাসটিতে।কথায় কথায় জানা গেল স্বামী ছেড়ে পালিয়েছে।ছেলে ,মেয়ে নিয়ে এই দোকানের পেছনেই আস্তানা।তারা নিয়মিত স্কুলে যায়।
শীতের ছুটি, মেয়ে তাই মায়ের সাহায্যকারি।
মা বললো যা না মাসীকে আমাদের জায়গাটা দেখা।এক বুক স্বপ্ন নিয়ে মেয়েটা দেখাচ্ছে ওদের খালি জমি যেখানে ওরা তৈরী করবে কটেজ, রিসোর্ট।
কদিনের মধ্যেই ওরা চালু করবে রুটি,সব্জি।তার পর ভাত।ওদের স্বপ্নের হাড়িতে ভাতের গল্প।হার না মানা এক মায়ের গল্প।
সুলভের সঠিক ব্যবহারে সকলের দিলখুশ।আদুরে বৌদি পাশে এসে বসলো এই তুমি অমন চুপচাপ কেন?আমাদের সাথে জয়েন করছোনা।ঐ চাওয়ালীর সাথে বেশতো গল্প করছিলে।
শব্দটা কানে খট করে লাগলো।নিজের স্ট্যাটাস সচেতন মহিলাকে খুব বলতে ইচ্ছে করলো উনি পরের ধনে পোদ্দারি করেননা ওনি শ্রমজীবি।
না বলা কথা বুকের মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো।
বাসের ওঠার তাড়া শুরু হয়ে গেছে।ঐ স্বপ্ন শিকারী মেয়েটিকে কথা দিলাম পরেরবার তোমার রিসোর্টে ই থাকবো।
বাস আবার গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করলো।
..................... (ক্রমশ)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours