fiture
কাজল ভট্টাচার্য, সিনিওর জার্নালিস্ট, কলকাতা:

প্রাক্তন/ প্রাক্তনীর দোস্তি?
হিন্দিতে একটা কথা আছে- দোস্তি মে কুস্তি।
আবার বামপন্থী রাজে একটা কথা মাঝেমধ্যেই শোনা যেত- বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই। লড়াই আবার বন্ধুত্বপূর্ণ? সেটাকেও সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন বামপন্থীরা। ব্যাপারটা ছিল এরকম, ভোটের সময় কোন-কোনও আসনে ঝগড়া বেঁধে যেত বামফ্রন্টের দুই শরিকে। কেউ কাউকে আসনটি সমঝোতা করে ছাড়তে চাইতো না। তখনই বেঁধে যেত ওই 'দোস্তি মে কুস্তি'। থুড়ি, বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই। 
বামপন্থীরা যেটা করে দেখাতে পেরেছিল, সেটা যদি আপনিও করে দেখানোর হিম্মত রাখেন, তাহলে প্রাক্তন, প্রাক্তনীর মিতালি হতেই পারে।

সম্পর্কের এই বিচিত্র গতি জানতে কিছুদিন আগে বিদেশের গবেষকরা অনলাইন এক সমীক্ষা করেন। দেখা যায়, একশোজনের মধ্যে আটচল্লিশজন এক্স প্রেমিক- প্রেমিকা বন্ধু হয়েও বেশ আছে। এঁদের মধ্যে আবার বেশ কয়েকজন প্রাক্তন স্বামী- স্ত্রী। অন্যদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ থাকলেও বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছয়নি।
ওই সমীক্ষাতেই আবার শোনা গেছিল উল্টো সুর। একশোজনের মধ্যে অন্য আঠারোজন প্রাক্তন, প্রাক্তনী স্বীকার করেছিল, ব্রেক আপের পর তাঁরা দূরে সরে যেতে চায়নি। একে অন্যকে ভালোও বাসতো। তাই বন্ধু হয়ে একজন, অন্যজনের পাশে থাকতে চেয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি।

ঠিক কোন পরিস্থিতিতে দুজনে পরস্পরের থেকে সরে এসেছিল? তার ওপরেই নির্ভর করছে দুই প্রাক্তন, প্রাক্তনীর মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকবে কিনা। কারণ যাই হোক না কেন, দুজনেই যদি নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে সম্পর্কের পরিধিতে লক্ষণ রেখা টানে,  তাহলে প্রেমবিচ্ছেদের পরেও দুজনে বন্ধু হয়ে টিকে থাকার একটা চেষ্টা চালানো যায় বৈকি। 

গবেষকদের মত, এই ঘটনায় মাপা হয়ে যায় প্রেমের গভীরতাও। শরীর ছাড়িয়ে ভালবাসা মন পর্যন্ত পৌঁছলেই, বিচ্ছেদে সম্পর্কের নাম পাল্টাতেই পারে, কিন্তু সম্পর্ক অটুট থাকে। দুজনের দূরত্বও বাড়তে পারে, তবু হারিয়ে যায় না। কিন্তু যেখানে সম্পর্কের বাঁধনটাই ছিল শিথিল, সেখানে বিপরীত ছবি। সম্পর্কের ইতি যেখানে চেঁচামেচি রাগারাগির মধ্যে দিয়ে, সেখানে ফের সৌহার্দ্যের সম্পর্ক অসম্ভব।

'দুজনেই দুজনকে বেশ পছন্দ করতাম।' বলে এক প্রাক্তনী। 'আমাদের মেলামেশা বাড়লো। ঘনিষ্ঠও হলাম। ভালবাসার রং ধরলো শরীরেও। সে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু কয়েক মাস পেরোতে না পেরোতেই ঠোকাঠুকি লাগা শুরু। ও আমার ঘাড়ে দোষ চাপাতো, আমি ওর। 
বুঝতে পারলাম, আমাদের ঘর বাঁধা হবে না। বাস্তবে হলোও তাই। একদিন অফিস থেকে দেরিতে ফেরা নিয়ে তুমুল হলো আমাদের। সেটাই ছিলো আমাদের শেষরাত।' পরদিন সকালেই স্বপ্নের সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল প্রিয়ম্বদা। সে বলে, 'প্রথমে ছিলো ভয়ঙ্কর রাগ। যত দিন গেছে, রাগ কমেছে। শেষ পর্যন্ত, সেই রাগের গোটাটাই বদলে গেল ঘৃণায়।' 

তারপর কেটে গেছে সাত মাসেরও বেশি। প্রিয়ম্বদা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সে স্বীকার করে- এখন বুঝি, সম্পর্কটা আদতে তৈরিই হয়নি। নইলে অত তুচ্ছ কারণে সম্পর্কটা ভাঙতো না। 
কিছু ভালো স্মৃতি থাকলেও, খারাপের তীব্রতাই বেশি। এরপর প্রাক্তনের সঙ্গে ফের কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কথা ভাবতেই পারেনি প্রাক্তনী। তবে ঘৃণার অতীত মুছে না ফেলতে পারলেও কিন্তু বিপদ। জীবন একসময় দুঃসহ হয়ে দাঁড়ায়। সতর্কবাণী গবেষকদের।

তবে সবাই প্রিয়ম্বদা হয় না। শকুন্তলারাও আছে। রাজা দুষ্মন্ত প্রেয়সীকে চিনতেই পারলেন না। চেনেন তাঁর দেওয়া সেই রাজঅঙ্গুরীয়কে। তবু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে না শকুন্তলার। ভালবেসেই যায় অতীতের সূত্র ধরে। কিন্তু প্রিয়ম্বদারা চিনে নিতে চায় তার মনের মানুষটাকে। সামিল হতে চায় তার জীবনে। তার রোজনামচার প্রতিটা মুহূর্ত থেকে ভাবনাচিন্তাতেও। এই সর্বগ্রাসী কামনা, বাসনা থেকেই বিবাদের সূত্রপাত। মনে করছেন সমীক্ষকরা।

'প্রথমত আমি তোমাকে চাই.... 
শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে চাই।' 
গানের কলিতে শুনতে বেশ মিষ্টি মিষ্টি লাগে। কিন্তু বাস্তবের দুনিয়ায় তা যেন অনধিকার চর্চার সামিল। চিড় ধরে মধুর সম্পর্কে। ক্রমে ক্রমে তা বেড়ে, বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তবু মন মানে না। বড় বিচিত্র এই মন। তারচেয়েও বিচিত্র ভালবাসা। অবুঝ মনের তখনও বিশ্বাস, সে ফিরবেই। বাস্তব বলে উল্টোটা। যে যায় সে যায়।

'তবু পারিনে দূরে যেতে, মরিতে আসি-
লইগো বুক পেতে অনলবাণ' 

সম্পর্ক চুলোয় যায় যাক, মনের মানুষকে দূরে ঠেলে দিতে মন কিছুতেই রাজি হয় না। উইকেটে না হলেও, ফিল্ডিংয়ে তো টিকে থাকি। প্রেমিক প্রেমিকা না হলেও সই। বন্ধু তো থাকাই যায়। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। এক অবাস্তব কল্পনা। ফ্যানটাসি। তখন না হলেও, কিছুদিনের মধ্যেই তা টের পাওয়া যায়। 
এবারেও হয়তো অনেক অশান্তি। অনেক উপেক্ষা। তবু বুরি ছোঁয়ার মতো, তাকেও ছুঁয়ে থাকা। আশা, সে একদিন নিশ্চয়ই ফিরবে। পুরনো প্রেমে ফের রং লাগবে। কিন্তু ওই যে, সবাই শকুন্তলা হয় না। সবাই রাজা দুষ্মন্তও না। 
তবু অপেক্ষায় দোষ কোথায়? কিন্তু সেই অপেক্ষা ঠিক কতদিনের? আশায় মরে চাষার অবস্থা হবে নাতো! 

প্রাক্তনীর ভূত স্বেচ্ছায় কাঁধে বয়ে বেরিয়েছে প্রতি একশোজনের মধ্যে একাত্তরজন। কিছুতেই অতীতকে পেছনে ফেলে তারা বর্তমানের খোলা হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে পারে না। পারে না গটমট করে ভবিষ্যতের রাস্তায় এগিয়ে যেতে। স্তব্ধ জীবন। শুরু হতে পারেনি প্রেমের আরেক নতুন অধ্যায়। বুকে হাত দিয়ে এই নির্মম কথাও স্বীকার করে নিয়েছে সাতান্নজন। 
জীবন যেন থেমে গিয়েছে কোনও এক বাঁকের মাথায় এসে। যেখান থেকে শুধু পেছনে তাকানো যায়। দৃষ্টি সামনে সরে না।

দরকারটা কি বস ওই প্রাক্তনীর সঙ্গে ফের সই পাতিয়ে। পারবে, নতুন এই সম্পর্ক ধরে রাখতে? সে কিন্তু আরও দুরূহ।
চোখের সামনে যখন দেখবে প্রাক্তন বা প্রাক্তনী তার নতুন সঙ্গীর হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক বোতলে দুটো স্ট্র দিয়ে কোল্ড ড্রিঙ্কস শেয়ার করছে। সেই স্পেস দিতে পারবে তো?
বন্ধু যখন, অতীতের কথা তো উঠবেই। প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার সময় যে কথাগুলি চেপে গেছিলে, সেগুলি এবার হুড়মুড় করে বাঁধভাঙা স্রোতের মতো বেরিয়ে আসবেই। প্রকাশ হবে, না বলা মনের কথা। মন হালকা হবে। তবে বিপদ বাড়বে। 

'হঠাত দেখা পথের মাঝে
কান্না তখন থামে না যে!'

ওই পুরনো কথা নিয়েই শুরু হয়ে যেতে পারে তর্কবিতর্ক- তু তু ম্যায় ম্যায়। তখন?
তোমার অতীত আজ আরেকজনের বর্তমান। মেনে নিয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারবে তো? 'তোমার সঙ্গে আছি!' বলার সময় তার পিঠে হাত রাখলে, সে এক ঝটকায় তোমার হাত সরিয়ে দিতেই পারে। তখন মন গুমড়ে উঠবে নাতো?

এসব সইতে পারলেই, প্রাক্তনির সঙ্গে বন্ধুর সম্পর্ক টিকে যেতে পারে। আর এর উল্টোটা হলে, সম্পর্কের স্বাদ আরও একবার বদলাবে। ফের তেতো হয়ে যাবে তুমি। তবে এই তেতো হয়ে যাওয়া অন্যদিকেও ইঙ্গিত করে, বলছেন গবেষকরা। সম্পর্কের তলে তলে তখনও প্রেম বিরাজমান।

কিন্তু প্রেমের এই তলানিটুকুও বাঁচবে না যদি তোমার প্রাক্তনি একবার ঘুনাক্ষরেও টের পায়, বিচ্ছেদের পরেও প্রাক্তন তার প্রেমে পাগল। সে তখন তোমাকে এড়িয়ে চলবে। কল করলে মোবাইল ধরবে না। তোমার ফেসবুক স্টেটাসে লাইক, কমেন্ট কোনটাই করবে না।সরাসরি বয়কটের রাস্তা নেবে।
যতক্ষণ প্রেম ততক্ষণই আমরা। সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পরমুহূর্তেই আমরা ভেঙে দুই মৌলিক পদার্থ- আমি, তুমি। 

'সখী ভালবাসা কারে কয়!'

ভালবাসা রং বদলায় নিমেষে। ভোল বদলায় মানুষ। সভ্যসমাজের রীতিনীতিই এরকম!
ভালবাসা-টাসা নিছকই কবির কল্পনা। বাস্তবে গোটাটাই রাজনীতি। রাজনীতির সুবিধাবাদ। পারলে নিজেকে মানিয়ে নাও। নইলে ভোগে যাও।
- হু কেয়ার্স?
 
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours