fiture
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, লেখক ও সাংবাদিক কলকাতা: দল ভাঙ্গানো ও দল বদল কি চলতে দেওয়া উচিত? লোকসভা নির্বাচনের পর যেভাবে বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে দল ভাঙ্গানোর খেলা শুরু হয়েছে তাতে এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে, নির্বাচনের স্তর ও গুরুত্ব বুঝে জনগণের কি ভোট দেওয়ার উপায় নেই ? এ কেমন গণতন্ত্রে বাস করছি আমরা? দেশে বিভিন্ন স্তরে নির্বাচন হয়। জনগন সেই স্তরের নির্বাচনের ইস্যুগুলো সামনে রেখে তাদের মতামত অনুযায়ী ভোট দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক।তাই বিভিন্ন নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যু, বিভিন্ন ভাবনা, জনগণের মতামত ও বিভিন্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক। একটি স্তরে জনগণ তাই যাকে গ্রহণ করল, তাকে যে পরের অন্য স্তরের নির্বাচনে বাতিল করবে না, তার কোনো মানে নেই। কয়েকমাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশ গড় কিংবা রাজস্থানে হারলো লোকসভা ভোটে। মানুষের এই রায় পরিবর্তন গনতন্ত্রকে মজবুত করে। কিন্তু যদি দেখা যায়, এক ভোটের ফল দেখে সরকার বদলের স্বপ্ন পূরণে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দল বদল করে সেই নির্বাচিত সরকারকেই ফেলে দিতে উদ্যত, তাহলে সেই রাজনীতি কি করে জনগণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন হতে পারে?কি করে সেই রাজনীতিতে গণতন্ত্র সুরক্ষিত হতে পারে? দলত্যাগ বিরোধী আইন করেছিলেন রাজীব গান্ধী। 
সেই আইন যে এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়, দরকার একটি নতুন আইন, সেটাই এখন বোঝা যাচ্ছে সব চাইতে বেশি। নির্বাচনে গণতন্ত্রহীন ব্যাবস্থা নিয়ে প্রশ্নটা উঠেছিল এই রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যাপক রক্তক্ষয় আর এক তরফা নির্বাচনের প্রহসনের পর। ভোটে দাঁড়াতেই দেবে না শাসক দল, মনোনয়ন জমাই করতে দেবে না, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে শাসক দলের প্রার্থী।পঞ্চায়েতের নির্বাচনের এইম ব্যাপক হিংসা প্রমাণ করেছিল এ রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি কিঞ্চিৎ বদলে গেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা হয়। দলীয় স্তরে নানা রকম রাজনৈতিক আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ চলে। কিন্তু রাজনীতিতে এই হিংসার ছক সর্বস্তরে চালু হয় না। লোকসভা ভোটের পর দেখা যাচ্ছে , হিংসা প্রতিহিংসা রাজনীতির অঙ্গিনাকে রক্তাক্ত করে চলেছে। ভোট পরবর্তী হিংসা যেভাবে বাড়ছে তাতে রাজ্য প্রশাসন যে এর লাগাম ধরতে চায় না, সেটাই স্পষ্ট। এরপর যেটা হচ্ছে সেটা আরো ভয়ঙ্কর।নির্বাচিত একটি পুর বোর্ড ভেঙে দল বদলের হিড়িক এবং তাকে ঠেকাতে নানা কৌশল দেখার পর মনে হচ্ছে, দেশটাকে কি রাজনীতির কুশীলবরা নিজেদের মঞ্চ ভেবে জনগনকে জোকার ভাবছেন?সংবিধানের ও আইনের ফাঁক দিয়ে যে রাজনীতির চর্চা হচ্ছে তাতে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এই রাজনীতির সঙ্গে জনসাধারণের ইচ্ছে অনিচ্ছের যোগ কত টুকু? একটি গণতান্ত্রিক দেশের মহতী উদ্যোগ নির্বাচন।এই দেশে সর্ব সময়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করার সর্বাত্মক প্রয়াস জারি থাকে রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে।এই নিয়ে নতুন করে আর বলার কিছু নেই, বহু সংস্কারের চেষ্টা করার পরেও ইচ্ছে করেই রেখে দেওয়া হয় সর্ষের মধ্যেই ভুত।সেটা রাখা হবেই।যেই হয় শাসক, তার একটা প্রচ্ছন্ন ছায়া থাকেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এখন নির্বাচন কমিশনকে নিয়েও নানা অভিযোগ।স্বয়ং অমর্ত্য সেন তো সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।সারা দেশে বিজেপির এই জয়ে বিরোধী দলগুলো ইভিএম কেলেঙ্কারির অভিযোগ তুলেছেন।এসব কান সোয়া হয়ে গেছে জনগণের শুনতে শুনতে। একতরফা নির্বাচন, মনোনয়ণ পেশ করতে না দেওয়ায় ৮৩ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন ত্রিপুরায় বি জে পির প্রার্থীরা।তাই গোলমাল সব খানেই। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, এর পর দেশের গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে। কথাটা উঠছে এই কারণে যে কর্নাটকে যেভাবে কার be বিধ্যয়কদের নিয়ে সরকার বদল হচ্ছিল, এর আগেও বহু রাজ্যে একইভাবে বহুবার সরকার বদল হয়েছে, এখন শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেও একইভাবে আগামী বছরের মধ্যেই সিংহভাগ বিধায়ক দল পরিবর্তন করবেন এবং সরকার ভেঙে যাবে, নির্বাচনে যেতে বাধ্য হবে শাসক দল। রাজনীতিতে এইভাবে দল ত্যাগ ও ক্ষমতা পরিবর্তন কিন্তু জনতার ম্যান্ডেট কে নাকচ করে। মানুষ চাইল একটি দলের নীতি ও আদর্শে অনুগত তার প্রতিনিধিকে, আর সেই প্রতিনিধি ওই দলের চিহ্নে জয়ী হয়ে চলে গেল আরেক দলে, ফলে আইনসভায় আইন করার সময় সেই প্রতিনিধি সমর্থন জানাচ্ছেন এমন একটি ইস্যুকে যে ইস্যুটির বিরোধী মানুষগুলোর ভোট নিয়ে তিনি আইনসভায় এসেছেন। কী বৈপরীত্য!! অথচ গণতন্ত্র রক্ষার নামে এই সময়ে এটাই চলছে সব চেয়ে বেশি।
পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভা থেকে বিধানসভা সর্বক্ষেত্রে এই হচ্ছে।মানুষ ভোট দিচ্ছে এক ভেবে, আর ভোট পেয়ে নির্বাচিত প্রার্থী মানুষের ভাবনা ও পছন্দের ঠিক উল্টোটা করছেন। যে দলকে মানুষ ত্যাগ করছে, সেই দলের ঝান্ডা তুলে ধরছেন মানুষের ভোটে জয়ী প্রার্থী, তাহলে তার নির্বাচন কেন বাতিল হবে না? এই প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে, নইলে জনগণের রায় বদলে দেবে দলগুলি শুধু কালো টাকার খেলায়। এখন দেশে এটাই হচ্ছে। এটাই যদি চলতে থাকে, তাহলে আম জনতার ভোটদানের গুরুত্ব আর থাকে না। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সেটাই কিন্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজন।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours