fiture
গৌতম ভট্টাচার্য, সমাজকর্মী:  ১৮ বছর বযস পর্যন্ত বিশেষ শিশুরা বিশেষ প্রশিক্ষণের মধ্যে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী একটি বিশেষ শিশু এই বয়সে পৌঁছালে অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ শুরু হয়। চলে তিন বছর। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুকে তাদের উপযুক্ত বিভিন্ন ধরনের কাজের উপযুক্ত করে তোলার চেষ্টা করা হয়। যাতে পরবর্তী কালে শিশুটি স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে এবং একটি উপার্জনের রাস্তা খুঁজে পায়। এই তিন বছরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি তার অভিভাবকের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে চেষ্টা চালায় যা ওই প্রশিক্ষণেরই অংশ।
আপাত দৃষ্টিতে এই ব্যবস্থা বেশ সুন্দর, সুশৃঙ্খল, সময়োপযোগী এবং যুক্তিগ্রাহ্য। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা কী? প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির এই প্রশিক্ষণে শিশুরা কি আদৌ প্রশিক্ষিত হয় বা হচ্ছে? এই প্রশিক্ষণের পর শিশুদের সামনে কি কোনও উপার্জনক্ষম রাস্তা খুলছে ? তারা কি কাজ বা চাকরী খুঁজে পাচ্ছে? তারা কি কোন ছোটখাটো ব্যবসা করেও রোজগার করতে পারছে? অথচ সরকারী নিয়ম অনুযায়ী শতকরা তিন ভাগ চাকরী প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ। উত্তর খুঁজলে কিছু অবশ্যই তথ্য উঠে আসে। প্রথমতঃ প্রতিবন্ধীদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার তাতে সরকারীভাবে কোনও সদিচ্ছা, পাকা ব্যবস্থা, পরিকল্পনা বা পরিকাঠামো কোথাও নেই। যা আছে না থাকার মতই, যেটুকু আছে তা ওই বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির মধ্যে যা মূলতঃ চলে বেসরকারি উদ্যোগে। সেখানে এই প্রশিক্ষণ দেবার চেহারা কী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই প্রশিক্ষণ কী, কী কী, কেন, কিভাবে, কোথায় এবং কারা দেবে প্রশিক্ষণ সময়কালে সবটাই ধোঁয়াশা। এর উদ্দেশ্য, বিধেয় কি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কেউ জানে না, কর্তৃপক্ষও জানে না বা জানলেও উদাসীন। কোথাও তো জবাবদিহি করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। আবার এটাও সত্য যে, ২১ বছর বয়সের পর খাতায় কলমে একটি শিশুর যাবতীয় প্রশিক্ষণ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের পরবর্তীতে বর্ডার লাইন বিশেষ শিশু, মূক ও বধির, বা দৃষ্টিহীন বা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে বুদ্ধাঙ্কের বিচারে উচ্চ স্থানে থাকা কেউ কেউ কোথাও কোথাও কিছু একটা কাজে যুক্ত হতে পারে। সরকারি তিন শতাংশ সংরক্ষণ এখানে কাজ করলেও করতে পারে যদি সেই শিশুর শিক্ষাগত যোগ্যতা চাহিদা অনুসারে ন্যুনতম হয়। এই সম্ভাবনা যে অতি ক্ষীণ তা সরকারি বা বেসরকারি নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য ঘাঁটলেই পরিস্কার হবে। বিশেষ শিশুদের উপযোগী ন্যুনতম অ্যাকাডেমিক শিক্ষা দেবার কোনো ব্যবস্থাই বেশির ভাগ বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে নেই। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যবস্থাপনার মধ্যে এই শিশুদের উপযোগী শিক্ষাক্রম আছে। কিন্তু মানছে কে? না মানলে দেখছে কে? চাকরীর ক্ষেত্রে মূক-বধির শিশুরা বরাবরই প্রাধান্য পেয়েছে, এখনও পায়। সে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। দ্বিতীয়তঃ এই ধরনের শিশুদের মধ্যে যারা বুদ্ধাঙ্কের বিচারে উঁচুতে আছে, যাদের ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী বা মাধ্যমিক পাশের শংসাপত্র আছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি পেয়েছে বা পাচ্ছে দু-একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অথচ চাকরি পাওয়ার ছ-সাত মাসের মধ্যে অধিকাংশই চাকরী ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে কারণ কর্মক্ষেত্রে এদের কর্মক্ষমতার উনিশ বিশ সহকর্মীদের কেউ মানতে পারে না। ফলতঃ এরা কর্মক্ষেত্রের এই বৈষম্য মূলক আচরনের সাথে মানাতে পারে না। বাড়ি ফিরে এসে এইসব শিশুরা ডিপ্রেসড কনডিশনে চলে যায় বা চলে যেতে পারে। এইরকম শিশুদের বাদ দিলে পড়ে রইলো বিশাল সংখ্যার বিশেষ শিশু। তাদের কি হবে? তারা কি কোথাও উপযুক্ত নয়? এমতাবস্থায় এখানেই সরকারের বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রথমেই যেটা বলা যায় সেটা বিশেষ শিশুদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিভাগের কাজকর্মকে দেখভাল এবং নজরদারি করার ব্যবস্থা করা। বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিকে ভোকেশনাল ট্রেনিং-এর জন্য সঠিক সহায়তা প্রদানের সরকারি সুযোগ ও সহায়তা দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, বিশেষ শিশুদের কর্মোপযোগী করে তোলার জন্য সরকারিভাবে যোগ্য প্রকল্প এবং তার উপযুক্ত পরিকল্পনার নীল নকশা তৈরী করা যেখানে থাকবে বিশেষ শিশুদের জন্য নির্ধারিত বিশেষ কাজের পূর্ণ তালিকা, কাঁচামাল সংগ্রহের বাজারের খোঁজ, উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রয়ের বাজার, মূলধন জোগাড়ের দিশা, অভিভাবক এবং শিশুদের ব্যবসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া, রাজ্য জুড়ে নিয়ম করে প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা করা, যোগ্য প্রশিক্ষক তৈরীর পরিকাঠামো, ক্ষুদ্র শিল্প গঠনের সরল নিয়ম কানুন ইত্যাদি নানান বিষয়ের বিষদ তত্ব তালাশ। মূলতঃ শেষ কথা এই যে, বিশেষ শিশুদেরকে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে গেলে প্রশিক্ষণ বিষয়ক ক্ষেত্রটির সামগ্রিক উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিক প্রচেষ্টার সঠিক রূপায়ন ঘটলে এরাও স্বনির্ভর হয়ে উপার্জনক্ষম হয়ে উঠতে পারে।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours