vromon kahini
 সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:  আজন্ম কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যেই বেড়ে উঠা। মা বলেছিল পক্ষীরাজের "বাচ্চা ঘোড়া "কিনে দেবো।সে কথা রাখেনি। আজ হঠাৎ ই এই বাসে চেপে পক্ষীরাজের কথা মনে হলো। পেটে তিনশো লোক ভরে কলকাতার ট্রাফিক সামলে রোজ এই বাস বাসন্তী যায়,আজ খালি রাস্তায় তিরিশ জন যাত্রী নিয়ে চলেছে।তাই তার পেছন সিটে বসা যেকেউ নিজেকে সঙযুক্তা মনে করতেই পারে। ওরে বাবারে মাগোরের মধ্যেই এক আদুরে বৌদি তার পরানপ্রিয় দেবরকে বললো এই বাসের দরজা টা বন্ধ করোনা,বড্ড ভয় করছে গো।
এত বড় দরজা যদি পরে যাই? এমন আবদারে , পুরুষের বিচলন দর্শনীয়।দেবর,তার বীরত্বের সবটুকু দিয়ে দিলেও, দরজা বন্ধ হলোনা।খালাসী খসখসে গলায় বলে উঠলো ওটা রাতে ছাড়া বন্ধ হয়না। নানা গলার হাসির মধ্যে রসিক দাদা বলে উঠলেন রাতের দরজা কিন্তু আমি নিজেই বন্ধ করি। বৌদির মিষ্টি অসভ্য বাতাসে মিলিয়ে গেল। এই বাসের দরজা নিয়ে ফেললো সেই কলেজ জীবনের, কলকাতায়। লেক কলোনি বা উদ্বাস্তু কলোনি। সেই প্রথম প্রথাগত জীবন যাপন ছেড়ে ঘর বেধে ছিলাম এক বৃদ্ধ,দরিদ্র শিল্পী ও তার মেয়ের সাথে।যারা সম্পর্কে পরমাত্মীয়। সেএক মজার সময়।বারো ঘর এক উঠোন।এখন ও ঐ অটুট বন্ধনের সম্পর্ক গুলোকে কিছুতেই আলাদা করতে পারিনা। তা, এক পরমাত্মীয় ছিলেন এমন এক রুটের বাস ড্রাইভার।পুজোর সময় বাড়ি ফেরার ট্রেনে তোলার দায়িত্ব পরলো তার ই হাতে।যেদিন ওনার ফ্রাস্ট সিপ্ট যেদিন এক কাক ভোরে চলে এলাম লেক ডিপো।সারি সারি দরজা বন্ধ বাস।সে দরজা ও দারুন মজার।ওপর খালি নিচে খালি তাতে আবার তালা। মিনিবাসের দরজার থেকে একদম আলাদা।সে বয়সের অকারন হাসির খোরাক হয়ে গেল ঐ দরজা।খালাসী দৌড়ে এসে চাবি নিলো।তিনবার মাথায় ছুয়ে দরজা খুললো।বাসের চার চাকায় জল দিলো ধূপ দিয়ে ভেতরের কালীমা ,শিববাবার পুজো করলো।সামনের গুমটিতে বসে যা দেখি সব্ই নতুন চোখে দেখার 'অপার বিস্ময়"। কেউ পাশ থেকেই যেন বলে উঠলো দীলু ভাই সঙ্গে ক‍্যাডা? চ‍্যানার মাইয়া। ও বাউস‍্যার নাতিন। এক বৃদ্ধা ঘুমটির পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো। দেহি দেহি চ‍্যানার মাইয়াডারে। 
বাপের মত রঙ পাইছে। তোর বাপরে বলিস জটা মাসীরে দ‍্যাখলাম।হঠাৎ ই ঢিপ করে প্রনাম করাতে জটা মাসী কেনো যেন কেঁদে ফেললো। জটা মাসীর দেওয়া বিস্কুট মুখে পুরে খালাসীর সিটে বসে ঢুলতে ঢুলতে হাওড়া চল্লাম। খালাসীর হাতে বাসের ভার দিয়ে সেই লোকাল গার্জিয়ান চললেন আমাকে ট্রেনে তুলতে। ছটা দশের ব্ল্যাক ডায়ামন্ড ট্রেন নয় নম্বর প্লাটফর্মে আসছে। আজও কেউ কি স্বজন মিলনের অনুভূতি নিয়ে দুরুদুরু বক্ষে ঠিক ঐখানেই এসে দাঁড়ায়? (ক্রমশ) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours