fiture
রাজশ্রী মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, ঝাড়খণ্ড: ভারতীয় টাকার নাম পোষাকী নাম রূপয়া কিভাবে হল তা হয়তো অনেকেই জানেন না ।যদিও এই শব্দ মূলতঃ সংস্কৃত থেকেই এসেছে ,এটি ভারতবর্ষের আফগান রাজা ,শের শাহ ,তাঁর রূপোর মুদ্রার জন্য ব্যবহার করেন ।শের শাহ ছিলেন, ভারতবর্ষের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন সম্রাট যিনি মুঘল বাদশাহ, হুমায়ুনকে পর্যুদস্ত করেন ।তাঁর কারণে হুমায়ুনকে (1533-45)পর্যন্ত,সাত বছর স্থান থেকে স্থানান্তরে ঘুরে বেড়াতে হয় ।তবে শেরশাহ যেমন এক সাহসী, বীর ও দক্ষ যোদ্ধা ছিলেন, তেমন একজন সফল শাসকও ছিলেন ।তিনি নিজের শাসনকালে এমন সব অর্থনৈতিক ও পরিকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়ন করেন যা মুঘলরাও অনুসরণ করেন।তিনি পূর্বের তৈরি 10 গ্রামের, মিশ্র ধাতু নির্মিত টঙ্কার পরিবর্তে 11.66গ্রামের রৌপ্য মুদ্রা শুরু করেন যার নাম হয় রূপয়া ।এছাড়া সর্বসাধারণের জন্য তাম্র মুদ্রা শুরু করেন, যার নাম হয় পয়সা । 
রূপয়া বা রুপী শব্দটি কিন্তু সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রাপ্ত, যার অর্থ ছিল গলিত রুপা এবং পূর্বকাল থেকেই সাধারণভাবে রৌপ্যমুদ্রার জন্য ব্যবহৃত হত।গুপ্তবংশের রাজারা এর নাম দিয়েছিলেন রূপাকা ও স্বর্ণমুদ্রাকে দীনার ।এর পূর্বে মৌর্যবংশের রাজারা রৌপ্যমুদ্রাকে রুপ্যরূপা ও স্বর্ণমুদ্রাকে স্বর্ণরূপা হিসেবে আখ্যা দেন।কিন্তু শেরশাহ এই রৌপ্যমুদ্রাকে এক নির্দিষ্ট ওজনে বেঁধে দেন,যা মুঘল বংশ থেকে ব্রিটিশ রাজত্ব পর্যন্ত মেনে নেওয়া হয় ।আজকের দিনে রূপয়া বা রূপী,ভারতবর্ষ ছাড়াও পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া,মালদ্বীপ, নেপাল, ভূটান,সেচিলিস ও শ্রীলঙ্কার মুদ্রার নাম। শেরশাহের প্রচলিত রূপয়া ও পয়সা, নানা ঐতিহাসিক তথ্য বহন করে ।মুদ্রাগুলির একদিকে ইসলামের কালমা খোদাই করা থাকত,"লা ইল্লাহ ইল ইল্লাহ মহম্মদ উর রসুল উল্লাহ।এছাড়াও চার পবিত্র খলিফার নামও খোদিত থাকত।এ থেকে বোঝা যায় যে শেরশাহ ধর্ম প্রাণ ছিলেন ।তবে সূর বংশের রাজারা ধর্মান্ধ ছিলেন না ।তার বহু প্রমাণ আছে।কিছু কিছু মুদ্রায় আবার শ্রী শেরশাহ হিসেবেও নাম খোদাই করা আছে ।তবে অধিকাংশ মুদ্রায় শেরশাহের পুরো নাম, "ফরিদ উদ দুনিয়া ওয়া দিন আবুঅল মুজাফফর শেরশাহ "ই লেখা থাকত এবং তা কোন ট্যাঁকশাল থেকে জারি করা হয়েছে তা লেখা থাকত।তাঁর মূখ্য ট্যাঁকশালগুলি ছিল আগ্রা,গোয়ালিয়র, দিল্লি, চূণার,পান্ডুয়া, ভাক্কার ,কনৌজ ইত্যাদিতে।এছাড়া রাজার শিবির থেকেও কিছু মুদ্রা জারি করা হত।যাতে স্থানের পরিবর্তে জাঁহাপনা লেখা থাকত।এছাড়া তাম্রমুদ্রাগুলির জন্য গোয়ালিয়র, নার্নোল,কল্পি ,দিল্লি, হিসার,চূণার ইত্যাদি স্থানে ট্যাঁকশাল ছিল।তবে তাম্রমুদ্রাগুলির ওজন কিন্তু সব স্থানে একরাশ হত না।এছাড়া তিনি 'দাম 'নামের ও তাম্রমুদ্রার প্রচলন করেন । 
অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের রাজত্বকালে, শেরশাহ অসাধারণ শাসন দক্ষতা প্রদর্শন করেন ।তাঁর বহু শাসননীতি আজও অনুসৃত হয় যেমন কাস্টমস ডিউটিতে ,ডাকব্যবস্থায়।বিহারের এক সামান্য জায়গীরদার থেকে তিনি আফগানিস্তান হতে অধুনা বাংলাদেশ পর্যন্ত এক বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য তিনি নির্মাণ করেন ।1545 সনে কালিঞ্জর দূর্গ আক্রমণ করার সময় বারুদ ফেটে তাঁর মৃত্যু হয় । 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours