অমর কুমার নায়ক, প্রকৃতিপ্রেমী ও শিক্ষক:
জঙ্গলের পথে হেঁটে যেতে যেতে একটা তীক্ষ্ণ ডাক কানে এসে লাগলো। এরকম ডাক আগেও শুনেছি বাড়ীতে বসে। প্রথমটা বুঝতে অসুবিধা হলেও পরে বুঝেছি সেটা কুটুরে প্যাঁচার অ্যালার্ম কল। প্রতিটি জীব নিজের নিজের ক্ষেত্র দখলে রাখতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। আবার সতর্কতা জানাতেও। প্যাঁচাটার প্রথম ছবি পেলাম একটা অশ্বত্থ গাছের ডালে। এর পর বহুবার এদের পেয়েছি এরা কুটুরে প্যাঁচা।
বড় গাছের কোটরে থাকার কারণে এরকম নাম। ইংরাজি নাম SPOTTED OWLET (Athene brama), পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্র এদের পাওয়া যায়। লোকালয়ের মধ্যেও এদের দেখা মেলে। সাধারণত একাকী থাকতে পছন্দ করলেও জোড়ায় বা তার বেশীও দেখা যায় মাঝে মধ্যে। আকারে প্রায় 21cm এর মত। ছোট্ট গোলাকার মাথা। এদের চোখগুলো বেশ বড় ও হলুদ রঙের হয়। পিঠের রঙ ধুসর বাদামী এবং তার ওপর ঘন সাদা ছিট থাকে। বুকের দিকের রঙ সাদা, তার ওপর গাঢ় বাদামী ছিট থাকে। ফিস্কাল ডিস্কটি একেবারে বিবর্ণ প্রকৃতির হয় যা থেকে এদের চেনা সোজা। এরা পুরনো ভাঙ্গা বাড়ীর দেওয়ালের গায়ে কিংবা বড় বড় গাছের কোটরে বাসা তৈরি করে। এরা খুব ঘন জঙ্গলে থাকতে পচ্ছন্দ করেনা বরং খানিকটা শহুরে প্রকৃতির আর তাই লোকালয়ের কাছাকাছিই বাসা তৈরি করে।
অনেক সময় দিনের বেলা বড় গাছের কোন উঁচু ডালে লতা পাতার মাঝে এসে ঝুপ করে বসে আরাম করে। তবে এরা খুব সতর্ক প্রকৃতির হয় তাই মৃদু আওয়াজেও বিপদের আশঙ্কায় দ্রুত পালিয়ে গিয়ে বাসায় আশ্রয় নেয়। সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে এরা পালক, খড়কুটো এসব দিয়ে তৈরি বাসাতে তিন থেকে চারটি ডিম পাড়ে। এই সময় স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই দেখাশোনা করে। এরা মূলত ছোটো ছোটো পোকা, ব্যাঙ ও ছোটো সরীসৃপের শিকার করে তবে সুযোগ পেলে পাখির বাচ্চাদেরও ছাড়ে না।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours